Homeএখন খবরলকডাউনের ' ভারতে' বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু অন্ততঃ ১৮জন পরিযায়ী...

লকডাউনের ‘ ভারতে’ বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু অন্ততঃ ১৮জন পরিযায়ী শ্রমিককের, হাহাকার দীর্ণ পরিবারের পাশে নেই সরকার

নিত্য গুপ্ত : হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষনা সব চেয়ে বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে এদেশের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে যার মধ্যে গভীর সংকটে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা তাঁদের পরিবার পরিজনকে ফেলে শতশত কিলোমিটার দুরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে লকডাউন হওয়ায় তাঁদের কাজ বন্ধ। ওদিকে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেন নেই , বাস নেই। অগত্যা কেউ হাঁটছেন শতশত মাইল, কেউ নিজের মত করে মালবাহী ট্রাক লরি ট্রাক্টরে। আর তার পরিনতিতে শুধু সরকারি ভাবেই এখনও অবধি ১৮জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও মনে রাখতে হবে বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি কারন সব মৃত্যুকে বাড়ি ফেরার তাগিদে মৃত্যু বলে মেনে নেওয়া হয়নি।

‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ দেশের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকগুলিতে প্রকাশিত তথ্য গুলিকে একত্রিত করে একটি নিবন্ধ রাখার প্রয়াস করছে প্রিয় পাঠক পাঠিকার কাছে পাশাপাশি এও সংশয় প্রকাশ করছেন যে, বাড়ি ফেরার তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনাই আদৌ রিপোর্টিং হয়েছে কিনা কারন শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছেন নিজের মত করে তাঁদের সুবিধা জনক পথে যার সব জায়গাতেই রিপোর্টার নেই।
শনিবার সংবাদপত্রে যে মর্মান্তিক খবরটি মানু্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিল তা হল ৩৯ বছর বয়সী রনবীর সিংয়ের মৃত্যু। রনবীর দিল্লি থেকে মধ্য প্রদেশের নিজ শহরে পায়ে হেঁটেছিলেন, প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পর বাড়ি থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার আগে পথশ্রান্ত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সে দিল্লির একটি রেস্তোঁরাটির অর্ডার সরবরাহ করত যা লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।বৃহস্পতিবার ভোরে রণভীর সিং মধ্য প্রদেশের মোরেনায় উদ্দ্যেশে হাঁটা শুরু করেছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার সময় তাঁর দুই সঙ্গী তাঁকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার সুযোগ টুকুও পায়নি।

অন্য আরেকটি ঘটনায় শুক্রবার গুজরাটের সুরাট শহরে এক ৬২ বছর বয়সী ব্যক্তি মারা যান। মৃত গঙ্গারাম ইয়েলেঙ্গে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। লকডাউন হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের কোনও উপায় না পাওয়ায় প্রায় ৮ কিলোমিটার হাসপাতাল থেকে তাঁর বাড়ির উদ্দ্যেশে পায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি। সঙ্গে তাঁর ছেলে নরেশ ছিল। মাজুরাগেটের নতুন সিভিল হাসপাতাল থেকে ফিরছিলেন। পান্ডেসারা এলাকায় প্রায় নিজের বাড়ির কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন গঙ্গারাম। ফের তাকে নিউ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সংবাদপত্রকে নরেশ বলেছেন,
“যদি কেউ আমাদের সহায়তা করতেন বা আমাদের একটু লিফট দিতেন তবে আমার বাবা বেঁচে যেতেন ।” হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবশ্য ময়না তদন্তের পর দাবি করেছেন যে কোনও পুলিশ মামলা দায়ের করা হয়নি কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক মৃত্যু।

মহারাষ্ট্র-গুজরাট সীমান্তের ভিল্লাদ শহর থেকে বাসাইয়ের উদ্দেশ্যে একটি খালি ট্রাকে রাজস্থানের গ্রামে ফিরছিলেন ৭জন শ্রমিক। শনিবার ভোরে বিরার শহরের মুখেই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন আর বাকি তিনজনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে আর কোনও দিনই পরিশ্রম করতে পারবেন কিনা সন্দেহ। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসা ট্রাক চালককে পরে পুলিশ আটক করে। মৃত আহতদের কেউ মুম্বাইয়ের চা স্টল, ক্যান্টিন, রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।
অন্য একটি ঘটনায়, হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ মাস বয়সী বাচ্চা সহ আটজন নিহত হয়েছেন। শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত এই দলটি কর্ণাটকের রায়চুরে ফিরে আসছিল।

অন্য ঘটনাটি তেলঙ্গানার সুর্যপেট জেলায় বাড়ি ফেরার পথে ৮জনের মৃত্যু হয়। একটি নির্মাণ সংস্থা কর্মরত প্রায় ৩১ জন শ্রমিক একটি খোলা ট্রাকে বাড়ি ফিরছিল। শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার বোঝাই ট্রাকটি একটি আম বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা মারলে তিন জন পুরুষ, এক কিশোর ও ৯ বছরের একটি শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাকিরা হাসপাতালে।
পাঠকের নিশ্চয় স্মরনে আছে যে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যেই ভোর বেলায় কলকাতা থেকে ওড়িশায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া রাঁধুনি ও পুজোর কাজে কর্মরত চারজনের মৃত্যু হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থানার অন্তর্গত নেকুড়শেনীতে। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের এই দুর্ঘটনা ঘটে যখন তাঁদের নিয়ে যাওয়া চারচাকাটি সামনে চলে আসা একটি গরুকে বাঁচাতে ব্রেক কষলে পেছনে থাকা একটি লরি ধাক্কা মারে।

এখনও অবধি সরকারের কোনও ঘোষনা নেই এই মৃত শ্রমিকদের হতভাগ্য পরিবার গুলির প্রতি কী দায়িত্ব পালন করবে সরকার ? কারন এই দরিদ্র ভারতের জন্য সরকারের আন্তরিক কোনও ভাবনা নেই। সমস্যা হচ্ছে, লকডাউন ঘোষনার সময় সরকার সবাইকে ঘরে ঢুকে যেতে বললেও সবার ঘরের প্রতি নজর ছিলনা। আসলে এই ঘরে ঢুকে যেতে বলাটা ছিল শহর আর ধনী ও মধ্যবিত্ত ভারতের জন্য বলা। যে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের ঘরই নেই কিংবা শত শত মাইল দুরে তাঁদের ঘর এটা সরকারের ভাবনার মধ্যেই ছিলনা। আসলে একমাত্র ভোটের সময়টুকু ছাড়া এঁরা সরকারের ভাবনার মধ্যেই থাকেনা। না’হলে চার ঘন্টা নয় চারশ ঘন্টা পাওয়া যেত লকডাউনের আগে। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সময় দিয়েই পর্যাপ্ত সময়ে লকডাউন ঘোষনা করা যেতে পারত।
আর যদি তা নাও সম্ভব ছিল তাহলে লকডাউনের সময়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট ঘোষনা করা উচিৎ ছিল যে যেখানে যেখানে শ্রমিকরা কর্মরত সেখানকার সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। বলা উচিৎ ছিল তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। সেটাই সরকার ঘোষনা করল অনেক পরে যখন কাতারে কাতারে মৃত্যু হয়ে গেছে। যখন মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে বাড়ি ফেরার জন্য। হাঁটছে আর হাঁটছে……..।

RELATED ARTICLES

Most Popular