Homeএখন খবররাজ্য জুড়ে প্রাক বর্ষায় ভয়াবহ বজ্রপাত! পশ্চিম মেদিনীপুর সহ রাজ্যে বাজ পড়ে...

রাজ্য জুড়ে প্রাক বর্ষায় ভয়াবহ বজ্রপাত! পশ্চিম মেদিনীপুর সহ রাজ্যে বাজ পড়ে একই দিনে মৃত্যু ২০ জনের

On Monday, 20 people were killed in lightning strikes in three districts of the state on the same day. Several others were injured in the incident. The death toll from lightning strikes in the state on the same day has not been reported in the recent past. A total of 20 people have been killed in Murshidabad, Hooghly and West Midnapore in a series of thunderstorms in different districts of South Bengal starting from noon on Monday, sources said. Of these, 18died in Murshidabad and Hoogly. Two people died in West Midnapore.

নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার, একই দিনে রাজ্যের ৩ জেলায় বাজ পড়ে মৃত্যু হল ২০ জনের। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। বজ্রপাতে একইদিনে রাজ্যে এতজনের মৃত্যুর ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি বলেই জানা গেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে ঝড় বৃষ্টির সঙ্গে তুমুল বজ্রপাতে মুর্শিদাবাদ, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২০জনের মৃতু হয়েছে। এরমধ্যে মুর্শিদাবাদ ও হুগলিতে ৯ জন করে ১৮জনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে মারা গেছেন ২জন।

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে এদিন দুপুরে ওই জেলার কয়েকটি থানা এলাকা জুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার মির্জাপুরে মাঠে কাজ করার সময় একইসঙ্গে বাজে ঝলসে মৃত্যু হয় ছয় জনের। মৃতদের নাম দুর্যোধন দাস, মাজাহারুল সেখ, হান্নান সেখ, সুনীল দাস, সাদ্দাম সেখ ও সাইনুল সেখ। এছাড়াও সুতির অজগড়পাড়ায় মৃত্যু হয় একজনের। তাঁর নাম এনামুল হক। এর মধ্যে বহরমপুরের নিমতলা এলাকায় দু’জনের বাজ পড়ে মৃত্যু হয়। মৃতদের নাম অভি মণ্ডল ও প্রহ্লাদ মুরারি। একই দিনে এত জনের বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় কার্যত আতঙ্ক ছড়াল জেলায়। শোকের আবহ পরিবারগুলিতে।

এদিকে হুগলির তরকেশ্বরে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় এক কৃষকের। মৃতের নাম সঞ্জীব সামন্ত (৪৩)। চাপাডাঙ্গার রশিদপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি। জমিতে কৃষিকাজ করছিলেন ওই কৃষক। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ দেখে কৃষি জমিতে কাজ করা অন্যান্য সঙ্গীদের ডেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন সঞ্জীব। সঙ্গীদের ডাকতে যাওয়ার পথেই জমির মধ্যে বজ্রপাতে ঝলসে যান তিনি। তাঁকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

হুগলির হরিপালে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় দিলীপ ঘোষ (৫০)বিকালে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়িতে ঢোকার মুখেই বজ্রাঘাত হয়। হরিপাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে সিঙ্গুরের নসিবপুর গ্রামে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় সুস্মিতা কোলে (৩২) নামে এক মহিলার। বাড়ির উঠোনে কাজ করার সময় বাজে মৃত্যু হয় তাঁর। এছাড়াও হুগলির পোলবা থানা সহ জেলার বিভিন্ন অংশে আরও ৬জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানা এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে অরুন মণ্ডল নামে বছর চল্লিশের এক কৃষকের। চন্দ্রকোনার জাড়া গ্রামের বাসিন্দা অরুণ বাড়ির পাশে তিল ঝাড়াই-বাছাইয়ের সময় বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। অন্যদিকে ওই থানা এলাকারই হিরাধরপুর গ্রামে ৩৫ বছর বয়সী গৃহবধূ অর্চনা রায় আকাশে মেঘ ও ঝড় বৃষ্টির আভাস পেয়েই উঠোনে শুকোতে দেওয়া দ্রব্যসামগ্রী বাড়ির ভেতরে আনার জন্য বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। সামান্য বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তখন। তারই মধ্যে উঠোনের সামগ্রী ঘরে তুলেছিলেন। সেই সময় বাজ পড়ে উঠোনে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অর্চনা। নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

সোমবার বিকেলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গ যে ভাসতে চলেছে সে আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিল হাওয়া অফিস। দুপুর গড়াতে না গড়াতে সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি  হল। কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। বিকেলেই যেন নেমে আসে সন্ধে।  বইতে শুরু করে ঝোড়ো হাওয়া। তার সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ সর্বত্র প্রায় একই পরিস্থিতি।

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, প্রাক বর্ষার বৃষ্টিই চলছে দক্ষিণবঙ্গে। আগামী কয়েকদিন বিকেলের দিকে ঝড়বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। এদিকে, মৌসম ভবন সূত্রে প্রাপ্ত রেখাচিত্র অনুযায়ী, রবিবারই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারে সম্পূর্ণভাবে বর্ষা প্রবেশ করেছে। রবিবার দুপুর থেকেই একাধিক জায়গাতে বৃষ্টিপাতও শুরু হয়েছে। এছাড়া উত্তর দিনাজপুরের একাংশেও বর্ষা ঢুকেছে। সকালের দিকে প্রবল গরমে প্রায় হাঁসফাঁস অবস্থা হয় দক্ষিণবঙ্গবাসীর। তবে ঝড়বৃষ্টির পর প্রবল গরম থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পান বঙ্গবাসী। যদিও দিনের শেষে রাজ্য জুড়ে ২০জনের মৃত্যু সমস্ত স্বস্তিকে ম্লান করে দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular