Homeএখন খবরবাইকের পেছনে মমতা, ট্যাগ লাইনে নিউটনের তৃতীয় সূত্র! জেলবন্দি অনিসুরের Facebook...

বাইকের পেছনে মমতা, ট্যাগ লাইনে নিউটনের তৃতীয় সূত্র! জেলবন্দি অনিসুরের Facebook প্রোফাইল আ্যকটিভ

নিজস্ব সংবাদদাতা; পাঁশকুড়াঃ বাইকের পেছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর বাইক চালাচ্ছেন বছর ৩৫য়ের এক যুবক, ফুল হাতা চেক শার্ট আর চোখে রে-ব্যানের কালো চশমা! ‘অবরুদ্ধ’ নন্দীগ্রামের একটার পর একটা কাটা রাস্তা পাতা পাটার ওপর দিয়ে স্নায়ু টানটান করে বাইক ছুটিয়ে যাওয়া সেদিনের সেই যুবকের নাম আনিসুর রহমান। বাংলার প্রায় সমস্ত দৈনিকের পাতায় ছাপানো সেই ছবিই ১৩ বছর পরে উঠে এসেছে ফেসবুকের পেজে! পেজটা সেই অনিসুরের নামেই অথচ জেলবন্দি আনিসুর কিভাবে ফেসবুক পেজে আ্যক্টিভ হলেন তাই নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার ট্যাগ লাইন নিয়ে যেখানে নিউটনের তৃতীয় সূত্র উল্লেখ করা বলা হয়েছে, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷” প্রশ্ন উঠেছে এখানে ক্রিয়াটা কী আর প্রতিক্রিয়াটাই বা কী?

১১ মাস জেলে বন্দি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলার প্রাক্তন তৃনমূল যুব সভাপতি তথা বর্তমান বিজেপি নেতা আনিসুর রহমান। পাঁশকুড়া এলাকার দোদর্ন্ডপ্রতাপ আনিসুর রহমান ঠিক এক বছর আগেই মহানবমীর রাত্রিতে খুন হওয়া আনিসুর উত্তর তৃনমূল নেতা কুরবান শাহ হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত বিচারাধীন বন্দি। বড় রহস্যময় সেই হত্যাকাণ্ডে শুধু বিজেপির আনিসুর নন অভিযুক্তর তালিকায় রয়েছেন একাধিক স্থানীয় তৃনমূল নেতাও। গত ৫দিন আগেই পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন যুব নেতা নিহত কুরবানের স্ত্রী সাঈদা সাবিনা বানু খাতুন পুলিশ এবং নিজের দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আনিসুরকে যদি পুলিশ নেপাল থেকে ধরে আনতে পারে তবে কেন পুলিশ শীতল মান্না ও গোলাম মেহাদীদের ধরতে পারেনা। বলাবাহুল্য কুরবানের বিধবার এই ক্ষোভ কুরবান হত্যায় বিজেপি নেতা অনিসুরের চেয়ে তৃনমূল নেতাদের প্রতিই বেশি সন্দেহ প্রবন।

ঘটনা হল ১৩বছর আগে তৎকালীন বিরোধী নেত্রীকে বাইকের পেছনে আনিসুর রহমানই নন্দীগ্রাম পৌঁছে দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আগুনে নন্দীগ্রামে সেদিন অনিসুরের শক্তির উৎস ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, বলা যেতে পারে সদ্য বাম যুব সংগঠনের গন্ধ গা থেকে ঝেড়ে ফেলা শুধু আনিসুরই নয়, সমগ্র রাজ্য তৃনমূলকেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে পরিচয় করান শুভেন্দু। সেদিনের আনিসুর ছিলেন শুভেন্দুর একান্ত অনুগত যে শুভেন্দুর ইশারায় নন্দীগ্রামের কাটা রাস্তায় পাটা পড়ত অথবা উঠত। এরপরই তৃণমূলের অন্দরে আনিসুরের আনিসুর হয়ে ওঠা। জেলার যুব সর্বাধিনায়ক হয়ে ওঠা। কিন্তু ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়’ এর মতই গোষ্ঠী রাজনীতির অন্দরে একদিন আনিসুরই হয়ে দাঁড়ান ‘শুভেন্দুদা’র চ্যালেঞ্জ আর তারই অনিবার্য পরিনতিতে অধিকারী পরিবার নিয়ন্ত্রিত পূর্ব মেদিনীপুরের তৃনমূল সাম্রাজ্য থেকে আনিসুর অপসারন এবং অনিসুরের বিজেপি বরণ। বিজেপির অভিযোগ কুরবান হত্যায় অনিসুরকে গুঁজে দেওয়ার পশ্চাতে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীই যিনি পুলিশের তদন্তের আগেই আঙুল তুলে দিয়েছিলেন অনিসুরের দিকেই।

ওদিকে রাজ্য রাজনীতিতেও আজ অনিসুরের দশায় খোদ শুভেন্দু অধিকারী নিজে। অভিষেক ব্যানার্জীর যৌবরাজ্যের পথের কাঁটা শুভেন্দুকে যেন তেন প্রকারে নির্মূল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ার রাস্তায় শুভেন্দুও। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও দক্ষিনবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় পাল্টা সক্রিয় শুভেন্দু অনুরাগী ‘দাদার অনুগামী’রা। রাজ্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে ওই সব জেলার শুভেন্দু অনুগামীদের নির্বাসিত করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। খোদ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শুভেন্দু অনুগামী যুব সভাপতি সংগ্রামজিৎ দলুইয়ের অপসারন হয়েছে কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা জেলাকে। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই জেলবন্দি অনিসুরের সেই ১৩ বছরের ছবি সহ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার শিরোনামটি ভাবার মতই।

যদি এযাবৎ কালের সমস্ত কিছুকে শুভেন্দু অধিকারীর ক্রিয়া বলে ধরে নেওয়া হয় তবে তারই সমান প্রতিক্রিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার অভিলাষ কী ব্যক্ত হয়েছে ওই পোষ্টয়ে? প্রশ্নটা উঠছেই কারন জেলবন্দি অনিসুরের হাতে মোবাইল বা ল্যাপটপ তুলে দিল কে? রাষ্ট্রশক্তি কী আনিসুরের পাশে ? শুভেন্দু অধিকারীকে আরও জব্দ করার লক্ষ্যেই কী আনিসুরকে জাগানো হচ্ছে? আর শেষ প্রশ্নটা হল, আনিসুর কী জামিন পাওয়ার পথে? যদি তাই হয় তবে উত্তম-সুচিত্রা জুটির সেই বিখ্যাত গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ রোমান্টিক দৃশ্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অনবদ্য দৃশ্যপট রচিত হতে চলেছে বাংলার রাজনীতিতে যেখানে শুভেন্দুর রাজনৈতিক যাত্রাপথ শেষ করতে মরিয়া আনিসুর রহমান। সামগ্রিক ক্রিয়ার বিপরীতে এই প্রতিক্রিয়ার বিকল্প অন্য কিছু তো আপাতত নজরে পড়ছেনা।

RELATED ARTICLES

Most Popular