Homeএখন খবরমাস গেলে সাকুল্যে সাড়ে চার, জোটেনি মাস্ক, করোনা যুদ্ধে তবুও আশারাই...

মাস গেলে সাকুল্যে সাড়ে চার, জোটেনি মাস্ক, করোনা যুদ্ধে তবুও আশারাই ভরসা

নিজস্ব সংবাদদাতা: কেন্দ্র সরকার ঘোষনা করেছেন যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী করোনা যুদ্ধে মারা যাবেন তাঁদের পরিবার ৫০লক্ষ করে টাকা পাবেন, আর রাজ্য সরকার তার ওপর ৫লক্ষ টাকা করে দেবেন। সব মিলিয়ে ৫৫লক্ষ টাকা আশা কর্মীদের পরিবারও পাবেন যদি তাঁরা মারা যান! ব্যস, এই টুকুই পাওয়া। বাদ বাকি সেই একই, মাসের শেষে সাড়ে ৩ হাজার আর ফরমেট বানানো বাবদ মাসে ১হাজার। সব মিলিয়ে সাকুল্যে সাড়ে চার। পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট তো দুরের কথা পাতি কাপড়ের মাস্ক জোটেনি একটা। নিজের কাপড়ের আঁচলকেই মাস্ক ভেবে নিয়ে কাঠফাটা রোদে গ্রাম থেকে গ্রামে, এপাড়া থেকে ওপাড়া ঘুরে খবর নিচ্ছেন আশাকর্মীরাও। কারোর বাড়িতে বাইরের থেকে কেউ এসেছে কি না? পাড়ায় কারোর জ্বর, সর্দি, কাশি হচ্ছে কি না? বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাবধান করছেন এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন। অনুরোধ করছেন, বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। কোন বিশেষ কাজে বাধ্য হয়ে বেরোতে হলে অবশই মাস্ক পরুন। সারা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন আশাকর্মীরা। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরাও মানছেন, আশাকর্মীরা স্বাস্থ্য দপ্তরের বড় সোর্স।
শালবনির দিপালী মাহাত, মেঙ্কা সিং বা দাসপুরের কিঙ্কর জানা, রীতা সামন্ত সবারই এখন ভরসা আশাদিদিরা। দাসপুরের সোনালী জানা বলেন, গ্রামে প্রতিদিন ওরা (আশা দিদিরা) বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। খোঁজ নিচ্ছেন কাদের বাড়িতে বাইরের থেকে লোকজন এসেছেন, কারও বাড়িতে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি হয়েছে কিনা ইত্যাদি। সোনালী জানান, কারোর শরীর খারাপ হলে ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঐ আশাদিদিদের বিভিন্ন সাব সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধপত্র নিতে হচ্ছে। এখন ওরাই গ্রামের ভরসা’।
শালবনির সাওরা গ্রামের আশাকর্মী পূর্ণিমা সরেন নাগ বা কেশপুরের প্রতিমা চৌধুরী প্রত্যেকেই সকাল হলে খাতা পেন নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন বাড়ি বাড়ি। পূর্ণিমা জানান, ‘উপায় নেই। কত টাকা বেতন পাই দেখলে হবেনা। এখন মানুষ গুলোকে সাবধান সতর্ক করতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারোর কোন সমস্যা হলে উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্লকে জানাতে হবে। এই দায়িত্ব পালন না করলে বোড় বিপদ হতে পারে। তাই প্রসূতি, শিশুদের পাশাপাশি আমার এলাকার সবার খোঁজ রাখতে হচ্ছে’। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ গিরিশ চন্দ্র বেরা বলেন, জেলার সমস্ত ব্লকে আশাকর্মীরা ভাল কাজ করছেন।”
নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে এক আশাকর্মী বলেছেন, আমরা যখন আশা কর্মীরা এই সংকটময় পরিস্থিতিতে(করোনা ভাইরাস) দিনের পর দিন এলাকায় এলাকায় ঘুরছি তখন এলাকার কেউ কেউ আমাদের দেখে বলেছেন, ‘ দিদি, আপনাদের জয়জয়কার। সরকার আপনাদের জন্য কত কি ঘোষণা করছে। ওই আনন্দে আপনারা বেশ মন দিয়ে কাজ করছেন।’ এক জায়গায় নয়, বেশ কয়েক জায়গায় লোক জনের এই ধরনের মন্তব্য শুনে চমকে উঠলাম। হায়রে পোড়া কপাল! কি করে বোঝাই বেতন বা ভাতা কোনটাই বাড়েনি।
তাঁদের বলতে পারিনা, ” সত্যিটা কি জানেন? যদি করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যাই তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার আমার জন্য শুধু নয়, সকল স্বাস্থ্য কর্মীর জন্য ৫০ লক্ষ টাকা করে নাকি বিমা করে রেখেছে। মনে রাখবেন তা কিন্তু কেবল তিন মাসের জন্য। একই ভাবে রাজ্য সরকারও ৫ লক্ষ টাকার খুড়োর কলের ব্যবস্থা রেখেছে। অর্থাৎ আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কাজ করতে গিয়ে যদি অসুস্থ এবং মৃত্যু হয় তাহলে ওই টাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। বেতন বা ভাতা কিছুই বাড়েনি। লোকের কথা শুনে মনে মনে হাসি আর মনে হয় আমরা কি ওই মৃত্যুর আনন্দেই কাজ করে চলেছি?”

RELATED ARTICLES

Most Popular