Homeএখন খবরসঙ্কটাপন্ন গৃহবধূকে রক্তদিয়ে জীবন রক্ষা করলেন পুলিশের এ.এস.আই! বললেন, আমার এই রক্ত...

সঙ্কটাপন্ন গৃহবধূকে রক্তদিয়ে জীবন রক্ষা করলেন পুলিশের এ.এস.আই! বললেন, আমার এই রক্ত তো অন্যের জন্যই

নিজস্ব সংবাদদাতা: পুলিশ তোলাবাজ, পুলিশ ঘুষখোর ইত্যাদি ইত্যাদি যতরকমের খারাপ বিশেষণ চাপিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু অন্তরালে কাজ করে চলা সেই সব পুলিশ কর্মী যাঁরা তাঁদের পেশার বাইরে গিয়েও সামাজিক কর্তব্য পালনে নীরবে কাজ করে যান প্রচারের আলো থেকে দুরে থাকা সেই সব মানুষদের খবর বাইরে আসেনা তেমন করে। তেমনই এক মানুষের নাম সুজিত কুমার সিংহ। এক মুমূর্ষু মুসলিম গৃহবধূর সঙ্কটাপন্ন সময়ে রক্তদান করে তাঁর জীবন বাঁচিয়ে যিনি মসিহা হয়ে গেছেন মুর্শিদাবাদের আম জনতার কাছে। এমন একজন সহকর্মীর কাজে গর্বিত মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশও।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত ডোমকল থানার বিলাসপুর এলাকার ৩৮ বছরের গৃহবধূ সামসুন্নাহার বিবি গত ১বছর ধরেই জরায়ুতে টিউমার নিয়ে ভুগছিলেন। ২সন্তানের জননী সামসুন্নাহার স্বামী দিনমজুর হান্নান আনসারি একজন পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন কেরলে। লকডাউনে সেই কাজ চলে যাওয়ায় কয়েকমাস আগেই বাড়ি ফিরে আসেন। ওদিকে কাজ গিয়েছে আর এদিকে কাজ জোটেনি এমন অবস্থায় স্ত্রীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন হান্নান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো দুরের কথা সাধারণ চিকিৎসকই দেখাতে পারছিলেননা। গত কয়েকমাস ধরে কোয়াক, জড়িবুটি আর তাগা-তাবিজ করে গেছেন কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই। ওদিকে ক্রমাগত রক্তপাতে কাহিল হয়ে পড়ছিলেন সামসুন্নাহার। এরপরই তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে ১০দিন আগে তাঁকে নিয়ে আসা হয় ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা সাথে সাথে ভর্তি করে নেন তাঁকে। জানিয়ে দেন অপারেশন ছাড়া তাঁকে বাঁচানো সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা এও জানিয়ে দেন যে বর্তমান অবস্থায় অপারেশন সম্ভব নয়। দৈহিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে হবে।

ডোমকল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (IC) শৈলেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ” স্থানীয় আমাদের একজন ভলেন্টিয়ার আমাদের জানান, ওই মহিলার রক্ত ও-নেগেটিভ যা বিরল রক্ত গোষ্ঠীর। শুরুতে মহিলার এক আত্মীয় রক্ত দিয়েছিলেন কিন্তু এখন আবার রক্ত দিতে হবে। ওই ব্যক্তি যেহেতু ১০দিনের মধ্যেই রক্ত দিয়েছেন তাই এখুনি তাঁর পক্ষে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরই আমরা জানতে পারি আমাদের থানায় কর্তব্যরত এ.এস.আই. সুজিত কুমার সিংহও এই বিরল গোষ্ঠীর রক্তের অধিকারী। ওকে জিজ্ঞাসা করি ও রক্তদানে ইচ্ছুক কী না। এক কথায় রাজি হয়ে যায় সুজিত। এরপরই রক্ত দেয় ও। একজন এমন মহৎ সহকর্মীর এই মনের জন্য আমরা খুবই গর্বিত।”

১৭ তারিখ ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করেন সুজিৎবাবু। সেই রক্ত মহিলাকে দেওয়ার পর ফের কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। পাশাপাশি ওষুধ ও পথ্যের সাহায্যে তাঁর স্বভাবিক রক্ত বাড়ানোর চেষ্টাও করছেন চিকিৎসকরা। হয়ত আরও কিছুদিন লাগবে তাঁর অপারেশন করার জন্য। ঘটনায় অভিভূত হান্নান আনসারী জানিয়েছেন, ” কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমার। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন এমন মানুষকে রহম করেন তিনি। উনি শুধু একজন মানুষকে বাঁচাননি, বাঁচিয়েছেন ২টি সন্তানের জননীকে। আমার পুরো পরিবার ওঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।”

১৭ই জুনের পর ১৮ই জুন, থানারই একটি বিশেষ মামলায় আদালতে কর্তব্য করতে যেতে হয়েছে সুজিৎ কুমার সিংহকে। সেখান থেকেই ফোনে দ্য খড়গপুর পোষ্টকে তিনি জানিয়েছেন, ” দেখুন, পুলিশের উর্দির নিচে থাকা আমি মানুষটাও তো একজন সাধারন মানুষ। আমারও পরিবার পরিজন রয়েছে। যেদিন জেনেছিলাম নিজের রক্ত ও নেগেটিভ সেদিন ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার যদি রক্তের প্রয়োজন হয় তখন কী হবে? পরে ভেবে দেখলাম ঈশ্বর আমাকে এই রক্ত দিয়েছেন এরকমই বিরল রক্তের মানুষদের সাহায্য করার জন্য। আমি সেই কাজটাই করেছি মাত্র।”

RELATED ARTICLES

Most Popular