Homeএখন খবরঅজানা করোনা বাহকই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সবংয়ের, আ্যন্টিজেন পরীক্ষার শুরুতেই শনাক্ত ১, ফের...

অজানা করোনা বাহকই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সবংয়ের, আ্যন্টিজেন পরীক্ষার শুরুতেই শনাক্ত ১, ফের আক্রান্ত চায়ের দোকানি

নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা বিধি ঠিকঠাক না মানার মাশুল দিচ্ছে সবং, পুলিশ বা প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে গিয়ে নিজেরাই ফাঁকিতে পড়ে যাচ্ছে সবং বাসী। ছোট্ট একটা জায়গা অথচ দ্রুত করোনার গ্রাসে চলে আসা সবংয়ের আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই কন্টাক্ট লিংক মিসিং। ঠিক যেমনটা বুধবারেও দেখা গেল। বুধবারই প্রথম আ্যন্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে সবং গ্রামীন হাসপাতালে। আ্যন্টিজেন পরীক্ষা মানেই হাতে গরম রিপোর্ট, আধ ঘন্টার মধ্যেই জানা যাবে পরীক্ষিত ব্যক্তি পজিটিভ কী না। এদিন ৬ জনের পরীক্ষা হয় যার মধ্যে ১ জন পজিটিভ।

যে ব্যক্তি পজিটিভ হয়েছেন সেই বছর ৫৫ বয়সী ব্যক্তি একজন চায়ের দোকানদার। চায়ের সঙ্গে টা অর্থাৎ পান বিড়ি সিগারেট বিক্রি হয় দোকানে। রাত আড়াইটা নাগাদ সবংয়ের যে দুটি চায়ের দোকান খোলা পাওয়া যেত তার একজন আগেই পজিটিভ হয়েছেন এবার দ্বিতীয় এবং শেষ চায়ের দোকানদারও আক্রান্ত হলেন। বুধবার বিকালেই সবং ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে ওই ব্যক্তিকে ডেবরা হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
সবং গ্রামীন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ ডক্টর সুভাস কান্ডার বলেছেন, “ওই ব্যক্তি জ্বর নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের বুধবারই আ্যন্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে ফলে সেই সুযোগ টা আমরা ব্যবহার করি। পরীক্ষার পরই পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। সাথে সাথে তাঁকে ডেবরা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।” সাধারন ভাবে করোনা হেঁটে আসেনা কেউ না কেউ তাকে বহন করে আনে। এক্ষত্রে এই ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কেউ করোনা আক্রান্ত নন তাহলে এর কাছে করোনা এল কী করে?

মনে করা হচ্ছে ওই চায়ের দোকানেই কাল প্রবেশ করেছে কোনও খরিদ্দারের মধ্যে দিয়ে। রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটায় খোলে এই দোকান। একটু দুরেই সবং মাছের আড়ৎ। মধ্য রাতেই মাছের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে পৌঁছে যায়। সবং ছাড়াও ডেবরা, ময়না, পিংলা, বালিচক, খড়গপুর, কেউ মাছ নিয়ে আসে কেউ আবার মাছ কিনে নিয়ে বাজারে যায়। এই ক্রেতা বিক্রেতারা এই দুটো চায়ের দোকানে চা খায়। শুধু মাছের লেনদেনের ব্যবসায়ীরাই নয়, আশে পাশের পাড়ার কিছু বাসিন্দা যারা জানে যে এই দোকান ভোর রাতে খোলা থাকে তারাও আসেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কে করোনা নিয়ে আসছে আর কে করোনা নিয়ে যাচ্ছে আর পুরো পরিবার, গোটা পাড়া ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন বোঝা মুশকিল।

সবংয়ের এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘কয়েকদিন আগেই কুন্ডলপালে মৃত্যু হয়েছে এক রেশন ডিলারের। মৃত্যুর পরে জানা গেছে তার করোনা পজিটিভ। এরপর পুরো পরিবার, আশেপাশের প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকেই নেগেটিভ। তাহলে করোনা এল কোথা থেকে? ওই বৃদ্ধ কোথাও যাননি! রেশন নিতে যারা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যেই কেউ সংক্রমন ছড়িয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তি নিজে উপসর্গ হীন, বুঝতেও পারছেন না যে তিনি করোনা বাহক। নিজের অজান্তেই করোনা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।”

একই ঘটনা চাউলকুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নেধুয়া গ্রামের ১৮ মাসের শিশুর। বাবা মা দুজনেই নেগেটিভ কিন্তু শিশু পজিটিভ! কী করে আক্রান্ত হল দুধের শিশু। নিশ্চিত ভাবেই এমন কেউ একজন শিশুটিকে ছুঁয়ে গেছে, আদর করে গেছে যিনি উপসর্গ হীন করোনা বাহক। এই উপসর্গহীন বাহকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সবং কেন, সারা দুনিয়াতেই। আর এদের দ্বারাই আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ বৃদ্ধা অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। সবং সদরে এটা বেশি হচ্ছে কারন জায়গাটা ঘিঞ্জি, লোকজনের সমাগম বেশি আর স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবনতাও। তাই মাত্র ৪৫দিনে আক্রান্ত ৩৩ জন, প্রতি দেড় দিনে একজন আক্রান্ত হচ্ছেন।
আপনি বলবেন, আমি তো মাস্ক পরি! কিন্তু আপনি কী বাইরে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন ? হাটে বাজারে, অফিস , ব্যবসা, মিটিং মিছিল পারস্পরিক দূরত্ব মানেন? বাড়িতে ঢোকার আগে কনুই অবধি সাবান দিয়ে ২০সেকেন্ড ধরে ধুয়ে ফেলেন? জামা কাপড়, বাজারের থলে যেখানে কারও থুতু বা সর্দির অংশ ছিটকে এসে লাগতে পারে বাড়িতে ঢোকার আগে ফেলে দিয়ে কেচে নেন?

আরও একটা উদাহরন নেওয়া যাক। সবংয়ে মোট আক্রান্ত ৩৩। এর মধ্যে সবং সদরেই প্রায় ১৭ জন। পরের জায়গা দেভোগ বা তেমাথানি, প্রায় ৮ জন। বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে এক আধজন। অর্থাৎ যে জায়গা যত ঘিঞ্জি সেই জায়গা তত সংক্রামক। এই জায়গা হয় এড়িয়ে চলতে হবে নচেৎ অত্যন্ত সাবধান হতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনা নিজে হেঁটে আপনার বাড়ি যাবেনা। আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি তাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন কী না।

RELATED ARTICLES

Most Popular