Homeএখন খবরতৃণমূল নেতার হাতে কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে মৃত্যু মায়ের, 'অবৈধ সম্পর্ক'...

তৃণমূল নেতার হাতে কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে মৃত্যু মায়ের, ‘অবৈধ সম্পর্ক’ বলে কুৎসিত মন্তব্য মন্ত্রীর

ওয়েব ডেস্ক : মঙ্গলবার রাতে হাওড়ার বাগনানে কলেজ ছাত্রী মেয়েকে শ্লীলতাহানি থেকে বাঁচাতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও তার সাগরেদের হাতে খুন হয়েছিলেন মা। সেই ঘটনায় যখন অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে তখন সেই ঘটনাকে অবৈধ সম্পর্কের জের বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। পাশাপাশি কোনোভাবেই ওই যুবক তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। দলীয় কর্মীর এই অবভ্য আচরণকে অস্বীকার করে মেয়েটির ‘অবৈধ সম্পর্ক’ বলে দেগে দেওয়ায় অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে এলাকায় ছি ছিৎকার পড়ে যায় ।

যদিও মন্ত্রী বলেন, “দোষ করলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। দোষীকে গ্রেফতার করা হবে। সমবায় মন্ত্রীর দাবি, বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। অভিযুক্ত তৃণমূলের কেউ নয়। মেয়েটির সঙ্গে অভিযুক্তের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাদের বাড়িতে সে গিয়েছিল। তখন মেয়েটির মাকে ধাক্কা মারে। হাসপাতালে তিনি মারা যান।” রাজ্যের একজন মন্ত্রীর এমন নোংরা মন্তব্যে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে হাওড়ার বাগনানের গোপালপুরে।

ঘটনা মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলার। একটি পেপার ও জলের বোতল নিয়ে বাড়ির ছাদে চলে গেছিল বাগনানের বাসিন্দা নির্যাতিতা ওই কলেজ ছাত্রী। ছাদে দাঁড়িয়েই সে ফোনে গেম খেলতে থাকে। অভিযোগ সেইসময় গাছ বেয়ে একজন ছাদে উঠে তার পা চেপে ধরে অন্য আরেকজন তার শরীরে হাত দেয়। আচমকা বিষয়টি দেখে ভয় পেয়ে ছাদ থেকেই ‘মা’ বলে চিৎকার করতে থাকে ওই ছাত্রী। সেই ওই দুই দুষ্কৃতী কলেজ ছাত্রীর উপর চড়াও হয়ে তার মুখ, পা চেপে ধরে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। মেয়েটি বুঝতে পারে দুই যুবকের মধ্যে একজন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা, পাড়ারই ছেলে কুশ বেরা এবং অপরজন অপরিচিত।

এদিকে মেয়ের চিৎকার শুনে ছাদে ছুটে আসে মা। অভিযোগ, ছাত্রীর মা সিঁড়ির কাছে আসা মাত্রই তাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় কুশ বেরা নামক ওই স্থানীয় তৃণমূল নেতা। এরপর মেয়েটির হাত থেকে দুটি ফোন কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। আচমকা ধাক্কা দেওয়ায় সিড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন ওই কলেজ ছাত্রীর মা। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে ঘটনা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর সাথে দেখা করতে আসেন হুগলি জেলার বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। ঘটনার ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কুশ বেরাকে গ্রেফতার না করার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিজেপি৷ এরপর বাগনান থানাতেও যান তাঁরা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অন্যদিকে, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অরুণাভ সেনও ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, “যারা দোষী, তারা যে দলেরই হোক, আমার দলেরই হোক বা অন্য দলেরই হোক, তাদের কঠিনতম শাস্তি হওয়া উচিত। প্রশাসন আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নিক।”এদিকে দলের একজন মন্ত্রী অরূপ রায় যখন কুশ বেরাকে দলীয় সদস্য মানতে নারাজ সেই সময় এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল নেতা কুশ বেরাকে দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কথা জানান জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

RELATED ARTICLES

Most Popular