Homeএখন খবরখড়গপুরে সিনেমাও হার মানল রিয়েল হিরোর কাছে! ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে তিন কিলোমিটার...

খড়গপুরে সিনেমাও হার মানল রিয়েল হিরোর কাছে! ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে তিন কিলোমিটার দৌড়ে চোর ধরলেন যুবক

নিজস্ব সংবাদদাতা: বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অবিশ্বাস্য সিনেমার দৃশ্যপট যেন রচিত হল লক ডাউনের খড়গপুর শহরে। খড়গপুর স্টেশন ছাড়িয়ে হাতিগোলা পোল বা খড়গপুর আউটার, বেলা প্রায় ১২টা। ভুবনেশ্বর-হাওড়া জন শতাব্দী এক্সপ্রেস থেকে এক যাত্রীর দামী স্মার্টফোন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এক মোবাইল চোর আর তার পেছনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই যুবকটি। চোর এভাবেই লাফাতে অভ্যস্ত তাই তার কিছু হলনা কিন্তু যুবকটি পড়েই জোরালো চোট পেল হাতে কোমরে। রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত যুবক যখন সে ধকল সামলে উঠেছে চোর তখন দৌড়াচ্ছে রেললাইনের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে ইন্দা বামুন পাড়ার পথে।

মাঝখানে নয়ানজুলি পেরিয়ে, ঝোপ জঙ্গল, আঁক বাঁক পেরিয়ে ছুটছে চোর আর পেছনে পেছনে যুবক। রেল ট্র্যাক থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পেরিয়ে বামুন পাড়ার পরিছন্ন জনপদে পৌঁছানোর মুখেই যুবকের মুখে ‘চোর চোর’ চিৎকার শুনে জড়ো হয়েছিল পথ চলতি মানুষ, স্থানীয় জনতা। তাঁরাই উল্টো দিক থেকে ঘিরে ধরে চোরকে। স্থানীয় জনতা উত্তম মধ্যম দেওয়ার পর ফোন করে রেল সুরক্ষা বাহিনী বা আরপিএফ জওয়ানদের। জওয়ানরা চোর এবং যুবক দুজনকেই নিয়ে যায় খড়গপুর স্টেশনের জিআরপি বা রেলপুলিশ থানায়। সেখানেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে যুবককে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের বছর আঠাশের এই রিয়েল হিরোর নাম মাসুদ মল্লিক। তেলেঙ্গানার
সেকেন্দ্রাবাদে কর্মরত বাগনানের যুবক ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ি ফিরছিলেন। সেকেন্দ্রাবাদ থেকে ভুবনেশ্বর এসে নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ধরেছিল মাসুদ। বৃহস্পতিবার পৌনে ১২টা নাগাদ ট্রেনটি খড়গপুর স্টেশন ছাড়ে। হাতিগোলা পোল বা খড়গপুর আউটার ইস্ট কেবিন পেরুনোর মুখেও ট্রেনের গতিবেগ একটু কমই ছিল। মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন মাসুদ। হঠাৎই ছিনতাইবাজ চোর এসে মাসুদের মোবাইল ও হাতের ঘড়ি ধরে টান মারে। ঘড়ির চেন কেটে নিচে পড়ে গেলেও চোর মোবাইল নিয়ে গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেয়, পেছনে পেছনে মাসুদ। কুখ্যাত রাজু দাসমাসুদের এই ঝাঁপ দেওয়াটাকে অবিশ্বাস্য বলে মনে করেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন মাত্র ২০ হাজার টাকার একটা মোবাইলের জন্য মাসুদের এই প্রানের ঝুঁকি নেওয়াটা ঠিক হয়নি। মাসুদ বলছেন, “আমাদের মত পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ওই মোবাইলটা কি জিনিস তা আপনারা বুঝবেন না। লকডাউনের আমার পরিবারের প্রতিটি মুহূর্ত ওই মোবাইলে ধরা রয়েছে। আমি বিবাহিত, আমার স্ত্রী, বাচ্চা, বাবা, মা সবাইকে এই মোবাইলের মাধ্যমেই দেখেছি এতদিন। প্রচুর ডকুমেন্ট রয়েছে ওই মোবাইলে যা ছাড়া আমার জীবনই অচল হয়ে পড়বে। ফলে টাকার দিক থেকে নয় আমি অন্য দিক থেকে ওই মোবাইলটাকে দেখেছি।”

বাগনানের অওলান পাড়া এলাকার মল্লিক পাড়ার বাসিন্দা যাকে আড়াই কিলোমিটার দৌড়ে ধরেছে সেই কুখ্যাত ট্রেন ছিনতাইবাজ রাজু দাস খড়গপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। ট্রেন ছিনতাইয়ের বহু মামলাতে এর আগেও রেল পুলিশ খুঁজেছে তাকে। শুধু ট্রেন নয়, বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বহু দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত এই রাজু দাস। তাই প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে এরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়ছে? রেলের ওভারব্রিজ, সিঁড়ি, চলমান সিঁড়ি, প্ল্যাটফর্ম সর্বত্রই সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো যার ফলে পরিচিত এই দুস্কৃতিদের প্ল্যাটফর্ম চত্ত্বরে ঢোকা আটকানো খুব কঠিন কাজ নয়। তাছাড়া যে আউটারে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানেও আরপিএফ পোস্টিং থাকার কথা। ঘটনার সময় সেখানে আরপিএফ ছিলনা।

রেল পুলিশ জানিয়েছে আগামীকাল শুক্রবার রাজুকে আদালতে পেশ করা হবে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ মাসুদের মোবাইল রাখতে চাইলেও মাসুদ জানিয়ে দেয় সে মামলা প্রত্যাহার করে নেবে কিন্তু মোবাইল হাতছাড়া করবেনা। পুলিশ মোবাইল সিজ করে ব্যক্তিগত বন্ডে মোবাইল ফেরত দেয় মাসুদকে। পুলিশ ইত্যাদি চুকিয়ে মাসুদ যখন রাস্তায় তখন বেলা ২টা বেজে গেছে, খড়গপুর শহরে লকডাউন শুরু। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় চৌরঙ্গী পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে হাওড়া গামী লরিতে তুলে দেওয়া হয় মাসুদ কে। খড়গপুর ছাড়ার আগে শহরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মাসুদ। বলেছেন, “স্থানীয় মানুষ সাহায্য না করলে আমি এই মোবাইল ফেরৎ পেতামনা। আল্লা খড়গপুরের ভাল করুন।”

RELATED ARTICLES

Most Popular