Homeআন্তর্জাতিক১১বছরের রেকর্ড ইলিশ উৎপাদন বাংলাদেশের, দিঘার দিকে তাকিয়ে বাংলা

১১বছরের রেকর্ড ইলিশ উৎপাদন বাংলাদেশের, দিঘার দিকে তাকিয়ে বাংলা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ইলিশ উৎপাদনে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভাঙল বাংলাদেশ। লকডাউনের এই অভূতপূর্ব ফল শোনার পর নিজের সমুদ্র উপকূলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইলিশ রসনা প্রিয় পশ্চিমবঙ্গবাসীও। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সেই রেকর্ড ভেঙে এ–‌পর্যন্ত ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।

ওপার বাংলার সরকার বলছে, করোনার কারণে এবার অবৈধ মাছ শিকার ছিল প্রায় বন্ধ। সমুদ্র দূষণমুক্ত থাকা, নদনদীতে ৬৬ দিন লঞ্চ বন্ধ থাকা ও অবৈধ মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণে থাকায় ইলিশ উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙে এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশে লকডাউনে দূষণ কমেছে। কলকারখানা বন্ধ থাকায় কমেছে বায়ুদূষণ। খালবিল, নদীনালা, সমুদ্রেও কমেছে দূষণ। জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রকৃতির নিজস্ব গতিতে বেড়েছে। ফলে এ বছর প্রচুর ইলিশ মিলছে।

তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। এখন ১২৫ থেকে ১৩০টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশে প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের ‌‘‌অভয়াশ্রম’‌। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনও রয়েছে প্রথম স্থানে। এদিকে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, নদীতে বৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় কোনও বাধা নেই।
জেলেরা বলছেন, এবার জালে ধরা পড়ছে বড় বড় ইলিশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‌মাছ ভালই মিলছে। কিন্তু দাম কম। যে–‌মাছ গত বছর বিক্রি হয়েছে ১০০০ টাকায়, তা এবার সাড়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায়ও বিক্রি হয় না।’‌ রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় গিয়েও দেখা যায় সেই ছবি। এক কেজি একশো বা এক কেজি দুশো গ্রামের ইলিশের ডাক উঠছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। কখনও এর চেয়ে কমবেশিও হয়ে থাকে, জানালেন পাইকারি মাছবিক্রেতা নাসির হোসেন।

খুচরো বাজারে এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা বা একটু বেশিতে। তিন বছরে বড় ইলিশের সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে ৩০০ শতাংশেরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১ কেজি বা তার ওপরে ইলিশ পাওয়া যেত মাত্র তিন শতাংশ, ২০১৮–‌তে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ শতাংশে। ২০১৯ সালে তা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ শতাংশ।
ইলিশ–‌গবেষক ও মৎস্যবিজ্ঞানী, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এ বছর নদীতে মাছের খাবার ভাল রয়েছে। সব জলাশয়ে খাদ্য প্রচুর থাকায় ইলিশ–‌সহ সব মাছ দ্রুত বাড়ছে। করোনা আর তার পর সম্ভবত আমফানের প্রভাবে এমনটা হয়েছে। এ–‌রকম দূষণমুক্ত পরিবেশ বহু বছর পরে নজরে আসছে। ইলিশ উৎপাদনে তাই এ বছর আগের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।’

ঠিক একই রকম প্রত্যাশায় এপার বাংলার ইলিশ প্রেমীরাও। এখানকার মৎসজীবীরাও আশাবাদী, দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রা বন্ধ থাকায় পরিমানে ও গুনমানে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে। আরও আশার কথা করোনার কারনে এবার বিদেশে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ না থাকায় দেশের বাজারে ইলিশের দাম কমবে। ইতিমধ্যেই ডায়মন্ড হারবারের মৎস্যজীবীরা ইলিশের খোঁজে সমুদ্রে ট্রলার ভাসালেও স্থানীয় মৎস নিলাম কেন্দ্র বন্ধ থাকায় দিঘা শংকরপুরের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে নামেননি। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে ১জুলাই সমুদ্রে নৌকা ভাসাবেন তাঁরা। আর সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলার ইলিশ প্রেমীর দল।

RELATED ARTICLES

Most Popular