Homeএখন খবরআন্তর্জাতিক নারী দিবসে বেলদার 'প্রতিভা'

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বেলদার ‘প্রতিভা’

সায়ন মাইতি: শুধু নিজের ঘরে নয়, সবার ঘরে আলো জ্বললেই একটা জনপদ আলোকিত হয়। ঠিক তেমনই শুধু নিজে স্বনির্ভর হওয়া নয় পাশাপাশি মেয়েরা স্বনির্ভর হলেই গড়ে ওঠে শক্তিশালী মহিলা সমাজ। তাই একা একা নয় আরও অনেক নিয়েই স্বনির্ভরতার লড়াই শুরু করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলদার গৃহবধু প্রতিভা জানার। আজ সেই প্রতিভার প্রতিভায় আলো জ্বলে উঠেছে পিছিয়ে পড়া ২০০টি পরিবারে।
‘রাঁধার পর খাওয়া আর খাওয়ার পর রাঁধা’র সাধারন গৃহবধূ জীবন নয় বরং কিছু একটা করতে হবে এই ভেবে এলাকার ৮ থেকে ১০ জন গৃহবধূ ও মেয়েদের নিয়ে একটা অন্য রকম লড়াই প্রতিভা জানা শুরু করেছিলেন বছর দশেক আগেই। লড়াইটা এক অদ্ভুত ভাবনার। গৃহস্থের ফেলে দেওয়া জিনিস সেই সঙ্গে পাট ,লাইলন দড়ি ,প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি যা কিনা শুধুই আবর্জনা হয়ে পরিবেশে জঞ্জাল জড়ো করে তাকেই নতুন আদল দিয়ে ফের গৃহস্থের বাড়িতেই ফেরৎ পাঠানো। শুধু পরিবেশ বাঁচলনা উল্টে হাতে চলে এল বেশ কিছু টাকাও!
কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি প্রতিভা। আরও নতুন নতুন মেয়েকে জীবিকার সন্ধান দিতে খোঁজ করেছেন নতুন নতুন বাজারের ।

নিজ খরচেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু করেছেন টেলারিং, বিউটিশিয়ান ,টেডি পুতুল তৈরি সহ বিভিন্ন কোর্স করেন তারা । স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করেন গৃহবধূ ও মেয়েদের ।নিজেওই কোর্স শেখার পর এলাকার মেয়েদেরকে শেখান । বাদাম, ছোলা ,গম ও চিনি ও অন্নান পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করেন একটি লাড্ডু ।যার নাম পৌষ্টিক লাড্ডু ।এই লাড্ডু পুষ্টিগুণ ভালো ,এগুলি বাচ্চারা খেতে ভালবাসে এবং ওদের দেওয়া যাবে । তাই সরকারিভাবে যাতে এগুলি বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে দেওয়া যায় এর জন্য তারা যোগাযোগ করেন সরকারি দপ্তরে ।এখন বর্তমান বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এই পৌষ্টিক লাড্ডু দেওয়া হয়ে থাকে ছোট ছোট বাচ্চাদের । এরপরে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেতে শুরু করেন তারা । ৮ থেকে ১০ জন মেয়েকে দিয়ে শুরু করা ১টি গ্রুপ থেকে ।

বর্তমানে প্রায় ২০০ টি গ্রুপ তৈরি হয়েছে এলাকায় ।প্রত্যেকটি গ্রুপে ১০ থেকে ১২ জন করে রয়েছে ।বর্তমানে এই গ্রুপ গুলি থেকে কুড়িজন করে সরকারিভাবে বিনা খরজে মাশরুম চাষ ,বিউটিশিয়ান, টেলারিং,টেডি বিয়ার তৈরি ,পশুপালন ,আমাদের অব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে সৃজনাত্মক ও উৎপাদনাত্মক দ্রব্যাদি তৈরি ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও অনেকে নিচ্ছে । এগুলির সঙ্গে এবার নতুন করে আবার সংযোজিত হতে যাচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ ।

এর জন্য ইতিমধ্যে যারা এই চাষ করতে ও প্রশিক্ষণ নিতে চান তাদের দল গঠন করা চলছে ।নিজে ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলেছেন। এবং এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা স্বনির্ভর হতে শিখেছে ।
আজ প্রতিভার প্রতিভায় আলো হয়ে উঠেছেন সঙ্গীতা চক্রবর্তী, সোমা দাস পাল , অনুপমা শীল সহ ২০০ মহিলা। নিজ নিজ পরিবারে এরা যুক্ত করেছেন নিজের উপার্জিত সম্পদ। আর সেই আনন্দে প্রতিভা জানা আরও নতুন নতুন উপায় খুঁজে চলেছেন আরও মেয়েকে সাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য। তাঁর একার স্বপ্ন আজ অনেকের মধ্যে সঞ্চারিত, এক থেকে অনেক প্রতিভা আজ বেলদার ঘরে ঘরে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দাঁড়িয়ে প্রতিভা তাই বলেন, “বর্তমান মেয়েরা আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই ।তবে মেয়েদেরকে যতটা স্বাধীন বলে আমরা বলি ততটা স্বাধীন নয় ।তাই তার স্বাধীনতা এবং সম্মান পেতে অর্থ রোজগারের প্রয়োজন ।কারণ অর্থ ছাড়া আজকের দিনে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে না ।তাই প্রত্যেকটি মেয়ে যাতে স্বাবলম্বী হয় এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের রোজগার নিজেরা বুঝে নিতে পারে সেটাই আমার লক্ষ্য ।”

RELATED ARTICLES

Most Popular