Homeএখন খবরপালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ নিহত বিকাশ দুবে, এনকাউনটার নিয়ে উঠেছে...

পালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ নিহত বিকাশ দুবে, এনকাউনটার নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন

বিশেষ সংবাদদাতা: মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার করে উত্তর প্রদেশের কানপুর নিয়ে আসার পথে পুলিশের সঙ্গে ‘ সংঘর্ষে ‘ মৃত্যু হয়েছে গ্যাং স্টার বিকাশ দুবে র । শুক্রবার সকালে ভোউতির কাছে এই সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । আর এই সংঘর্ষ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা । বিরোধীদের প্রশ্নবাণে জেরবার উত্তর প্রদেশের সরকার । কিন্তু সরকারের পক্ষে থেকে এই এনকাউনটার বা সংঘর্ষ নিয়ে কিছু বলা হয় নি ।

বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মন্দিরে গ্রেফতার করা হয় বিকাশ দুবেকে। শুক্রবার তাকে কানপুর আদালতে হাজির করার কথা ছিল । তাই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শুক্রবার সকালে কানপুরে আনা হচ্ছিল গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে। কিন্তু কানপুর পৌঁছনোর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হল বিকাশের।

পুলিশের দাবি, ঝাঁসি – কানপুর হাইওয়ে দিয়ে আসার সময়, পুলিশের কনভয়ের যে গাড়িতে বিকাশ ছিল, সেই গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উল্টে যায়।
গাড়ি উল্টে যেতেই এক পুলিশকর্মীর পিস্তল ছিনিয়ে নেয় বিকাশ। তার পর পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ তাকে আত্মসমর্থন করতে বলায়, পুলিশকর্মীদের দিকেও গুলি ছোড়ে সে। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালানো হয় বলে দাবি পুলিশের। কানপুর পশ্চিমের পুলিশ সুপার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘গাড়ি দু্র্ঘটনা হতেই পিস্তল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ দুবে। পুলিশ তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলার পরেও সে গুলি চালায়। বাধ্য হয়ে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ।’’

পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই তাকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। কানপুরের আইজি মোহিত আগরওয়াল জানিয়েছেন, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় চার পুলিশ কর্মীও আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে কানপুর হাসপাতালে ।

পুলিশের দাবি, যে গাড়িতে বিকাশ দুবে ছিল, সেই গাড়ির ভিতরে থাকা এস টি এফ বাহিনীর এক পুলিশের বন্দুক কেড়ে নিতে চায় বিকাশ । তাই নিয়ে গাড়ির ভিতরে পুলিশেরসঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় । তার কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায় গাড়িটি। তার পরে পুলিশের বন্দুক কেড়ে নিয়ে পালাতে চেষ্টা করে বিকাশ। তাকে থামতে বললেও থামেনি । গুলি চালাতে শুরু করে । তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে পালটা গুলি চালাতে হয়।

এই দিকে জানা গিয়েছে যে ঝাঁসি থেকে সংবাদ মাধ্যমের যে গাড়ি ওই কনভয় ফলো করে আসছিল তাদের মাঝ রাস্তায় আটকে দেওয়া হয় । তার কিছু ক্ষণ পরেই ওই এনকাউনটার হয়েছে । কেন ওই সব সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে । তবে কি সব কিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল বলেও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা ।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাতে কানপুরের চৌবেপুর থানার ডিকরি গ্রামে বিকাশ দুবেকে ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ডিএসপি-সহ আট পুলিশ কর্মীর। তার পর থেকেই কানপুরের ডন, গ্যাং স্টার বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করা নিয়ে চলছিল টানটান নাটক। অবশেষে গতকাল উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারির পর উত্তরপ্রদেশে ফিরিয়ে আনার সময়ই ঘটল এই ঘটনা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হল বিকাশের।

বিকাশের গ্রেফতারির পর বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। আজ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যুর পরও সে রকম কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। কী ভাবে কনভয়ে বিকাশের গাড়িই দুর্ঘটনার কবলে পড়ল তা এখনও জানা যায়নি। তার হাতে কী হাতকড়া পরানো ছিল? জানা যায়নি তা-ও।

তবে এর মধ্যেই বিকাশের মৃত্যু নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নিশানা করে টুইট করেছেন বিরোধী নেতারা। সমাজবাদী পার্টির নেতা, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব লিখেছেন, গাড়ি উল্টে যায়নি, সরকার উল্টে যাওয়ার ঘটনা থেকে বাঁচানো হয়েছে।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা বঢরা বলেন, অপরাধী খতম হয়েছে, কিন্তু যারা অপরাধকে আড়াল করেছিল তাদের কি হবে? কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেন, তিন জনের এনকাউন্টার একইরকম হয় কিভাবে? যা আশঙ্কা ছিল তাই হল। এই সঙ্গে দিগ্বিজয় সিংহর সংযোজন , ‘‘আমরা যেটা সন্দেহ করছিলাম, সেটাই ঘটল। বিকাশ দুবের সঙ্গে কোন কোন রাজনৈতির নেতা ও পুলিশ অফিসাররা জড়িয়ে ছিল, তা আর জানা যাবে না।’’ বিকাশের মৃত্যু নিয়ে শিবসেনার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর কটাক্ষ, ‘‘বিকাশে মৃত্যুতে বাঁশও থাকল না, আর বাঁশিও বাজবে না।
ওমর আব্দুল্লাহ খোঁচা মেরে বলেন, মৃত মানুষ কথা বলেনা।
আর এই সব প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তিতে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ।
এদিকে এই এনকাউন্টার নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। তিনি বলেন,
“উত্তর প্রদেশের সরকার কানপুরের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।সতর্কতা সত্ত্বেও বিকাশ দুবেই উজ্জয়িনী পৌঁছেছিল, যা কেবল সুরক্ষার দাবিই প্রকাশ করে না, অন্য দিকেও নির্দেশ করে।”
এই সঙ্গে তার দাবি, “ভয়ঙ্কর অপরাধীদের তালিকা থেকে বিকাশের নাম অনুপস্থিত ছিল। এখানেই বোঝা যাচ্ছে বিশাল কিছু মাধ্যম ছিল তার। উত্তর প্রদেশের সরকারের উচিত সিবিআই তদন্ত করা।”

RELATED ARTICLES

Most Popular