Homeএখন খবরতৃনমূল 'হার্মাদ' অনুষঙ্গে নন্দীগ্রামে বিজেপির ঘরে আগুন, কর্মীদের তীব্র অসন্তোষ! চলল ইট...

তৃনমূল ‘হার্মাদ’ অনুষঙ্গে নন্দীগ্রামে বিজেপির ঘরে আগুন, কর্মীদের তীব্র অসন্তোষ! চলল ইট আর চেয়ার ছোঁড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা: ধিকিধিকি করে গোটা রাজ্য জুড়েই আগুনটা জ্বলছিল বিজেপির ঘরে, শুক্রবার তা যেন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল নন্দীগ্রামে। যে প্রশ্ন সায়ন্তন বসু, অগ্নিমিত্রা পাল, বাবুল সুপ্রিয় কিংবা আলিপুরদুয়ারের গঙ্গাপ্রসাদ শর্মারা সেই প্রশ্নটা তুলেই এদিন নন্দীগ্রামে দলের যোগদান মেলা ভেস্তে দিলেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। ইট আর চেয়ার ছুটে গেল থেকে বিজেপিতে আসার জন্য নির্দিষ্ট মঞ্চে বসে থাকা তৃনমূলের নেতা কর্মীদের দিকে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গীয়, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় আর সদ্য গা থেকে তৃনমূল গন্ধ ঝেড়ে ফেলা শুভেন্দু অধিকারীরা দেখলেন কী অসীম ঘৃনা আর ক্রোধ নিয়ে তৃনমূল ছাড়তে চাওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিজেপির সদস্যরা। ক্রুদ্ধ কর্মীদের চাপে কার্যত ভণ্ডুল হয়ে গেল যোগদান মেলা। কর্মীদের একটাই প্রশ্ন তৃনমূলের যে হার্মাদ বাহিনীর দাপটে আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়েছিল তাঁরাই যদি দলে আসে তবে বিজেপি দলটার হবে কী?

কিছুদিন আগেই বিজেপি নেতাদের একাংশের বিরোধিতায় তৃনমূল ছেড়েও বিজেপিতে যোগ দিতে পারেননি আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। প্রকাশ্যে না বললেও শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে আসা মেনে নিতে পারছেননা অনেক বিজেপি নেতা কর্মী। সেই ক্ষোভ চাপা দিতে কার্যত নিজের তৃণমূলী কৃতকর্মের জন্য সভার পর সভায় গিয়ে অনুতাপ করছেন তিনি। বলছেন, ঝাড়গ্রাম আর পুরুলিয়া জেলা পরিষদ আসলে বিজেপি জিতেছিল। বলছেন, সবং বিধানসভা কিংবা ঘাটাল লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়ে যেত যদি না ভোট লুট করত তৃনমূল। কিন্তু এসব কথায় বিজেপি নেতারা ভুললেও সাধারণ কর্মীরা ভুলবেন কেন? তাঁদের মতে এই ভোট লুট করতে তৃনমূলের হয়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাঁরাই কেন দলে আসবে? শুক্রবার সেই ক্ষোভই ফেটে পড়েছে বিজেপির কর্মীদের।

শুক্রবার আগে থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর ঘোষিত জনসভা ছিল। সেই সভায় লাগোয়া খেজুরি থেকেও বিজেপি কর্মী সমর্থকরা এসেছিলেন যদিও এঁরা এসেছিলেন দিলীপ ঘোষ আর কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র বক্তৃতা শুনতে। দলত্যাগীদের মঞ্চে এরা যখন এমন কিছু লোকদের দেখতে পান যাঁরা এঁদের ভাষায়, “সেই সব ‘তৃনমূলের হার্মাদ’ যারা আমাদের দিনের পর দিন অত্যাচার করে এসেছে, ঘর বাড়ি লুটপাট করেছে, মা-বোনদের অত্যাচার করেছে।” তখন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাঁরা শ্লোগান তোলেন, রনজিৎ মন্ডল, অসীম মন্ডল দূর হটো! এরপরই এঁদের বসে থাকা মঞ্চ লক্ষ্য করে ঢিল ছুটে আসে। ওই সময় বক্তব্য রাখছিলেন কৈলাশ বিজয় বর্গীয়। তাঁকে বেশ কয়েকবার বক্তৃতা থামাতে হয়। এরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে মূল মঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী ছুটে যান দলত্যাগীদের জন্য তৈরি মঞ্চে। ততক্ষনে দর্শকাসনের জন্য চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে যায়।

গোটা পরিস্থিতি দেখে দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ, মুকুল রায়রা হতবাক হয়ে যান। শুভেন্দু বারবার বলতে থাকেন, আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন তো। উত্তেজিত বিজেপি কর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুভেন্দু তখন বলেন, ‘তৃনমূল দু’চারজনকে পাঠিয়েছে আমাদের সভা ভণ্ডুল করতে। এই কাজ সিপিএম কোনও দিন করেনি।’ তিনি জনতাকে শান্ত হতে বলেন। যদিও শুভেন্দুর এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ওই কর্মীরা জানিয়েছেন, ” আমরা বিজেপিরা খেজুরিতে এতটাই শক্তিশালী যে এমনিতেই জিতব। ওদের দরকার হবেনা। খেজুরির বিধায়ক রনজিৎ মন্ডল আমাদের কাঁথির সাংগঠনিক সভাপতি পবিত্র দাস কে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গুলি করিয়েছিল। কিছুদিন আগেই আমাদের কতগুলো বাইক লুঠ করিয়েছে। ওদের দলে নিলে আমরা একটাও ভোট পাবনা।” একজনকে বলতে শোনা যায়, “ওদের দলে নিলে দাঁড়িয়ে থেকে খুন করব। পুলিশের সামনেই ভাঙচুর করে সব জ্বালিয়ে দেব। আগুন জ্বলবে খেজুরিতে।’

আসলে তৃনমূল থেকে বিজেপিতে আসার জন্য হিড়িক পড়তেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির নেতৃত্বের মধ্যেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এমন কি আর এস এসের (RSS)সাম্প্রতিক চিন্তন বৈঠকেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে যে তৃনমূল থেকে বিজেপিতে আসায় কতটা লাভ হচ্ছে। এদিকে জঙ্গল মহলেও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইদানিং সেখানকার জনসভায় লোক কমছে বলে আশঙ্কিত বিজেপি। একটা অংশের ধারনা ২০১১ সালের পর তৃনমূলের আক্রমন ও পুলিশের মামলা থেকে বাঁচতে যে যে বাম সমর্থকরা বিজেপিতে গিয়েছিল তারাই ফের বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে তৃণমলীদের দলে নেওয়ায়। ঘরে ফিরছে বামের দল,সমর্থনে ভাটা পড়ছে রামের দলের।

খেজুরি ও নন্দীগ্রামেও এঁদের সংখ্যা যথেষ্ট। এই রুষ্ট বাম সমর্থকদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পেরেই আজকাল প্রতিটি সভাতেই শুভেন্দু আধিকারীকে সিপিএম স্তব করতে শোনা যায়। কখনও তিনি বলছেন সিপিএমের আমলে এসএসসিতে (SSC) প্রতিবছর ১২ হাজার, ১৪হাজার, ১৬ হাজার যুবকের চাকরি হত। কখনও বলছেন, জ্যোতি বসু, বুদ্ধ বাবুরা অনেক ভালো কাজ করেছেন। নেতাইয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন, নেতাইয়ের জন্য সিপিএম একা দায়ী নয়, জনসাধারণের কমিটি এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল আবার আজ নন্দীগ্রামে বললেন, সিপিএম কখনই আমাদের সভায় ঢিল ছোঁড়েনি।

এদিকে শুক্রবারের ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর তথা খেজুরির প্রবীণ সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস বলেছেন, ” আমরা বারবার বলেছি তৃনমূল আর বিজেপির মধ্যে কোনও ফারাক নেই। যাঁরা ভেবেছিলেন বিজেপি কে দিয়ে তৃনমূল তাড়াবেন তাঁরা নিশ্চই আজ বুঝতে পারছেন যে ওই দুটো দলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই শুধু পতাকার রঙ ছাড়া।” ঘটনার পর আর যোগদান মেলা হয়নি। শুধু মাইকে নাম ঘোষণা করেই জানিয়ে দেওয়া হয় কারা কারা যোগ দিলেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular