Homeএখন খবরবন্ধ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাব,আসেনি পি.জির রিপোর্ট,প্রিয়জনের দেহের জন্য হা পিত্যেশে পরিবার ...

বন্ধ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাব,আসেনি পি.জির রিপোর্ট,প্রিয়জনের দেহের জন্য হা পিত্যেশে পরিবার মর্গে লাশের পাহাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (Midnapore Medical College) সামনেই বটগাছের চাতালে গত ৫ দিন ধরে পড়ে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানা এলাকার ভগবন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা অরূপ অধিকারী। দিনে দুবার করে মেডিক্যাল কলেজের ফেসিলেটেড ম্যানেজারের দপ্তরে যাচ্ছেন আর জিজ্ঞাসা করছেন, রিপোর্ট এল কী না? সাড়ে ৫ দিনে ৯ বার একই উত্তর এসেছে, ‘না!’ অরূপ অধিকারী আবার এসে বসছেন বটতলায়। মুড়ি খাচ্ছেন, আর সম্বল জল। এভাবেই চলছে। অরূপ অধিকারীর বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। তাঁর ভগ্নিপতি ৫২ বছরের ক্ষুদিরাম মিদ্দা গত ২৮ শে আগষ্ট লাশ হয়ে ঢুকে গিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের( Midnapore Medical College  ) মর্গে। সেই যে ঢুকেছেন আর বেরুনোর নাম নেই। কারন রিপোর্ট আসেনি।

হার্ট আ্যটাকে মারা গেছেন ক্ষুদিরাম। আগেও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৫দিন আগে ছাড়া পেয়ে বাড়ি গেছিলেন কিন্তু ২৭তারিখ ফের ভর্তি হন। ওই দিন মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ইংরেজি মতে ২৮তারিখ রাত ৩টায় মৃত্যু হয় তাঁর। করোনা কালে ডেথ সার্টিফিকেটের চেয়েও দামি করোনা সার্টিফিকেট নচেৎ শ্মশানে দেহ দাহ করা যাবেনা। ওই দিন দুপুরে তাঁর নমুনা সংগ্ৰহ হয়, নমুনা যায় এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালে। সে রিপোর্ট বৃহস্পতিবার দুপুর অবধি আসেনি।

অরূপ জানান, ‘শনিবার রাতে আমাদের ফোন করে জানানো হয় রিপোর্ট এসে গেছে। নেগেটিভ রিপোর্ট দেহ দিয়ে দেওয়া হবে। রবিবার দেহ নিতে আসতে বলে, ভুল করে ফোন করা হয়েছে । রিপোর্ট আসেনি। সোমবার লকডাউন, বাড়ি যাওয়া হয়নি। রিপোর্ট আজ আসবে কাল আসবে বলে থেকে গেছি।’

শুধু ক্ষুদিরাম মিদ্দা নয় জানা যাচ্ছে অন্তত ১৫টি লাশ জমে রয়েছে মর্গে। কারও কারও মতে এত চাপাচাপি হয়ে আছে যে বোঝা যাচ্ছনা, লাশের সংখ্যা ১৭! আগষ্ট মাসের ২৬ তারিখ করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবের ৪ কর্মীর দেহে। প্রাথমিক ভাবে দু দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ৩০ তারিখ ফের করোনায় আক্রান্ত হন ল্যাবের ৩ জন কর্মী। ফলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আরটি/পিসিআর (RT/PCR) টেস্ট সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে লালা রসের নমুনা পাঠানো হচ্ছে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের ভাইরোলজি ল্যাবে। কিন্তু ‘অগস্ত্য যাত্রা’র মত সেখানে নমুনা যাচ্ছে বটে কিন্তু আসছে কম। আর যে রিপোর্ট আসছে তাতে ভরসা করতে সাহস পাচ্ছেনা খোদ জেলারই স্বাস্থ্য কর্তারা। আর আসেনি এই ক’দিনে মারা যাওয়া রোগিদের লাশ।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরফে এই ঘটনা স্বীকার করে নিয়ে বলা হয়েছে লাশের সংখ্যা অতটা না হলেও ডজন খানেক হবে। কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ পঞ্চানন কুন্ডু বলেন,”কিছু মৃতদেহ আছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও শালবনী করোনা হাসপাতাল থেকে কিছু দেহ এসেছে। রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছিল বলেই সমস্যা। তবে আমাদের মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাব চালু হয়ে গেছে আর সমস্যা হবেনা। দ্রুত পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিক জানান, ” রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম আ্যন্টিজেন পরীক্ষা করেই দেহ গুলি ছেড়ে দেওয়া অথবা সৎকারের জন্য প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে কিন্তু এখানে একটি জটিলতা তৈরি হয়। যেহেতু নমুনা আরটি/পিসিআর (RT/PCR) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেখানে আ্যন্টিজেন (Antigen)পরীক্ষায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে আরটি/পিসিআর পজিটিভ হবেই সম্যসা এখানে নেই। সমস্যা হল আ্যন্টিজেন নেগেটিভ হলে আরটি/পিসিআর নেগেটিভ নাও হতে পারে। দুটো রিপোর্ট পারস্পরিক আলাদা হলে প্রশাসনিক জটিলতা হতে পারে মনে করেই আ্যন্টিজেন করা হয়নি। আমরা যদি নমুনা না পাঠাতাম তাহলে এই সমস্যা হতনা কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি রিপোর্ট আসতে এত দেরি হবে।”

RELATED ARTICLES

Most Popular