Homeএখন খবরমেলেনি অ্যাম্বুলেন্স, নিজের সঙ্গে বেঁধেই করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মাকে নিয়ে ২০...

মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স, নিজের সঙ্গে বেঁধেই করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মাকে নিয়ে ২০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে হাসপাতালে কোলাঘাটের যুবক

নিজস্ব সংবাদদাতা: ওড়িশার দানো মাঝি অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে করেই বয়ে এনেছিলেন ১০ কিলোমিটার দুরে নিজের গ্রামে। কিছুদিন আগেই অ্যাম্বুলেন্স বিহারের দম্পত্তি হাসপাতালের চত্ত্বরেই হারিয়েছিলেন শিশুকন্যাকে। পশ্চিমবাংলাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এখানেও সেই অ্যাম্বুলেন্স না মেলায় নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে অসুস্থ মাকে নিয়ে কুড়ি কিলোমিটার বাইক চালিয়ে পৌঁছালেন হাসপাতালে। এগিয়ে বাংলা কিংবা উৎকর্ষ বাংলায় এই বেনজির ঘটনার স্বাক্ষ্য রইল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট।

জানা গেছে মায়ের জ্বরে কাবু হয়ে যাওয়ায় করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে ধরে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের কাছে গিয়েছিলেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দরবার করতে । কিন্তু শেষ অবধি মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স,তাই গামছা বেঁধে মাকে বাইকে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল ছেলে। ছেলের এই উদ্বেগের যথেষ্ট কারনও ছিল। বাড়ির বড় দাদা ও বৌদি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে পাঁশকুড়া বড়মা  করোনা হাসপাতালে। বাড়ির সকলের লালারস পরীক্ষা হয়েছে কিন্তু রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি।

তারই মাঝে মায়ের কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর রয়েছে। সেই মতে গ্রামীণ আশা কর্মীর সাহায্য চেয়েছিলেন কোলাঘাটের ছাতিন দা গ্রামের এক যুবক। স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসার কথা জানান ছেলেকে। সেই মতন গত শনিবার অর্থাৎ ১১ই জুলাই কোলাঘাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাকে নিয়ে বাড়ির ছোট ছেলে চিকিৎসার জন্য যায়।

কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র জানিয়ে দেয় করোনা উপসর্গ রয়েছে মায়ের। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। করোনা উপসর্গ থাকায় কোন গাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হয়নি তাদের। মেলেনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স।
কোলাঘাটের বিডিও- র দ্বারস্থ হয় ওই পরিবার। ওই পরিবারের অভিযোগ, বিডিও সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি।

এদিকে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ে বৃদ্ধা মহিলা। বাধ্য হয়ে বাড়ির ছোট ছেলে মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজে ঝুঁকি নিয়ে মোটর বাইকে মাকে বসিয়ে গামছায় বেঁধে পাঁশকুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।সরকারি গাফিলতির এক চরম নিদর্শন দেখল কোলাঘাটের এলাকাবাসী। যদিও কোলাঘাটের বিডিও মদনমোহন মণ্ডল জানান, “ব্লকের হাতে যে অ্যাম্বুলেন্স ছিল সেটা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ড্রাইভার মারা গিয়েছে।

আর যে গাড়িটি ছিল সেটা রোগী বহন করছে। কিছুক্ষণ আমি ওয়েট করতে বলি। কিন্তু ওরা ধৈর্য হারিয়ে নিজেরাই নিয়ে চলে যায়। তবে এ ধরনের ঘটনা আর হবেনা। আমরা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করছি যাতে রোগীরা দ্রুত পরিষেবা পায়।”

এখানেই প্রশ্ন, তাহলে কি ব্লক প্রশাসন আগে থেকে সচেতন নয়। কেন এত বড় ব্লক, একটি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। প্রতিদিন করোনা দাপট দেখাচ্ছে কোলাঘাট ব্লক এলাকায়। কিন্ত ওই যুবক যখন ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মাকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য মোটর বাইকেরই ভরসা করল তখন তাকে কেন আটকালো না সেই মুহূর্তে। প্রশ্ন তুলেছে আক্রান্তের বাড়ির আত্মীয়-পরিজনরা। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনেই পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular