ওয়েব ডেস্ক : পা ভেঙে গিয়েছে! চিকিৎসার আশায় বাগনান থেকে কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এসেছেন নব্বই ছুঁই ছুঁই এক বৃদ্ধ৷ কিন্তু শহরের হাসপাতালে আসতেই বিপত্তি। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ। অথচ, তাকে চিকিৎসা করতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা না করেই রোগীক বাড়ি ফিরিয়ে দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। হাসপাতালের এমন দুর্ব্যাবহারে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ রোগীর পরিবার। অসুস্থ ওই বৃদ্ধ বছর ৮৬ সত্যচরণ ঘোষ। তিনি হাওড়ার বাগনান এলাকার বাসিন্দা।
জানা গিয়েছে, দিন দুয়েক আগেই বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন সত্যচরণবাবু। সেসময় কোমর ও পায়ে গুরুতর চোট পান। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার একটি নার্সিংহোমে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে এক্স-রে করতেই দেখা যায় কোমর এবং পায়ের সংযোগস্থলের হাড় টুকরো হয়ে গিয়েছে। এরপরই চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় নেই। সে অনুযায়ী, রোগীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যেতে বলা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসেন তিনি। এরপর ওই বৃদ্ধকে প্রথমে জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। এরপর অস্থিরোগ বিভাগের আউটডোরে। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি। জানানো হয়, করোনা পরীক্ষা করা আন হলে কোনোভাবেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব নয়। ফলে দ্রুত রিপোর্ট পাওয়ার জন্য এন্টিবডি টেস্ট করান সত্যচরণবাবুর পরিবার।
রোগী পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষা করানোর পর হাসপাতালের তরফে বলা হয়, “তিনদিন লাগবে ওই রিপোর্ট আসতে। এখন বাড়ি চলে যান।” কিন্তু রোগী যন্ত্রণায় এতটাই ছটফট করছিলেন যে তাকে কোনোভাবেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এদিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ শহরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, পাশাপাশি শহরের প্রথম পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। সেহেতু কম সময়ের মধ্যে এন্টিবডি টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি রয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। এর জেরে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই এন্টিবডি টেস্টের রিপোর্ট চলে আসে। তা সত্ত্বেও কেন হাসপাতালের তরফে ওই বৃদ্ধকে তিনদিন পর আসতে বলা হল? তা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। এই ঘটনায় থানায় বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগ, “উনি হাঁটতে পারছেন না। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। খামোখা টালবাহানা করছে হাসপাতাল।”
এদিকে রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও গত ৮ জুলাই ঠিক হয়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শুধু করোনা নয়, সমস্ত রোগীদের জন্যেই আউটডোরে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হবে। অভিযোগ, এই ঘোষণার পরও প্রতিনিয়ত মেডিক্যালে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও রোগী পরিবারদের। এমনকি করোনায় আক্রান্ত নন এমন রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে। এদিকে চিকিৎসা না পেয়ে বাগনানের ওই বৃদ্ধের বাড়ি ফিরে যাওয়ার খবর চাউর হতেই তা হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কানে পৌঁছায়। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।