Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গরাজ্যে দশের মধ্যে থাকবই! বাবাকে দেওয়া কথা রাখা গেলনা মাধ্যমিক বাতিল হওয়ায়,...

রাজ্যে দশের মধ্যে থাকবই! বাবাকে দেওয়া কথা রাখা গেলনা মাধ্যমিক বাতিল হওয়ায়, অবসাদে আত্মহত্যা ছাত্রীর, শোকের ছায়া পরিবারে

নিউজ ডেস্ক: কুচবিহার জেলা তো বটেই রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে থাকবই, এমনটা জানিয়েছিল মেয়ে। নিয়ম করে তাই দিনের ১৪ঘন্টাই বসে থাকত বই নিয়ে। ছোট বোন বড্ড জ্বালায়, দুস্টুমি করে তাই জানলা দরজা বন্ধ করে পড়ত মেয়েটা। সোমবার সন্ধ্যায় তাই ভেবেছিল পরিবার। দরজা জানালা বন্ধ করে মেয়ে পড়ছে। পরিবারের মাথায় আসেনি পরীক্ষাই যখন হবেনা তখন মেয়ে পড়ছে কেন। ততক্ষনে খবর হয়ে গেছে পরীক্ষা হবেনা। মেয়েটাও জেনে গেছে সেই কথা। আর জেনে গেছে বাবাকে দেওয়া কথা রাখা হলনা। পরীক্ষাই যদি না হয় তাহলে কিসের মেধা তালিকা? পরীক্ষা না দিতে পারার সেই মানসিক অবসাদই শেষ অবধি  দিনহাটার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বর্ণালী বর্মনকে ঠেলে দিল আত্মহত্যার পথে। জীবনের শুরুতেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার হতাশা তাকে যেন বলে দিল আর কোনও স্বপ্নই হয়তো পূরণ হবে না। হতাশা, অবসাদে নিজেকেই শেষ করে ফেললেন সেই পরীক্ষার্থী। ঘর থেকে উদ্ধার হল তার নিথর ঝুলন্ত দেহ।

জানা গিয়েছে, কোচবিহারের  দিনহাটার আটিয়াবাড়ি আম্বালি বাজারের বাসিন্দা  বর্ণালী বর্মন। তার বয়স ১৬ বছর। চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। সেই মতো প্রস্তুতিও নিচ্ছিল সে। দিনরাত পড়াশোনায় ডুবে থাকত। পরীক্ষায় ভাল ফল করে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিল বর্ণালী। কিন্তু করোনা  পরিস্থিতি বিবেচনা করে সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন চলতি বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

নাবালিকার পরিবারের দাবী, পরীক্ষা বাতিলের খবর পাওয়া মাত্রই অবসাদ গ্রাস করে বর্ণালীকে। সকলের সঙ্গে থাকলেও কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলছিল না সে। দিনহাটা গোপালনগর এমএসএস উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিকের ছাত্রী ছিল বর্ণালী। এলাকায় সে অত্যন্ত মেধাবী বলেই পরিচিত ছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল সে।

সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা হতেই আরও মনমরা হয়ে যায় সে। মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বর্ণালী। এরপর বিকেলে বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে ঘুরতে বেরোয় বর্ণালী। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই সে নিজের ঘরে যায়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া মেলেনি। পরে পরিবারের সদস্যরা জানালা দিয়ে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে এলাকার বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। পরে দিনহাটা থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিষ্ট্রেসস’ এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে হঠকারী আখ্যা দিয়ে এদিন শিক্ষা দপ্তরকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ” কুচবিহারের দিনহাটার গোপালনগর হাই স্কুলের মেধাবী ছাত্রীর আত্মহত্যাতে, অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।তার পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানাই।আমরা আগেও বলেছি আজ বলছি অবিলম্বে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষা দপ্তর তথা রাজ্য সরকার পুনর্বিবেচনা করুক। আর তা না হলে বহু মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অকালে হারিয়ে যাবে।সমাজ হারাবে তার এগিয়ে চলার শক্তিকে,প্রতিভাকে।”

RELATED ARTICLES

Most Popular