Homeএখন খবরকরোনা আতঙ্কে আসন্ন প্রসবাকে ফিরিয়ে দিল গ্রাম, সদ্য প্রসূতিকে ফিরিয়ে দিল পাড়া,...

করোনা আতঙ্কে আসন্ন প্রসবাকে ফিরিয়ে দিল গ্রাম, সদ্য প্রসূতিকে ফিরিয়ে দিল পাড়া, মা আর নবজাতককে জায়গা দিল চন্দ্রকোনার ক্লাব

নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা আতঙ্ক যেন মানুষের বিবেক বুদ্ধি মানবিকতার সবই কেড়ে নিয়েছে! না’হলে আসন্ন প্রসবা জেনেও কেউ ফিরিয়ে দেয় নিজেরই গ্রামের পুর্নগর্ভাকে ? মাত্র ২দিনের সন্তান সহ মাকে কেউ তাড়িয়ে দেয় আত্মীয় বাড়ি থেকে ? অথচ এমনটাই ঘটল সোনালী সরেনের জীবনে। সদ্য প্রসূতি সোনালী তাঁর সদ্যজাতকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে রইলেন খোলা রাস্তার ওপরে!

একটি সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চন্দ্রকোনার ভবানীপুর লকডাউনের আগে দিনমজুরের কাজ করতে এসে আটকে যায় বাঁকুড়া জেলার রানিবাঁধের চুরকি গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতি, গৌতম ও সোনালী সরেন। সোনালী গর্ভবর্তী ছিলেন। তাঁরা থাকছিলেন একটি গোডাউন সংলগ্ন ঝুপড়িতে। এরপরই সোনালীর উপলব্ধি হয় তিনি যে কোনও মুহূর্তেই মা হতে চলেছেন। ফলে লকডাউনের মধ্যেই একটি পন্যবাহী গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলে ওই গাড়িতে তাঁরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে নিজের গ্রাম বাঁকুড়া জেলার চুরকি গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি তারা।

গ্রামবাসীরা জানিয়ে দেন তাঁরা যেহেতু বাইরে থেকে এসেছেন তাই আপাতত তাদের গ্রামে থাকা যাবেনা। অনেক অনুরোধ করার পরেও গ্রামের মানুষরা রাজি না হওয়ায় পুনরায় ফিরে আসতে হয় তাদের চন্দ্রকোনায়। অবশেষে প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে শুক্রবার চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন সোনালী,আর সেই দিনই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
এদিকে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে স্বামী পুনরায় বাঁকুড়া চুরকি গ্রামে যান সচিত্র পরিচয় পত্র আনতে। কিন্তু সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে ফেরার পথে প্রবল জ্বরে রাস্তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গৌতম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সোমবার হাসপাতাল থেকে সোনালীকে ছেড়ে দেওয়া হলেই দেখা দেয় চরম বিপত্তি। চন্দ্রকোনার ভবানীপুর এলাকায় সোনালী নিজের এক আত্মীয়ার বাড়িতে গেলে হাসপাতাল থেকে ফিরেছে এই আতঙ্ক থেকে বাধার মুখে পড়তে হয় তাকে। ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা সোনালীকে গ্রামে থাকতে দিতে নারাজ। তাঁরা ওই আত্মীয়কে জানিয়ে দেয় মা ও ছেলেকে জায়গা দিলে গ্রাম ছাড়তে হবে তাঁদের। ভবানীপুরের গ্রামের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গেলেও চিঁড়ে ভিজেনি। অগত্যা ফের রাস্তায় নামতে হয় সোনালীকে।

সোমবার দুপুরের পর থেকেই এলাকায় দুর্যোগ। ঝড় বৃষ্টিতে নবজাতককে কাপড়ে জড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন মা। বিষয়টি লক্ষ্য করে স্থানীয় এক যুবক। মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন ঘটনার কথা। যুবক এরপরই কথা বলেন ক্লাবের সদস্যদের সাথে। এরপর ক্লাবের ছেলেরাই নিজেদের ক্লাবে নিয়ে আসেন সোনালী ও তার সদ্যোজাতকে।থাকা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন তারা। যতদিন লকডাউন না কাটে ততদিন এই ভবানীপুর তুফান সংঘই মা ও ছেলের দায়িত্ব নিয়েছেন। খোঁজ মিলেছে  নবজাতকের বাবারও।

RELATED ARTICLES

Most Popular