Homeএখন খবরটেষ্ট বাড়তেই আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে বাংলায়, গত ৭দিনে দ্বিগুন হল আক্রান্তের সংখ্যা

টেষ্ট বাড়তেই আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে বাংলায়, গত ৭দিনে দ্বিগুন হল আক্রান্তের সংখ্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা: এর আগের সোমবার ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যেখানে রাজ্যে মোট ৫ হাজার ৪৬৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, সেই সংখ্যাটাই আজ সাত দিন পরে পৌঁছেছে ১২ হাজার ৪৩। যা হিসেব করলে বোঝা যায়, গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৯৪০টি করে টেস্ট হয়েছে রাজ্যে। যে সংখ্যাটা আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪৭ জন। ফলে মোট করোনা অ্যাকটিভের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৪। এই সোমবার ২৭এপ্রিল বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব এই হিসেব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা জিনিস স্পষ্ট হল। মুখ্যসচিবেরই দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, ঠিক সাত দিন আগে, গত সোমবার রাজ্যে করোনা অ্যাকটিভের সংখ্যা ছিল ২৪৫। অর্থাৎ এই সাত দিনে বাংলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও খানিকটা বেশি।

ঠিক এই কথাটাই এতদিন বলে আসছিলেন বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিন্তু রাজ্য সরকার মানেনি। সরকার বারবার বলে আসছিল অন্য রাজ্য থেকে এ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কম। এমনকি রাজ্য সরকার এও অভিযোগ করে যে বাংলা সম্পর্কে কেন্দ্র বিভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করছে। অথচ সোমবার সকালে অর্থাৎ রাজ্যের মুখ্যসচিব সাংবাদিক সম্মেলন করার ৬ঘন্টা আগেই কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যেই পরিস্কার হয়ে গেছিল যে গত সাতদিনে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট আক্রান্তের সূচকে দ্রুত উর্ধমুখী। নতুন করে আক্রান্তের ৬৭%ই এই রাজ্যগুলিতে। কেন্দ্রের তথ্যেই জানা গেছিল যে নতুন করে গত সাতদিনের হিসাবে আক্রান্তের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গ মহারাষ্ট্রের চেয়েও শীর্ষে ১০৭%, মহারাষ্ট্রে সংখ্যাটা ১০৩%। এমনকি দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে আক্রান্তের তালিকায় থাকা গুজরাটেও গত সাতদিনে নতুন করে আক্রান্ত ৮৩%।

একইসঙ্গে এদিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, বাংলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪ জন। ফলে এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০৯ জন। এই সংখ্যাটা সাত দিন আগে ছিল ৭৩। অর্থাৎ সাত দিনে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, তেমনি সুস্থও হয়েছেন ৩৬ জন। যে সংখ্যাটা খুব হতাশাজনক নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।আবার এই সাত দিনে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ২০-তে।

শুধু তাই নয়। গত ২০এপ্রিল সাংবাদিক বৈঠক বলছে, সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ছিলেন ৪ হাজার ৪৬০ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ৩৪ হাজার ৯৪৪ জন। সেটা ২৭এপ্রিল , সাত দিন পরে দাঁড়িয়েছে সরাকরি কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৪৪৭ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৮ হাজার ৬২৯ জন। তাহলে কি ঘরে বন্দি অবস্থায় নজরজদারি কমেছে? এটার কারণ কি গ্রিন জ়োনের এলাকা আরও প্রসারিত হওয়া? সেটা অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
কারণ সাত দিন আগে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৯টি জেলা ছিল করোনামুক্ত। কোনও পজ়িটিভের খবর আসেনি সেসব জায়গা থেকে। সাত দিন পরে ন’টির মধ্যে অন্তত দু’টি জেলা (মালদহ ও আলিপুরদুয়ার) থেকে খবর এসেছে, প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ মেলার।

ফলে সব মিলিয়ে এই সাত দিনে বাংলার সামগ্রিক পরিস্থিতি যে খুব ইতিবাচক, তা এখনই বলতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সারা দেশের নিরিখে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বাংলার ভূমিকা খুব ভাল কিছু নয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২১ মার্চ ভারতে কোভিড ১৯ ডাবলিং রেট ছিল ৩ দিন। তারপরে লকডাউনের ফলে তা ধীরে ধীরে বেড়ে ৮.৬ দিন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সে হার বেড়ে হয়েছে ১০ দিনের কাছাকাছি।কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, গত সাত দিনের হিসেবে, এই সাত দিনই বাংলার ডাবলিং রেট। বরং সাত দিনের খানিক কমই, কারণ সাত দিনে দ্বিগুণের চেয়েও খানিকটা বেশি হয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।

বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলছেন, যে সব রাজ্যে টেস্ট কম হচ্ছে, সে সব রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও কম থাকছে। বা উল্টোটা বলতে গেলে, আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট না বাড়ার একটা কারণ হল টেস্ট কম হওয়া। তার মানে কখনওই এই নয়, যে সংক্রমণ কম হচ্ছে। এদিকে সারা দেশের নিরিখে বাংলায় টেস্ট সবচেয়ে কম, তা আইসিএমআর প্রথম থেকেই বলছে। এই পরিস্থিতিতে, কম টেস্ট হওয়া সত্ত্বেও সাত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়াটা অশনি সঙ্কেতেরই পরিচয় বলে মনে করছেন অনেকেই। টেস্টের পরিমান আরও বাড়লে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার।

RELATED ARTICLES

Most Popular