Homeএখন খবরকালের করোনায় কাটছাঁট হালের বিশ্বকর্মায়, মন খারাপের মিটার মাপছে মেদিনীপুরে টাটা

কালের করোনায় কাটছাঁট হালের বিশ্বকর্মায়, মন খারাপের মিটার মাপছে মেদিনীপুরে টাটা

পলাশ খাঁ; চন্দ্রকোনা রোড: করোনা আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। রুটিরুজির সাথে হারিয়ে গেছে আমোদ প্রমোদ, উৎসব অনুষ্ঠান, আনন্দও। কোপ পড়েছে পুজোতেও। যে সিদ্ধিদাতা পুজা দিয়ে বাঙালির পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে সেই গনেশ ঠাকুরও এ মরশুমে বহরে না হোক জহরে রোগা হয়েছেন। এবার পালা বিশ্বকর্মারও। আর এই বিশ্বকর্মার পুজাই হল মেদিনীপুরের টাটা বলে পরিচিত চন্দ্রকোনা রোডের একান্ত বৃহৎ উৎসব। চন্দননগরের যেমন জগদ্ধাত্রী অথবা কৃষ্ণনগরের যেমন বুড়িমা চন্দ্রকোনা রোডের তেমন বিশ্বকর্মা। সেই বিশ্বকর্মা পুজায় এবার টান পড়েছে।তাই মন ভালো নেই মৃৎ শিল্পী থেকে এলাকাবাসীর ।

ব্যাবসায়ীরা তাদের পুজোর বাজেট কাট-ছাঁট করার ফলে প্রতিমাতে বরাদ্দ তো কমেছেই এমন কি কমেছে পুজো উপলক্ষে আনুসাঙ্গিক বাজেটও। এই বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চন্দ্রকোনা রোড এলাকা উৎসব মুখর হয়ে থাকে। রকমারি আলোর রোশনায়, নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বড়ো বড়ো মন্ডপ, সাবেকি থেকে থিমের প্রতিমা যা পুজোর এই কটা দিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে চন্দ্রকোনা রোডে। ফলে এখানে বিশ্বকর্মা পূজা দুর্গা পূজাকেও ছাড়িয়ে যায়। ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় শ দেড়েক পুজো হয়। তার মধ‍্যে ৩০-৪০ টা বিগ বাজেটের পুজো। সাবেকি থেকে থিম পুজো কোন কিছুই বাদ যায় না চন্দ্রকোনা রোডের এই প্রাণের উৎসবে। কিন্তু এবার করোনার থাবায় অতিমারির ধাক্কায় কম বাজেটে নমো নমো করে পূজো সারতে চাইছেন সকলেই। পুজোর বাজেট কমার সাথে সাথে কমেছে মন্ডপ ও প্রতিমার আর অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচের বাজেট। ফলে মন ভালো নেই এলাকাবাসীর।

চন্দ্রকোনা রোড মুলত গাড়ি ও আলু ব্যাবসার পীঠস্থান। আর এই রয়েছে কোল্ড স্টোর থেকে গাড়ি মেরামতির গ্যারেজ৷ ফলে প্রতি বছরই খুব জমকালো করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। এই পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এলাকার কুমোর, প্যান্ডল ব্যাবসায়ী, মৃৎশিল্পী, সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পীরা। প্রায় একসপ্তাহ ধরে আলোর রোশনাই, মাইকের গমগম, সঙ্গীত আর নৃত্যের তালে ভেসে যায় এলাকা। কিন্তু অন‍্যান‍্য বছরের তুলনায় এবছর পুজোর বাজেট অনেকটাই কম। সবাই কম টাকার মধ‍্যে ঠাকুর নিতে চাইছেন তেমনই অল্প খরচের মধ্যেই পুজোর পাঠ চুকিয়ে ফেলতে চাইছে।

আর এতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কুমোর থেকে মৃৎশিল্পী, সঙ্গীত, নৃত্যশিল্পী থেকে মন্ডপ ব্যাবসায়ী এমন কি দশকর্মা দোকান গুলির মালিকদেরও। মালপত্রের দাম বেড়েছে তাই কিন্তু প্রতিমার বায়না সেরকম না থাকায় কম টাকাতেই তা বিক্রি করে তেমন লাভের মুখ দেখবেন বলে মনে করছেন মৃৎশিল্পীরা। চন্দ্রকোনা রোড এলাকার নয়বসতের মৃৎ শিল্পী কার্তিক পাল কালীপদ ঘোষরা জানান, অন্যান্য বছর চন্দ্রকোনা রোডে যে টাকার ঠাকুর যায়, এবার তার অর্ধেকেও টাকার প্রতিমা যাচ্ছে । ফলে বাড়িতে কারিগর রেখে কাজ করিয়ে লাভ কিছুই হবেনা। মৃৎশিল্পী কার্তিক বাবু বলেন ,”করোনার জেরে প্রায় তিন মাস ধরে রুজি রোজকার বন্ধ।ফলে টান পড়েছে সংসারে। আর এদিকে এই বিশ্বকর্মা পুজো তে ,প্রত‍্যেক বছর ছোটো বড়ো মিলিয়ে ৪০ – ৫০ টা বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করি।কিন্তু এবারে বড়ো প্রতিমা তো হচ্ছেই না। ছোটো প্রতিমা মিলিয় ১৫ টির মতো করেছি। ফলে চরম সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছি।আগামী দিনে কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।” তারউপর আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে অভাবের মধ‍্যেও ধীরে ধীরে কাজ ক‍রে চলছে মৃৎ শিল্পীরা। মৃন্ময়ী মুর্তির কাছে তাদের একটাই প্রার্থনা খুব দ্রুত এই অতিমারি থেকে সবাই রক্ষা পাক।

এর পাশাপাশি এলাকার মন্ডপ ব্যাবসায়ী, আলো ব্যাবসায়ী দের সাথে সঙ্গীত, নৃত্য ও চিত্র শিল্পীরাও ফাঁপরে পড়েছেন। এলাকার সঙ্গীত শিল্পী জুঁই, সম্পা, সুমনদের বক্তব্য প্রতিবছর এই রোডের বুকেই আমরা প্রত্যেকে প্রায় দশটি করে স্টেজ শো করে থাকি৷ এবছর একটাও বায়না নেই। চিত্রশিল্পীরা জানান, ” পুজোর মন্ডপ সাজানোর জন্য প্রতি বছরই ডাক পাই এবার কিন্তু কোনো ডাক পড়েনি। মন্ডপ ও আলো ব্যাবসায়ীদের বক্তব্য একইরকম। তারা জানান আলোর জন্য বায়না নেই। মন্ডপ যদিও বা কিছু বায়না পড়েছে তা খুবেই কম টাকার। কারন এবার প্র‍ত্যেক পুজো উদ্যোক্তাই মন্ডপ করছেন ছোটো মাপের।

আর পুজো উদ্যোক্তারা জানান, আসলে এবার এই অতিমারির জন্য একটানা তিন মাসেরও বেশী ব্যাবসা বন্ধ। তারপর যদিও বা টুকটাক ব্যাবসা শুরু হয়েছে তাতে লাভের মুখ দেখতে হয়নি। তারউপর প্রশাসনিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে করোনা ঠেকাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু পুজো জাকজমক করতে গেলেই তা আর বজায় থাকবে না। সেই কারনেই আমরা এবার নাম মাত্র পুজো করছি। আর এবার এই করোনার কারনে বিশ্বকর্মা পুজোয় চেনা ছন্দে থাকছেনা চন্দ্রকোনা রোড। নিভৃতচারে তাই চন্দ্রকোনা রোড বাসীর এবার বাবা বিশ্বকর্মার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন তাড়াতাড়ি আমাদের সকল কে এই অতিমারির হাত থেকে উদ্ধার করেন। তাহলে আগামী বছর ফের ছন্দে পাওয়া যাবে মেদিনীপুরের টাটাকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular