Homeএখন খবরপূর্ব মেদিনীপুরের ধ্বংসদীর্ন উপকূল বেয়ে সম্বল শুধু কান্নাই, ক্ষতির হিসাব মেলাতে লেগে...

পূর্ব মেদিনীপুরের ধ্বংসদীর্ন উপকূল বেয়ে সম্বল শুধু কান্নাই, ক্ষতির হিসাব মেলাতে লেগে যাবে সপ্তাহ ভর

নিজস্ব সংবাদদাতা: কে কাকে সান্তনা দেবে এখানে? কারও কিছুই নেই, সব শেষ হয়ে গেছে। রাত কেটেছিল ঝড় উপনিবেশ বা সাইক্লোন সেন্টারে। ভোরের আলো ফোটার আগেই ছুটে এসেছেন প্রিয় বসত ভূমিতে আর এসে দেখেছেন কোথাও কিছুই নেই। মাথার ওপরে ছাদ নেই, ধরে দাঁড়ানোর দেওয়াল নেই, পায়ের তলার মাটি গলে পাঁক হয়ে গেছে। গৃহপালিত পশু ছুটে গেছে কোথাও। দৌড়ে জমিতে গেছেন সেখানেও সব শেষ। পানের বরজ শেষ, ক্ষেতের চিনে বাদাম শেষ। সবজির ক্ষেত, ফলের বাগান, কিছুই নেই। পুকুরে, ভেড়িতে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে সমান হয়ে গেছে নদী আর বাড়ির জলাশয়,মাছ মিলিয়ে গেছে খালে বিলে সেচ নালায়। পড়ে আছে কান্না আর অনন্ত হাহাকার। মধ্য প্রজন্ম এ ক্ষতির পূরণ দেখে যেতে পারবে বলে মনে হয়না। সব মিলিয়ে এই হল পূর্ব মেদিনীপুর।

পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শঙ্করপুর, জলধা, তাজপুর, মন্দারমণি, রামনগর, কাঁথি, খেজুরি, হলদিয়া, নন্দীগ্রামের উপকূল জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। খেজুরী ব্লকের খেজুর কাউখালী ওয়াশীলচক, থানাবড়্যা, মেইদিনগর, পাঁচুড়িয়া, আজান বাড়ী, গোবিন্দ চক সহ গঙ্গা নদী বরাবর তোহানা পর্যন্ত সব গ্রাম ধুলিস্মাৎ।

উপকূল এলাকা ছাড়াও আমফান ধ্বংস চিহ্ন রেখে গেছে জেলার পটাশপুর, ভগবানপুর, নন্দকুমার,পাঁশকুড়া, কোলাঘাটের সর্বত্রই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা অবধি ক্ষয়ক্ষতির খুবই প্রাথমিক একটা রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই রিপোর্টই বলছে, জেলার ২৫ টি ব্লক এবং ৫ টি পুরসভার ৪০০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৪২৮ টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।প্রতিকূলতায় পড়েছেন জেলার ২২ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৯৭ জন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে দুর্গত ১ লক্ষ ৪৭২ জন মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে ৮০০ টি ত্রাণ শিবিরে।

আমফানের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।নিহতদের মধ্যে বুধবার সন্ধেয় ভগবানপুর ২ ব্লকের মুগবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ছবি শীটের মৃত্যু হয় বাড়ির ওপর গাছ চাপা পড়ে। আহত হন তাঁর ছেলেও। হলদিয়ার সুতাহাটার মহম্মদপুর গ্রামে ঝড়ের দাপটে টালির চালার ওপর গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই ভাইয়ের। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম রঞ্জিত সিং(১৮)ও প্রসেনজিৎ সিং (১৬)। এছাড়া হলদিয়ার এইচপিএল এর কাছে ১জন, দেউলপোতায় ১জন ও রামনগর ২নং ব্লকে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঝড়ে দাপটে।

জেলার হলদিয়া, নন্দীগ্রাম ও তমলুক এলাকার বহু মানুষ আহত হয়েছেন বাড়ির ওপর বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা গাছ ভেঙে পড়ার জন্য। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুতের কয়েক শো খুঁটি ভেঙে পড়ায় গোটা জেলাই বর্তমানে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে মোবাইলে টাওয়ার গুলিও বিপর্যস্ত পড়েছে যোগাযোগ মাধ্যমও। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে জমি থেকে ধান কাটার কাজ প্রায় শেষ হয়েছিল জেলাতে। তবুও যে ১০% শতাংশ ধান রয়ে গেছিল তা গিলে নিয়েছে আমফান । আর বাড়িতে যে ধান তোলা হয়েছিল বাড়ি ভেঙে গেলে তার কতটা রক্ষা পাবে তাও সন্দেহ।

ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পান, সবজি, বাদাম আর ফুল চাষে। জেলার ৬ হাজার হেক্টর জমির পান চাষ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার পানের বরোজ। ১৬হাজার হেক্টর জমির চিনে বাদাম পুরো শেষ। ২৫ হাজার হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি ধ্বংস হয়ে গেছে সবটাই। ফুল আর পাতাবাহারের গাছ খতম হয়ে গেছে ৯ হাজার হেক্টর জমির। জেলাতে প্রাথমিকভাবে চাষবাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করেছে জেলা কৃষি দপ্তর।

জেলার কাঁথি, শঙ্করপুর, জলধা,তাজপুর, খেজুরির সমুদ্রবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার সর্বত্র।যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ও রাস্তার ওপর ভেঙে পড়া গাছগুলি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে ভেঙেপড়া বিদ্যুতের খুঁটি গুলিও সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্ত এসবই খুবই প্রাথমিক হিসাব। পুরোপুরি হিসাব মেলাতে লেগে যাবে এক সপ্তাহ। এখন শুধু কান্নাই সম্বল।

RELATED ARTICLES

Most Popular