Homeএখন খবরওঝাই ইমারজেন্সি, তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে ওঝার কাছে গিয়ে মৃত্যু দাসপুরের...

ওঝাই ইমারজেন্সি, তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে ওঝার কাছে গিয়ে মৃত্যু দাসপুরের কিশোরীর

নিজস্ব সংবাদদাতা: কুসংস্কারের কালঘুম কাটেনি মানুষের তাই হাসপাতালের চেয়েও ওঝাতেই ভরসা বেশি। হাসপাতালে যাওয়ার আগে ওঝার বাড়ি ঘুরে যেতে গিয়ে প্রান দিল এক ১৪বছরের কিশোরী। পরিবারের চরম দায়িত্বহীনতার এই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার সোনামুই গ্রামে যার হাতের ৫কিলোমিটারের মধ্যেই খুকুড়দহ স্বাস্থ্য কেন্দ্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে সোনালী সামন্ত নামের পার্বতীপুর মকুন্দপুর হাইস্কুলের ওই ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু একটা কামড়ায় যখন সে বাড়িতে বাবা-মা’য়ের সঙ্গে শুয়েছিল। ঘুম থেকে ওঠার পর সোনালীকে তার বাবাকে জানায় তার পা জ্বালা জ্বালা করছে। বাড়ির লোক সোনালীকে নিয়ে যায় পাশের পার্ব্বতীপুর গ্রামে। বেশ কিছুক্ষন ঝাড়ফুঁক করার পর অভিজ্ঞ ওঝা যখন বুঝতে পারেন রুগী নেতিয়ে পড়ছে অথচ তিনি বুঝতেই পারছেননা কী কামড়েছে তাকে তখন বিষয়টি তার হাতের বাইরে বুঝতে পেরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। রুগীকে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানেই চিহ্নিত হয় কালাচ সাপ কামড়েছে সোনালীকে। পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু।

মৃত কিশোরীর বাবা নারায়ণ সামন্ত জানান, ‘একই বিছানায় আমরা শুয়ে ছিলাম। মেয়ে মোবাইল দেখছিল। তারপর ঘুমিয়ে পড়তে বলি। পাশফিরে শুতেই মেয়ে বলে, বাবা কিসে কামড়ে দিল। নারায়ণ বলেন, এরপর গোটা বিছানা উল্টে পাল্টে দেখি। কোথাও কিছু দেখতে পাইনি। তবুও সাপের কামড় কিনা নিশ্চিত হতে পার্ব্বতীপুর গ্রামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যায়। ওঝা দেখে বলেন, সাপে কেটেছে বলে মনে হয়নি। তবুও শিকড়-বাকড় খাইয়ে ঝাড়ফুঁক করেন আমাদের অনুরোধে।”

আফসোস করে সামন্ত জানান, “এর পর আমারা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসি। মেয়ে জানায় প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে। রাতেই একটি গাড়ি করে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা জানান, অনেক দেরি হয়ে গেছে। মৃত কিশোরীর বাবা বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন আর কিছু করার নেই। তবুও মেয়েকে নিয়ে তমলুক হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা দেখে বলেন মারা গেছে। পরে জানলাম সাপেই কামড়ে ছিল। প্রথমেই হাসপাতাল নিয়ে গেলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না।”

ওঝা নিমাই মান্না জানান, “আমার বাড়িতে ওরা এল। আমি ওঁদের জানাই এখন আমি হার্টের রোগী। এখন আর দেখতে পারবো না। তাও ওদের অনুরোধে দেখি। আমি একটু দেখার পর ওদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।” মান্না আরও জানান,”প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই কাজ করতাম। তবে এখন হার্টের সমস্যার জন্য আর ওসব করিনা। তবুও অনেক মানুষ চলে আসেন। জোর করেন। আমি বলে দিয়েছি আমার কাছে কেউনা যেন আসেন।”

সর্পবিশারদদের বক্তব্য কালাচ সাপ কামড়ালে অধিকাংশ সময়ই ক্ষত দেখে বোঝাই যায়না যদি না সাপটিকে দেখা যায়। বিষ অত্যন্ত দেরিতে ওঠে কিন্তু সময়মত চিকিৎসকের কাছে না পৌঁছালে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। গ্রামে গঞ্জে কালাচের প্রাদুর্ভাবই বেশি। কোনো কিছু কামড়েছে, অনেক ধরে জ্বালা করছে অথচ কামড়ের চিহ্ন নেই এটাই কালাচের লক্ষন।

RELATED ARTICLES

Most Popular