Homeএখন খবরকরোনা নয় ক্যানসার, তবুও মৃতদেহ সৎকারে বাধা তৃনমূল নেতার ,শ্মশান ফেলে বাড়ির...

করোনা নয় ক্যানসার, তবুও মৃতদেহ সৎকারে বাধা তৃনমূল নেতার ,শ্মশান ফেলে বাড়ির ছাদেই পোড়ানোর সিদ্ধান্ত, পুলিশের হস্তক্ষেপে মিটল সমস্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা: টানা ২৪ঘন্টা মৃতদেহ নিয়ে টানা পোড়েন চলল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে। একবার গোবিন্দপুরের শ্মশান, ফের দামোদরপুরের ফাঁকা মাঠ, কিন্তু কোথাও ঠাঁই মেলেনি ৭৬ বছর বয়সী ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মৃত রতন প্রামানিকের। কারন তৃনমূল নেতার দাপট। বাধ্য হয়ে বাড়ির ছাদেই মৃতদেহ সৎকারের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। চিতা সাজানো প্রস্তুত হয়ে যায়। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ছুটে আসে পুলিশ। এ যাত্রায় মহা লজ্জার হাত থেকে বেঁচে যায় বাংলা।

গোবিন্দপুর গ্রামে রতন মারা গেছিলেন শনিবার বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ। রতনের ছেলে অসিত শুক্রবারই দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন সপরিবারে, বাবা সঙ্কটাপন্ন খবর পেয়ে। যেহেতু দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন তাই পাশের গ্রাম দামোদরপুরে নিজেদেরই আরেকটি বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে ছেলে চলে আসেন গোবিন্দপুরে। শুরু হয়ে যায় শেষ যাত্রার প্রস্তুতি। সন্ধ্যা নাগাদ গোবিন্দপুর শ্মশানে আসে মৃতদেহ। চিতা প্রস্তুত হয় কিন্তু অমন সময় পৌঁছে যান দাসপুর থানার সরবেড়িয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র সামন্ত।

নিজে দলের সভাপতি তার ওপর স্ত্রী জয়তী সামন্ত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, হাজির হন বুথের তৃনমুল নেতা তারাপদ ভূঞ্যা। তাঁদের দাবি যেহেতু অসিত দিল্লি থেকে এসেছে তাই করোনা আক্রান্ত। গ্রামের শ্মশানে দাহ করা চলবেনা। দাহ করলে সবাইকে পুলিশ ডাকিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হবে। বহু কাকুতি মিনতির পরও তৃনমূল নেতারা না মানায়। চিতা থেকে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দামোদরপুর সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে কিন্তু সেখানেও বাধা পড়ে।

তৃনমূল নেতাদের পরামর্শে এবার বাধা দিতে আসে কিছু গ্রামবাসী। এরপরই মৃতদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।
রবিবার সকালে রতনের পরিবারের লোকেরা তৃনমূল নেতাদের কাছে ফের পরামর্শ চাইলে নেতাদের পরিস্কার বক্তব্য, মৃতদেহ কোথাও দাহ করতে দেওয়া হবেনা, দরকার হলে তোমরা বাড়ির ছাদে পোড়াও। তৃনমূল নেতাদের এই হুমকির ভাষাতেই পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তাই হবে! বাড়ির ছাদেই পোড়ানো হবে মৃতদেহ। এরপর ঘরের ছাদে তিন ফুট উচ্চতায় ইট থাকিয়ে তার উপর দুই অটো বালি ছড়িয়ে তৈরী করা হয় রতন প্রমানিকের চিতা। এদিকে খবর পেয়েই ছুটে আসেন ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী। তৃনমূল নেতাদের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ফের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোবিন্দপুর শ্মশানে। সেখানেই শেষ অবধি দাহকার্য্য সম্পন্ন হয়। ঘটনার অবশ্য তীব্র নিন্দা করেছেন দাসপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃনমূল নেতা সুনীল ভৌমিক। ভৌমিক বলেন, অত্যন্ত নাক্কারজনক ঘটনা কেন স্থানীয় ওই নেতা এই কাজ করলেন খোঁজ নিয়ে দেখছি।

কিন্তু কেন তৃনমূল নেতাদের এই আচরন? গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন গ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মধু রাউৎ ও শ্যাম মাইতি প্রথমে মৃতদেহ দাহ করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই গ্রামবাসীরা মৃতদেহ সৎকারে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র সামন্তদের উদ্দেশ্য ছিল অন্য। দিল্লি ফেরৎ অসিত সামন্ত সোনার কারিগর আর মোটা টাকার মালিকের কাছ থেকে চাপ দিয়ে টাকা খসানোই ছিল আসল উদ্দেশ্য। এলাকায় এরকম চাপ তৈরি করে চুপি সারে তোলা আদায়ের নাকি সুনামও রয়েছে ওই অভিযুক্ত তৃনমূল নেতাদের।

RELATED ARTICLES

Most Popular