Homeএখন খবররোগির ভরসা খাটিয়াই, ছাত্রের ভরসা গামছা, বাম আমলে শেষবার মোরাম দেখেছে ডেবরার...

রোগির ভরসা খাটিয়াই, ছাত্রের ভরসা গামছা, বাম আমলে শেষবার মোরাম দেখেছে ডেবরার চার মৌজার ১২ পাড়ার মানুষ

শশাঙ্ক প্রধান : ১০/১২ বছরের ছেলেরা নাকি মোরাম কাকে বলে চোখেই দেখেনি। মোরামের রাস্তা দেখতে হলে তাঁদেরকে টেবাগেড়িয়া কিংবা সাকিরদা যেতে হয়। ৫কিলোমিটার মাটির কাদা মাখা মোরামের রাস্তা দেখে তারা ফিরে এসে অন্য ছেলে মেয়েদের কাছে গল্প করে, “মোরাম হল লাল লাল ছোট ছোট পাথরের গুটি, রাস্তায় মোরাম থাকলে রাস্তায় কাদা হয়না, আ্যম্বুলেন্স, মারুতি, টাটা সুমো সাঁই সাঁই করে ছুটে।”

মুশকিল হচ্ছে এরপর আবার ওই ছেলে মেয়েদের আ্যম্বুলেন্স কাকে বলে সেটাও শেখাতে হয় কারন যারা চোখে মোরাম দেখেনি তারা আ্যম্বুলেন্স দেখবে কী করে? তাঁদের আ্যম্বুলেন্স তো দড়ির খাটিয়া! রোগিকে সেই খাটিয়ায় শুইয়ে চারজন কিংবা ছ’জন মিলে নিয়ে আসতে হয় ৬ কিমি দুরে নদীর পাড়ে তারপর নদী পার করে মেলে গাড়ি। “ওই ৬ কিমি রাস্তায় আ্যম্বুলেন্স, মারুতি ভ্যান তো একটা তিন চাকার ভ্যান রিকশা যেতে চায়না। কৃষকদের ক্ষেতের ফসল বাজারে বিক্রি করতে হলে সাইকেলের মাঝখানে বস্তা গলিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। ক্ষেতের জন্য বাজার থেকে সার নিয়ে আসতে হয় ওই একই ভাবে। রিকশা তো দুরের কথা বৃষ্টি হলে বাইক চলেনা।” জানালেন আয়মা মধুয়া গ্রামের ডঃ মৃনাল নন্দী।

ডাক্তার বাবু থাকেন মেদিনীপুর শহরে, রবীন্দ্রনগরে প্র্যাকটিস করেন। ফি সপ্তাহে গ্রামে আসেন নিজের মাতৃভূমির ঋণ শোধ করতে, চিকিৎসা পরিষেবা দিতে। ডাক্তারবাবু জানালেন, “ইচ্ছে ছিল গ্রামে থেকেই মেদিনীপুর শহরে প্র্যাকটিস করব আর বাকি সময়টা এই এলাকায় দাতব্য চিকিৎসা করব কিন্তু ওই রাস্তাই বাধ্য করেছে শহরে থাকতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকলে আমূল বদলে যেত মানুষগুলোর জীবন।”

চারটে পাড়া। ভরতপুর সমাজ পাতা, আয়মা কলন্দর, আয়মা মধুয়া, সাকিরদা। দুটি বুথ, ছোট বড় ১২/১৪টি পাড়া। জনসংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এলাকার মানুষ ব্রয়লার ফার্ম, মাছ চাষ কিছুই করতে পারেনা কারন গাড়ি না ঢুকলে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে আসবে কিসে? রোগির যেমন ভরসা খাটিয়া, বর্ষা কালে ছাত্রের ভরসা তেমনি গামছা। ছেলে মেয়েরা ভগীরথপুর হাই স্কুলে পড়ে। বর্ষাকালে তারা গামছা পরতে হয়, স্কুলে গিয়ে পোশাক পরে। ছাত্রীরা কী করে? প্রশ্ন করাও বিড়ম্বনা।

ডাক্তার নন্দী বলেন, “স্বাধীনতার আগের যুগে পড়ে রয়েছি আমরা। শুধু আমি নই, আমার মত বহু মানুষ যাঁরা সামর্থ্যবান, গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছেন। আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব আসেনা। মেয়েদের বিয়ে দিলে বাপের বাড়ি ভুলে যায় আর ছেলেরা বিয়ে করলে শ্বশুরবাড়ির রাস্তা। গত ৪০ বছরে এই রাস্তায় মোরাম পড়েনি। যদি পড়ে থাকে বলে কেউ দাবি করেন তবে তা খাতায় কলমে।”
মানুষ জনের বক্তব্য, রাস্তার যা কাজ হয়েছে তা বাম আমলে। তারপর কোনও কোনও জায়গায় ইট ফেলা হয়েছিল কিন্তু পুরো রাস্তার কোনোও সংস্কার হয়নি। কেন এমন অবস্থা?

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শক্তিপদ মুর্মুর দাবি, “আমি বিরোধী দলের, বিজেপি থেকে জিতেছি। আমাকে জিতিয়েছেন মানুষ তাই শাস্তি পেতে হচ্ছে তাঁদের।” ভরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জুলফিকার আলি অবশ্য বলছেন, “আমাদের যেটুকু অংশ আমরা কাজ করেছি বাকি অংশ মলীঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের। ওই অংশের কথা বলতে পারবনা।”
ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অলোক আচার্য্য বলেছেন,”একেবারে কাজ হয়নি কথাটা ঠিক নয়। মোরাম ছড়ানো হয়েছিল একবার। সরকার মোরামের রাস্তা করার বিরোধী তাও করা হয়েছিল। প্রধানের তহবিলের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতিও কিছু টাকা দিয়েছিল। তবে ওই ৫.৯কিলোমিটার রাস্তা প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার আওতায় চলে আসবে মাস খানেকের মধ্যেই। পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে।”

আশায় বুক বাঁধছেন এলাকার মানুষ। এর আগে বিডিও, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে সর্বস্তরে আবেদন নিবেদন করেছেন তাঁরা। ডঃ নন্দীও ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, ” যদি রাস্তাটা হয়ে যায় তাহলে বদলে যাবে ওই গ্রাম গুলোর ভূগোল। একটা রাস্তা যে একটা সমাজকে কতটা পিছিয়ে দিতে পারে তার প্রমান এই এলাকা। সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাইছি আমরা। যেভাবেই হোক রাস্তাটা করার উদ্যোগ নেওয়া হোক এটুকুই শুধু চাওয়া।” আপনার এলাকায় আছে এমন কোনও সমস্যা? জানাতে পারেন আমাদের। আমাদের প্রতিনিধি গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রকাশ করবে সেই সংবাদ।

RELATED ARTICLES

Most Popular