Homeএখন খবরবৈভবের দখল মুক্ত করে যাওয়া ডেবরার সরকারি জায়গায় তৈরি হচ্ছে শৈশবের খেলাঘর

বৈভবের দখল মুক্ত করে যাওয়া ডেবরার সরকারি জায়গায় তৈরি হচ্ছে শৈশবের খেলাঘর

Icds নির্মাণ কাজে তদারকি স্বয়ং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান

শশাঙ্ক প্রধান : বছর খানেক আগে সংবাদমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছিল একটি ভালো লাগা দৃশ্য। দিনের পর দিন অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তির সরকারি জায়গা দখল করে রাখার ঘটনা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া মানুষ দেখেছিলেন সেই দখল হওয়া জায়গা মুক্ত করতে রাস্তায় নেমেছিলেন খড়গপুরের তৎকালীন মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার অন্তর্গত বালিচক-ডেবরা রাজ্য সড়কের ওপরে আলিশাগড়ে রাজ্যের ভূমি এবং ভূমিসংস্কার দপ্তরের সেই জমিতে হওয়ার কথা ছিল একটি অঙ্গনওয়াড়ি অথবা ICDS সেন্টার। কিন্তু বাধ সেধেছিলেন একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী। জোর করে সেই জায়গায় ফেলে রেখেছিলেন ইমারত সামগ্রী। স্থানীয় শাসকদলের একাংশের মদতে ওই ব্যবসায়ীর এতটাই স্পর্ধা বেড়েছিল যে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া বেড়া উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে শাসকদলের স্থানীয় একটি অংশের মদত এই ব্যবসায়ীর পেছনে এতটাই ছিল যে এই দখলদারির অনিয়ম স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হজম করতে হয়েছিল নির্বাচিত গ্রাম প্রধানকে।  অবশেষে বৈভব চৌধুরীরউদ্যোগে দখলি মুক্ত সেই জায়গায় শুরু হয়েছে ICDS কেন্দ্র নির্মাণের কাজ।

বৈভব চৌধুরী

স্থানীয় ৫/২ ডেবরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রেখা হুই জানিয়েছেন, ” আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ১৮ট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্র অপরের জায়গায়, ভাঙা বাড়ি কিংবা গাছ তলায় চালাতে হয়। সেগুলোকে সরকারি জায়গায় নিয়ে এসে নিজস্ব ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এরই একটি এই আলিশাগড় কেন্দ্রটি। স্থানীয় সেরিকালচার দপ্তরের ভাঙা ভবনে বিপজ্জনক অবস্থায় চলছে এটি। সেটির ভবন তৈরির কাজ আটকে গেছিল। যা কিনা শেষ অবধি প্রাক্তন মহকুমা শাসক বৈভব স্যারের উদ্যোগে দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা সেই নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছি।”

জানা গেছে মোট ৫ ডেসিমেল এই জায়গার একটি অংশে একটি হলঘর, রান্নাঘর ও শৌচালয় তৈরির পাশাপাশি শিশুদের জন্য খেলাধুলার একটি পার্ক তৈরি করা হবে। বাকি অংশে গাছ লাগানো হবে সবুজায়নের উদ্দেশ্যে। বর্তমানে মা এবং শিশু মিলিয়ে প্রায় ৫০জন এখান থেকে পৌষ্টিক আহার, প্রাথমিক অক্ষর জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক ইত্যাদির সুযোগ পেয়ে থাকেন। গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত ৮টি কেন্দ্রের মধ্যে এই নিয়ে মোট ৬টি কেন্দ্রের কাজ শুরু করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ২টির কিছু জমি সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা খুশি এই সমস্যা কেটে যাওয়ার। তাঁদের মতে বৈভব চৌধুরীর সেই উদ্যোগ দৃষ্টান্তমূলক যা অন্য আধিকারিকদেরও অনুসরণ করা উচিৎ। সরকারের জায়গা এভাবে দখল করে রেখেছে বহুমানুষ। গরিব মানুষ হলে তাঁকে সহজেই উচ্ছেদ করে দেওয়া যায় কিন্তু পকেটে টাকা আর পেছনে নেতা থাকলে কীভাবে সরকারকে ঘোল খাওয়ানো যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই আলিশাগড়ের ঘটনা। ওই ব্যবসায়ী সরকারি নথির জটিলতাকে ব্যবহার করে এমনই ফাঁক তৈরি করে রাখে যে পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এই দখল মুক্তির কোনও উদ্যোগই নিতে পারছিলনা।

অবস্থা এতটাই করুন হয়েছিল যে খোদ বিএলএলআরও খুঁজে পাচ্ছিলেন না নিজের দপ্তরের জায়গা। স্থানীয় বিধায়ক, বিডিও কিংবা থানা এগিয়ে আসতে পারেননি শিশুদের জন্য প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পটি রূপায়নের তাগিদ নিয়ে। এরপরই রাস্তায় নামেন মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরী। মানুষ চান নেতা আর টাকার ফাঁদে গ্রাস হয়ে যাওয়া সরকারের জায়গা এভাবেই মুক্ত করুন সরকারি আধিকারিকরা। শেষ অবধি অবশ্য জায়গার দখল রাখতে লড়ে গেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। দ্বারস্থ হন ডেবরার নব নির্বাচিত বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরী শিক্ষা উন্নয়ন মন্ত্রী হুমায়ুন কবিররের। মন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দেন জায়গার প্রকৃত মালিকানা খতিয়ে দেখে যেন নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় পুলিশ। এরপরই হাল ছাড়তে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী।

RELATED ARTICLES

Most Popular