Homeএখন খবরজ্বর ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যু, চাঞ্চল্য ডেবরায়, ১৩ ঘন্টা পর মৃতদেহ সরালো পুলিশ,...

জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যু, চাঞ্চল্য ডেবরায়, ১৩ ঘন্টা পর মৃতদেহ সরালো পুলিশ, কোভিড পরীক্ষার পরই দেহ পাবে পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা: ৫১ বছর বয়সী এক পোস্ট মাস্টারের তিনদিনের জ্বরে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য ছড়ালো পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার বাকলসা সেবকরাম গ্রামে। ইংরেজি হিসাবে শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির এরপর বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ পুলিশ ও স্বাস্থ্যদপ্তরের লোকেরা এসে দেহ নিয়ে যায় মেদিনীপুর শহরে। গোটা ঘটনায় এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে মৃত্যুর আগে ও পরে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ায়নি পাড়া প্রতিবেশীরা।

পরিবারের অভিযোগ অবস্থা সঙ্কটজনক হলে শুক্রবার রাত ১০ টা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও আ্যম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। রাত ১টা নাগাদ এক আত্মীয়ের একটি আ্যম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় ২০কিলোমিটার দূর থেকে কিন্তু ততক্ষনে পোষ্ট মাস্টারকে আর নিয়ে যাওয়ার মত সময় ছিলনা। পরিবারের সদস্যরা আফসোস করে বলেছেন, রাত ১০ টা থেকে আশেপাশের ৫/৬টি আ্যম্বুলেন্স মালিককে খবর দেওয়া হলেও করোনা আতঙ্কে কেউই আসতে রাজি হয়নি ফলে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরের ২০ মিনিটের রাস্তা ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির নাম শুভেন্দু কুমার মাইতি। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর ডাকঘরে মাত্র তিনদিন আগে অন্য একটি ডাকঘর থেকে বদলি হয়েছিলেন তিনি। নতুন ডাকঘরে বদলি হওয়ার আগে ১০দিনের ছুটি পেয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই ছুটির সময় শুভেন্দু সহ যৌথ পরিবারের ১০ সদস্যের প্রায় প্রত্যেকেরই জ্বর হয়েছিল। শুভেন্দুর বড়দা দীপক মাইতি হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করেন। তাঁরই ওষুধ খেয়ে সবার জ্বর ভাল হয়ে যায়। ১৪ই জুলাই নতুন কাজের জায়গায় যোগ দেন শুভেন্দু ১৬ তারিখ ফের জ্বর আসায় কাজ করতে পারেননি বেশিক্ষন। সহকর্মীর হাতে অফিসের চাবি দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

শুভেন্দুর শ্যালক উৎপল মাইতি বলেন,’ বৃহস্পতিবার বিকালেই জামাইবাবুকে স্থানীয় এমবিবিএস ডাক্তার অরবিন্দ দাসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। উনি ওষুধ দেন এবং বাড়িতে থাকতে বলেন। রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা করতেও বলেন। শুক্রবার রক্তের নমুনা দেওয়ার সময় থেকেই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। জামাইবাবুর আ্যজমা ছিল।  শ্বাসকষ্ট প্রবল হয়ে যায়। আমরা ডাক্তারবাবুকে ফোন করি উনি অক্সিজেন দিতে বলেন। স্থানীয় এক জায়গা থেকে জোগাড় করে অক্সিজেন চালু করা হয় কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেই অক্সিজেন কম ছিল।’

উৎপল জানান, ‘ফের অক্সিজেন জোগাড় করে দিতে দিতে অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে এই অবস্থায় আমরা হাসপাতাল বা নার্সিং হোম কোথাও একটা নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু রাত ১০টা থেকে ১টা অবধি আমাদের কাছে যত নম্বর ছিল ডায়াল করে গেছি কোনও আ্যম্বুলেন্স রাজি হয়নি জ্বর আর শ্বাসকষ্ট শুনে। অবশেষে নিজেদের এক আত্মীয়কে বলে তাঁর গাড়ি আনতে বলা হয়। দাসপুর থানার খুকুড়দহ থেকে সেই আ্যম্বুলেন্স যখন এসে পৌঁছায় রাত ১টার সময় তখন প্রায় অবস্থা। দেড়টার সময় মারা যান তিনি। যদিও মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কোনও ডাক্তার আসেনি।’

পরের ঘটনা আরও খারাপ। রাত দেড়টা নাগাদই সিভিক ভলান্টিয়ার, আশাকর্মী, থানায় ফোন করা হলেও সবাই সকাল অবধি অপেক্ষা করতে বলেছে। সকাল থেকেও সেইএকই অবস্থা। আসছি আসব করে পুলিশ আসেনি। সিভিক ভলান্টিয়ার দূর থেকেই দেখে চলে গেছে বলে অভিযোগ। পরিবারের অভিযোগ পুলিশ যতই গড়িমসি করেছে এলাকার মানুষের মধ্যে ততই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অবশেষে সাড়ে তিনটা নাগাদ সিভিক আর ডোম সহ মেদিনীপুরের একটি গাড়িতে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের কয়েকজনের মধ্যে ফের জ্বরের উপসর্গ রয়েছে। পরিবারের সবাইকেই নমুনা দিতে রবিবার ডেবরা হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়ে দিয়ে গেছে, মৃতের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই পরিবার দেহ পাবে।

পুলিশ জানিয়েছে, পুরো পরিস্থিতিটাই পুলিশের কাছে নতুন। তাঁরা বিডিও, জেলা প্রশাসন সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করেছে, ফলে সময় লেগেছে। পরিবারের দাবি নিকট আত্মীয়ের বিয়োগের পাশাপাশি চরম আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদেরও আর তার সঙ্গে স্থানীয় মানুষদের প্রায় বয়কটের মুখে পড়ে রয়েছেন তাঁরা। অতিদ্রুত সন্দেহ নিরসন করে তাঁদের এই মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্ত দেওয়া হোক।
উৎপল বলেছেন, ”জামাইবাবু মারা গেছেন তাঁর বৃদ্ধা মা, ১৯ ও ১১ বছরের দুই সন্তান, আমার দিদি কেউই এখনও কাঁদার মত অবস্থাতেই নেই। এখনো কোনো পরীক্ষাই হয়নি অথচ করোনা করোনা বলে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরাও সন্দেহ নিরসন হতে চাই কিন্তু সেই ফল আসা অবধি সবাই আমাদের দয়া করুন। আমাদের একটু কান্নার সুযোগ করে দিন।”

RELATED ARTICLES

Most Popular