Homeএখন খবরলোকাল ট্রেন চালু হবে, একশ হকার কে ব্যবসা শুরু করার পুঁজি তুলে...

লোকাল ট্রেন চালু হবে, একশ হকার কে ব্যবসা শুরু করার পুঁজি তুলে দিলেন রাধামোহনপুরের অধ্যাপক

A professor from Radhamohanpur of Paschim Medinipur donated Rs 1 lakh to 100 local train hawkers to start a new business.This 100 hawkers of Radhamohanpur, balichak and Duan(Kharagpur-Howrah) lost everything in the lockdown and couldn't figure out how to start a business again. They thanked Professor Arun Maiti with tears in their eyes. The train will resume from wednesday.

নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার থেকে চালু হচ্ছে লোকাল ট্রেন আর সেই ট্রেনের ভরসায় শুধু যাত্রীরা নয় আছেন হাজার হাজার হকার। করোনা পরিস্থিতি আর লকডাউনে যাঁদের অবস্থা করুন হয়ে পড়েছে। পুঁজি শেষ হয়ে গিয়ে ঘটি বাটি সর্বস্ব বিক্রি হয়ে গেছে সংসার চালাতে। এমন অবস্থায় নতুন করে তাঁরা ব্যবসা শুরু করবেন কী করে? এমন কয়েকটি স্টেশনের হকারদের ব্যবসা চালানোর কিছু পুঁজি তুলে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার রাধামোহনপুরের এক মাস্টারমশাই অরুন মাইতি। শনিবার প্রায় ১০০জন হকারকে ১ হাজার টাকা করে তুলে দিলেন তিনি।

অরুন মাইতি বর্তমানে হাওড়া জেলার শ্যামপুর কলেজের অঙ্কের অধ্যাপক। তাঁর আগে ২০০৫ অবধি শিক্ষকতা করেছেন রাধামোহনপুর হাই স্কুলে। ডেবরা থানার উত্তর প্রান্তে বসন্তপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা মাস্টারমশাই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন রাধামোহনপুরেই। অকৃতদার মানুষটির আজীবন সেবাকর্মে যেন আবৃত হয়ে আছে তাঁকে ঘিরে থাকা অজস্র মানুষ। দু’পর্যায়ে ৭০টি উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াকে বিনে পয়সায় টিউশন পড়ান তিনি। গত শীতের মরশুমে ১০০জন দুঃস্থ বয়স্ক মানুষকে দিয়েছেন ১টি করে প্রমান সাইজের জুতসুই কম্বল। তাঁর এই উষ্ণতা বিলিতে আপ্লুত তাঁরা।

অধ্যাপক মাইতির এই দায়বদ্ধতা এখানেই থেমে নেই রাধামোহনপুর, বিক্রমপুর, গার্লস ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি বা ল্যাব তৈরিতে সাহায্য করতে কখনও ১লাখ, কখনও বা তিন লাখ টাকা অবধি দান করেছেন। এছাড়াও রয়েছে দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো, চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করছেন এমন দুঃস্থ পড়ুয়াদের নিয়মিত স্টাইপেন প্রদান ইত্যাদি। নিরন্তর মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষটি ফের আরেকটি উদ্যোগে এগিয়ে যাবেন তাতে হয়ত আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই কিন্তু অবাক হতে হয় তাঁর ভাবনায়। ঠিক এই মুহূর্তে যে হকারদের এই সাহায্য দরকার তা তাঁর মত করে কজন ভাবতে পেরেছেন?

অরুন মাইতি জানান, ‘এই মানুষদের আমার হয়ত আরও একটু আগেই সাহায্য করা উচিৎ ছিল কিন্তু যে সময়ে লকডাউন শুরু হয় সেই সময় আমি আমার এক ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে আটকে পড়ি। ফেরা হয়নি কয়েক মাস। ফিরে আসার পর থেকেই ভাবছিলাম এঁদের পাশে কী ভাবে দাঁড়াতে পারি? তারপরই এই ভাবনাটা মাথায় আসে। ভাবলাম নতুন করে ব্যবসা শুরু করার জন্য একটু পুঁজি তুলে দেই।”
রাধামোহনপুর স্টেশন লাগোয়া বাস অধ্যাপক মাইতির। কলেজ যাতায়ত ট্রেনেই তাই অগনিত অ-ছাত্রেরও ‘স্যার’ তিনি। তাঁদের কেউ ঝালমুড়ি, কেউ সন্দেশ, চপ, রুমাল, সেফটিপিন, ডাব ফেরি করে বেড়ান লোকাল ট্রেনের কামরায় কামরায়। প্রতিদিন যাঁদের নিজের সহযাত্রী বলেই মনে করেন তিনি। সেই সহযাত্রীদের মুখে হাসি ফিরিয়ে দিতে এই প্রচেষ্টা। অধ্যাপক মাইতি জানান, ‘এখুনি ওঁরা হকারি করার সুযোগ পাবেন কিনা জানা নেই কিন্তু কয়েকদিন পরে হলেও তো ব্যবসা শুরু করতেই হবে। তাই এইটুকু করা। আমি গোটা কয়েক স্টেশনের (বালিচক, রাধামোহনপুর, ডুঁয়া) ভাইদের জন্য কিছুটা করেছি কিন্তু আরও কত স্টেশনের এরকম মানুষ রয়ে গেছেন!’

এই অভাবনীয় ভাবনায় আপ্লুত হকাররা। চোখের জল ঝরিয়ে এক মধ্য বয়স্ক হকার বিনোদ বেরা (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, “আমরা আগে থেকে জানতাম যে স্যার একজন মহৎ মানুষ। ওনার দান ধ্যানের কথা আগেও শুনেছি। ট্রেনের কামরায় উনি আমাদের কোনও দিন হকার নয় ভাই হিসাবেই দেখেছেন। আজ বুঝলাম শুধু ভালো মানুষ নয় উনি দেবতা। এই অবস্থায় যে ভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন তাতে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব আমরা।”

রাধামোহনপুরের বিশিষ্ট শিক্ষক দুরন্ত কুমার দাস জানিয়েছে, ” আমরা রাধামোহনপুর বাসীরা গর্বিত এমন একজন মানুষ আমাদের এলাকায় থাকেন যা সবারই আদর্শ। উনি বড় শহরের অনেক ভালো ভালো কলেজে অধ্যাপনার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু ওনার কলেজের পড়ুয়ারা, অভিভাবকরা ওনাকে যেতে দেননি। একজন স্কুল শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা, অভিবাকরা যেতে দেননা শোনা যায় কিন্তু একজন কলেজ শিক্ষককেও যদি সেই এলাকার বাসিন্দারা যখন নিজের জায়গায় আটকে রাখেন তখন বুঝতে তখন বোঝা যায় কী পরিমাণ ভালবাসা, শ্রদ্ধা থাকে মানুষটির প্রতি। আমি শুনেছি ওই কলেজের গনিত বিভাগটিকে নিজের হাতে তৈরি করেছেন উনি। আমরা গর্বিত ওনার জন্য।”

RELATED ARTICLES

Most Popular