Homeএখন খবর২ বছর ধরে মরচে পড়ছে বোর্ডে, রাস্তার নামগন্ধ নেই, বছর ভর কাদা...

২ বছর ধরে মরচে পড়ছে বোর্ডে, রাস্তার নামগন্ধ নেই, বছর ভর কাদা ভাঙে ডেবরার আষাঢ়ি থেকে হিজলদা

নিজস্ব সংবাদদাতা: কে এমন সখের নাম রেখেছিল আজ আর কারও জানা নেই তবে আষাঢ় মাস ছাড়াও বৃষ্টি হলে হাড়ে হাড়ে নামের মর্ম টের পায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার আষাঢ়ি থেকে হিজলদা অবধি প্রায় ৪কিলোমিটার রাস্তার ৮ থেকে ১০টি গ্রামের মানুষ। বর্ষাকালে তো কথাই নেই, কোথাও গোড়ালি তো কোথাও হাঁটু অবধি কাদা নিয়ে পথ হাঁটে খাসবাজার, দ্বারপাড়া, চক্কুধাব, ঘোষপুর, কাটাপাল, পিপুরদা, শীতলানন্দপুর, জোতকানু,বিষ্ণুপুর, হিজলদা।

রাস্তার একদিকে ৬নম্বর জাতীয় সড়ক, যেখান দিয়ে মানুষকে যেতে হয় কলেজ, হাসপাতাল, থানা, বিডিও অফিস। অন্যদিকে হাউর রেল স্টেশন। ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজ, গৃহস্থের হাট বাজার, অফিস আদালত, রোগীর হাসপাতাল যার যা কিছু দরকার মেটাতে গিয়ে চোখের জল আর নাকের জল ভরসা। মানুষের এই কান্নার মধ্যেও দাঁত বের করে হাসে মরচে ধরা বোর্ড যার গায়ে লেখা, ওই রাস্তা বাবদ কাজ শুরু হওয়া আর শেষ হওয়ার দিন, বরাদ্দ টাকা। যা বোর্ড হয়েই থেকে গেছে, রাস্তা আর হয়নি।

জানা গেছে দু’বছর আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি জন্য ২ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৮ সালে কাজ শুরু হওয়া আর শেষ হওয়ার কথা ছিল জুলাই, ২০১৯। কাজ শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শুরুতে সেই যে থেমে ছিল তারপর আর এগুয়নি। কিছু দিনের মধ্যেই কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যান ঠিকাদার। এরপর বহু আবেদন নিবেদন, তদবির করেছেন গ্রামের মানুষজন কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই। ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। যে কোনও দিন বিস্ফোরনের অপেক্ষায়।

দ্বারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহন মন্ডল যিনি একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষক জানালেন, “কি কারনে এই রাস্তা নির্মাণের কাজ থেমে গেল জানিনা কিন্তু কারন যাইহোক না কেন তা মিটিয়ে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিতে কাউকে দেখছিনা সে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের আধিকারিক যেই হোকনা কেন। ফলে ভয়ঙ্কর নরক যন্ত্রনায় রয়েছি আমরা। রাস্তা ব্যবহার করেন প্রায় ১০হাজার মানুষ যাঁদের জন্য কোনোও সরকার আছে মনে হয়না।”

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার চক্কুধাব, বিষ্ণুপুর, ঘোষপুরে তিনটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল রয়েছে, রয়েছে একাধিক প্রাথমিক স্কুল, দ্বারপাড়া গ্রামে রয়েছে রেশন দোকান। গ্রামের ভেতরেই এই স্কুল বা রেশন দোকানের সুবিধা নিতে গেলে মানুষকে জল কাদা ভাঙতে হয়। অন্যদিকে গ্রামের বাইরে যেতে হলে তো কথাই নেই।
হিজলদা গ্রামের বাসিন্দা চিন্ময় মহাপাত্র যিনি ঘোষপুর বাজারে একটি মোটর বাইক মেরামতের দোকান চালান, বললেন, “যদি এই গ্রামের মধ্যে কোনও সঙ্কটাপন্ন রোগি থাকেন তবে তিনি ঘরেই মারা যাবেন কারন এ রাস্তা দিয়ে কোনও আ্যম্বুলেন্স বা চারচাকা গাড়ি ঢুকতে চায়না।”

ডেবরার বিডিও পিন্টু কুমার ঘরামী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনার রাস্তা সাধারণত জেলাপরিষদ থেকে দেখভাল হয়ে থাকে। ঠিক কী কারনে রাস্তার কাজ বন্ধ তা আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’ ডেবরার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অলোক আচার্য্য বলেন, ‘কাজ শুরুর সময় রাস্তার পাশের গাছ কাটা ও মাটি ফেলা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তা এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। শুধু মাত্র ঠিকাদারের গাফিলতিতে রাস্তার কাজ বন্ধ আছে। বিষয়টি জেলাপরিষদ কর্মাধ্যক্ষ সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।’ মানুষের ক্ষোভের কথা আঁচ করে তৎপরতা শুরু করেছেন জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। বিডিও এবং এনপিসিসি’র প্রজেক্ট অফিসারকে বলা হয়েছে, এলাকার মানুষের কথা ভেবে যাতে দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু তার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।’

এই আশা আর ভরসার কথা শুনে শুনেই দিন কেটে যায় এলাকার বাসিন্দাদের আর আকাশের জল বয়ে যায় আষাঢ়ি-হিজলদার লাল রাস্তার ওপর দিয়ে। একটা ভোট পেরিয়ে আরেকটা ভোট, তারপর আরও একটা ভোট পেরিয়ে যায়। শুধু একই রকম রয়ে যায় আষাঢ়ি থেকে হিজলদা। বোর্ডের গায়ে মরচে পড়ে, পড়তেই থাকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular