Homeএখন খবরখুনি দাঁতলের কৌশলে পরাজিত হুলা পার্টির সদস্যরা! হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রাণ হারালেন...

খুনি দাঁতলের কৌশলে পরাজিত হুলা পার্টির সদস্যরা! হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রাণ হারালেন গোপীবল্লভপুরের যুবক দীপক

ভবানী গিরি: মাঠ ভরা কোথাও পাকা ধান, কোথাও বিউলির ডাল কোথাও আবার ভুট্টার ক্ষেত। চাষিদের মাসের পর মাসের পরিশ্রম আর সঞ্চয় দিয়ে ফলানো ফসল বাঁচাতে হামলে পড়া হাতির পালকে তাড়াতে গিয়ে জীবন দিতে হল এক তরতাজা যুবককে। নববর্ষের আনন্দ ম্লান করে দিয়ে বর্ষ শেষের রাতে, চৈত্র সংক্রান্তিতেই মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে গেল ঝাড়গ্ৰাম জেলার গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লকের আলমপুর গ্রামে।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে মৃত যুবকের নাম দীপক মাহাত,বয়স ৩২ বছর, বাড়ি ঝাড়গ্ৰাম ব্লকের বাঁকশোলের সিমলি গ্রামে। জানা গেছে এদিন বন দপ্তরের নির্দেশে হুলা পার্টির সদস্যরা গোপীবল্লভপুরের কমলাশোল বনাঞ্চল থেকে ১২ টি হাতির একটি দলকে গাইড করে সুবর্ণরেখা নদী পার করতে চাইছিলেন। রাত ১২ টা নাগাদ হাতিগুলো আলমপুর গ্রামের মাঠের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় অতর্কিতে একটি হাতি ধাওয়া করে হুলাপার্টির দলটিকে। কয়েকজনের সঙ্গে দীপকও পালাতে গেছিলেন হাতির আক্রমন এড়ানোর জন্য। কিন্তু জমির আলে পা লেগে হোঁচট খেয়ে দীপক জমিতে পড়ে গেলে হাতিটি তাকে পা দিয়ে পিষে ফেলে। কারণ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দীপকের।

এদিকে হাতির এই অতর্কিত হামলা ও ভয়াবহতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন হুলাপার্টির সদস্যরা। পরে গভীর রাতে বন দফতর এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মীরা মৃত ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হুলা পার্টির এক সদস্য জানান,” আমরা ১২ টি হাতির দল তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাতের অন্ধকারে বুঝতেই পারিনি একটি হাতি মূল দলটি থেকে আলাদা হয়ে আড়ালে থেকে গিয়েছিল। আমরা মূল দলটিকে যখন তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই ওই হাতিটি আমাদের পেছন থেকে তাড়া করে। যখন আমরা বুঝতে পারি তখন দানবটা আমাদের কাছাকাছি এসে পড়েছিল।”

বনদপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, “হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে পালের সর্দার দাঁতাল বা এক বা একাধিক পুরুষ হাতি থাকলে বিশেষ নজর রাখতে হয় এদের দিকেই কারন হাতির পালটিকে যে কোনোও বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার ভার এরাই নিয়ে থাকে। এরা অত্যন্ত চতুর, বুদ্ধিমান এবং আক্রমণাত্মক হয়, প্রত্যাঘাত করার জন্য মুখিয়ে থাকে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে পালানোর সময় অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে মূল পাল থেকে আলাদা হয়ে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে আত্মগোপন করেছিল দাঁতালটি। ওদিকে মূল পালের পেছনে পেছনে ছুটছিল হুলাপার্টি। হুলাপার্টি এগিয়ে গেলে পেছন থেকে আক্রমন চালায় দাঁতালটি। এখানে বনদপ্তরের অসতর্কতা থেকে গিয়েছিল।”

উল্লেখ্য,বেশ কয়েকবছর ধরে ঝাড়গ্ৰাম জেলা তথা জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জঙ্গলে বেড়েছে হাতির তান্ডব। খাবার এবং পানীয়ের অভাবে দলমার কয়েকটি হাতির দল একপ্রকার স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে নয়াগ্ৰাম,গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইলের জঙ্গলগুলোতে।যার ফলে পায়ই হাতির তান্ডবে এলাকার মানুষের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে মানুষের প্রাণ হানী এবং হাতি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে বন দপ্তরের উদাসীনতার অভিযোগও উঠে থাকে । কারণ হাতিকে পুশ করার মতো সবসময় ব্যবস্থা হয়না।হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বন কর্মী এবং হুলা পার্টির সদস্য নেই।নেই হাতি তাড়ানোর উপযুক্ত সরঞ্জাম। কোন কর্ম নিশ্চয়তা ছাড়া রাত বিরেতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম এলাকা দিয়ে হাতি তাড়াতে হয় হুলা পার্টির সদস্যদের। অন্যদিকে বনাঞ্চলে থাকা মানুষজনের সচেতনতার অভাবে অনেক সময় জঙ্গলের হাতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।

বুধবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মৃত দীপকের সহকর্মী সুভাষ মাহাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে হাতি তাড়ানোর কাজ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে করলেও নেই কোন স্থায়ী কাজের বন্দোবস্ত।তাই হুলা পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সকাল সদস্যদের হাতি স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করা হোক। সঙ্গে মৃত দীপক মাহাতর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তার পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হোক। গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া দীপকের পরিবারে।

RELATED ARTICLES

Most Popular