Homeএখন খবরলকডাউনেই খড়গপুরের বেপাড়ায় মদের আসরে বাইকের আলো পড়ায় পাথর দিয়ে থেঁতলে...

লকডাউনেই খড়গপুরের বেপাড়ায় মদের আসরে বাইকের আলো পড়ায় পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হল দুই যুবককে, রক্তাক্ত ও আশঙ্কায় আহতরা, একজন স্থানান্তরিত করা হল কলকাতায়

নিজস্ব সংবাদদাতা: মদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। গাঁটের কড়ি খসালেই খুল্লাম খুলা মদ মিলছে। আর বন্ধু বান্ধব ইয়ার দোস্তদের নিয়ে চলছে মদের আসর। ঘরে অথবা ঘরের বাইরে,পাড়ার ঠেকে কিংবা পাড়া ছাড়িয়ে বেপাড়াতে গিয়েও, চিয়ার্স লকডাউন। শহরে বার, পাব বন্ধ থাকলেও পারওয়া নেই, পুলিশের নজর এড়াতে অন্ধকার মাঠ বেছে নিলেই হল। রবিবার রাতে খড়গপুর শহরের ইন্দা আনন্দনগর এলাকায় এরকমই এক মজলিসে পথচারীদের বাইকের আলো পড়ায় পাঁচ মদ্যপ মিলে বেধড়ক মারধর করল দুই যুবককে। অভিযোগ পাথর আর ইট দিয়ে ব্যাপক মেরে মাথা ও মুখমন্ডল থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা জনক অবস্থায় দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় সোমবার একজনকে পাঠানো হল কলকাতায়।

খড়গপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত আনন্দ নগরে রবিবার রাতের ঘটনায় কার্যত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সাধারন বাসিন্দাদের মধ্যে। জানা গেছে রবিবার প্রচন্ড গরম থাকায় রাত ১০টা নাগাদ আনন্দনগর এলাকার দুই যুবক অর্নব গুহ রায় ও শিলাদিত্য মজুমদার কোনও বাইকে করে নিজেদেরই পাড়ার মাঠে গেছিল বাতাসে বসার জন্য। আনন্দনগরের মাঠে যাওয়ার সময় বাইকের আলো পড়ে মাঠের মধ্যে। সেই আলোতেই দেখা যায় মাঠের মধ্যে মদের আসর বসেছে। এলাকায় রাতে কারা বসে আছে দেখতে গিয়ে তারা মদের আসরের দিকে বাইক চালিয়ে গেলে ফুঁসে উঠে দাঁড়ায় মদের আসরে বসা পাঁচ-ছ জন যুবক।কেন বাইকের আলো তাদের চোখে ফেলা হল এই নিয়ে তর্ক শুরু হয়। আনন্দনগরের দুই যুবক পাল্টা দাবি করেন কেন তারা মাঠের মধ্যে মদের আসর বসিয়েছে। শুরু হয় তর্ক।

এরমধ্যেই পাঁচ থেকে ছ’জন মিলে ধরে দুই যুবককে।পাশে পড়ে থাকা ইট দিয়ে দুজনকেই ব্যাপক মারতে থাকে সবাই। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে মাঠেই ওই দুই যুবক। সেই অবস্থাতেই মুখে মাথায় ইট দিয়ে মারতে থাকে মদ্যপ যুবকের দল। মজার ব্যাপার হল ঘটনাটি দেখতে পেয়েও বেরিয়ে আসেনি আশপাশের মানুষ। ফোন মারফৎ পাড়ার অন্য প্রান্তের এক যুবক খবর পেয়ে অর্নবের বাবা আর শিল্যাদিত্যের জামাইবাবুকে নিয়ে ছুটে আসে। ততক্ষনে পালিয়ে গেছে যুবকের দল।

পাড়ার এক যুবক জানান, ‘কোনও মতে একটি গাড়ি যোগাড় করে দুজনকে নিয়ে আমরা প্রথমে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাই। অবস্থা গুরুতর দেখে দুজনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। আমরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে দেখি কংসাবতী সেতুর কাছে দুর্ঘটনায় সেতু মুখ বন্ধ। ফের তাদের খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে আনা হয়। মধ্যরাতে সেতু স্বাভাবিক হলে ফের নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুরে। মেদিনীপুরে দুই যুবকের চিকিৎসা শুরু হলেও অর্নবের অবস্থা খুবই খারাপ। মাথার বেশ কয়েকটি জায়গায় তিন থেকে চারবার ইট দিয়ে মেরে খুলি ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মস্তিষ্কের গভীরে আঘাত রয়েছে অনুমান করেই কলকাতার হাসপাতালে রেফার করেছেন চিকিৎসকরা।”

ঘটনায় ইন্দা ২৩নম্বর ওয়ার্ড এলাকার গোয়ালাপাড়া এলাকার রাকেশ গুপ্তা বলে একজনকে চিনতে পারা গেছে। প্রায় দু’দশক আগে এই এলাকার ত্রাস দাগি সমাজবিরোধী রাজেশ গুপ্তার ছেলে এই রাকেশ। রাজেশের মৃত্যু হয় এনকাউন্টারে। এই রাজেশেরই বড় ছেলে রাকেশ ও তার দলবল প্রতিদিনই মদের আসর বসাত বলে অভিযোগ গোয়ালাপাড়া ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। কখনও ইন্দা বয়েজ স্কুলের সামনে পুকুরের পাড় আবার কখনও ওই স্কুলেরই পেছনের মাঠ, কখনও আবার স্থানীয় নির্মিয়মান আবাসনগুলিকে এরা ব্যবহার করত আসরের ঠেক হিসাবে। স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ আসার পর গত শুক্রবারই রাতে উল্লেখিত জায়গা গুলিতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। চলছিল লাগাতার নজরদারি। সেই কারনেই এলাকা থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দুরে বেপাড়ায় এরা ঠেক সরিয়ে নিয়ে গেছিল মনে হচ্ছে। নতুন ঠেকের শুরুতেই বাধা পড়ায় মরীয়া হয়েই এই আক্রমন বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনার পরই এলাকায় তদন্তের জন্য খড়গপুর টাউন থানার আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা। রাকেশ সহ বাকিদের নামে একটি এফ.আই.আর দায়ের করা হয়েছে অর্নবের বাবার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করেই। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে রাকেশের মাথায় হাত ছিল এমন রাজনৈতিক নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular