Homeসম্পাদকের কলমেমুকুল কি মন্ত্রী হচ্ছেন, বড় ভাঙনের হৃৎকম্পন শুরু তৃণমূলে

মুকুল কি মন্ত্রী হচ্ছেন, বড় ভাঙনের হৃৎকম্পন শুরু তৃণমূলে

নিত্য গুপ্ত: সত্যিই কি মুকুল রায় মন্ত্রী হচ্ছেন? ঘুম আসছেনা তৃণমূলের অনেক ছোট বড় নেতার। দুশ্চিন্তার পারদ চড়ছে কালীঘাট থেকে রাজ্য তৃণমূল ভবনে, এমনকি হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটেও। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার রাজ্যের ২৩জেলায় ফের বড়সড় ভাঙনের মুখে পড়ে যাবে রাজ্যের শাসকদল। যেমনটা লোকসভার আগে নিশীথ প্রামানিক, সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিংহের মত বাঘা বাঘা নেতারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ঢুকে পড়েছিল মুকুল রায়ের হাত ধরে এবার তার দশগুন শক্তি নিয়ে ভাঙন ধরাবেন মুকুল রায় মন্ত্রী হলে। সেই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে শাসকদল। রাজ্যের ৩৪১টি ব্লক আর ১২১টি পৌরসভা, ৬টি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কোথায় নেই তৃণমূলের মধ্যে থাকা মুকুল রায়ের অনুগামীর দল? রাজ্যের ৭৮ হাজার বুথের অন্তত ১জন করে তৃণমূল কর্মীর নাম যিনি বলতে পারেন তাঁর নাম মুকুল রায় কারন একদা তৃণমূলের এই বেতাজ বাদশার সংগঠনের ওপর দাঁড়িয়েই মমতা ব্যানার্জী আজ ক্ষমতায়। আর রাজ্য ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতার প্রয়োজন, চাণক্য মুকুল রায়ের সেই ফর্মুলা মেনেই মমতা ব্যানার্জী কখনও কংগ্রেস আর কখনও বিজেপির মন্ত্রী হয়েছিলেন। সুতরাং মুকুল রায় আজ তৃনমূলকে সরাতে মন্ত্রী হবেন আশ্চর্য কি?

মুকুল রায় কি মন্ত্রী হচ্ছেন? অদ্ভুত উত্তর দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছেন,
আমি তো কাউকে মন্ত্রী করি না। কেন্দ্রই ঠিক করবে, কাকে মন্ত্রী করবে, কাকে করবে না। আমি নিজেও তো মন্ত্রী না। মুকুলদা বরিষ্ঠ নেতা, তিনি মন্ত্রী হতেই পারেন। মুকুলদা হচ্ছেন কি না জানি না, তবে বাংলা থেকে আরও অনেকে মন্ত্রী হচ্ছেন এমন খবর আছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সভায় ছিলেন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা থেকে শুরু করে বঙ্গ বিজেপির সকলেই। তাঁরা বক্তব্যও রাখেন। মুকুল রায়ও বক্তব্য রাখেন। এই সভা শেষেই মুকুল রায়ের মন্ত্রী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মুকুল রায় পদ না চাইলেও ২০২১-এর আগে তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে। তিনি মন্ত্রী হলে, তাঁর সুবিধা হবে রাজ্যে বিচরণ করতে। সহজে বাধার মুখে পড়বেন না তিনি। মুকুল রায় কতটা ভাঙতে পারেন তৃণমূলকে, কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন তাঁর পুরনো দলকে, তার উপর নির্ভর করছে বিজেপির ভাগ্য।
মুকুল রায় তৃণমূলে থাকাকালীন জাহাজ প্রতিমন্ত্রী আবার রেলমন্ত্রীও ছিলেন। ফলে মন্ত্রিত্বের আটঘাট তাঁর ভালোই চেনা। তিনি এই বিষয়ে বিজেপির অনেকের থেকে বেশ পোড়খাওয়া। এমনকী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বর্তমান রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল, নির্মলা সীতারমনদের থেকে অনেক আগে তিনি মন্ত্রিত্ব সামলেছেন। তাই মুকুল রায়কে কোনও একটা মন্ত্রকে দেখা যেতে পারে।
তবে এটাও ঠিক যে মুকুল মন্ত্রী হন আর নাই হন তৃণমূলে ভাঙন তিনি ধরাবেন। লোকসভায় বিজেপি ১৮ আসন পাওয়ার পরই তৃনমূল থেকে বিজেপিতে আসার ঢল নামতে শুরু করেছিল কিন্তু সুকৌশলী মুকুল তা তখনই হতে দেননি কারন একদিকে পুলিশের মামলা আর অন্যদিকে শাসকদলের প্রতিহিংসা এই দুইয়ের মুখে পড়তে হত তাঁর অনুগামীদের আর মুকুল হচ্ছেন সেই সেনাপতি যিনি তাঁর একটিও বোড়ে খোয়াতে চাননা। তিনি ধৈর্য ধরে সবাইকে থেকে যেতে বলেছেন আর সময় হলে নিজে ডেকে নেবেন বলেছেন। গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, শতাধিক বিধায়ক কে নেই মুকুলের ঝুলিতে?

মুকুল রায় আলাদা করে বিজেপির সংগঠন দেখেননা, কোনও পদও নেই তার ওই দলে কিন্তু কেন? কারন বিজেপি লড়বে বিজেপির সংগঠন নিয়ে আর মুকুল রায় লড়বেন তাঁর নিজস্ব সংগঠন নিয়ে যে সংগঠন রয়েছে তৃণমূলের ভেতরেই, সে তৃণমূলের অধিকাংশই আদি আর ১৯৯৮য়ের সময়কার চেতনায় গড়া। যাঁদের মুকুল বুঝিয়েছেন, বর্তমান তৃনমূল দলটা মমতা ব্যানার্জীর তৃনমূল নয়, এটা অভিষেক ব্যানার্জীর তৃনমূল যেখানে ২০১১ র পর অন্যদল থেকে ধান্দা নিয়ে ভেঙে আসার সংখ্যাই বেশি। ২০২১য়ের লড়াই তাই যতটা না বেশি বিজেপির তার চেয়েও ঢের বেশি মুকুল রায়ের। এ লড়াই তৃণমূলের মুকুল বাহিনী আর বিজেপির মিলিত জোটের লড়াই, এ লড়াই মুকুলকে জিততেই হবে।
এ লড়াইটা লড়ার জন্য মুকুলের মন্ত্রী না হলেও চলে কিন্তু মন্ত্রী হলে সুবিধা বেশি। ২০২১য়ের বিধানসভা সোজা কথায় বডি টাচের গেম। ক্ষমতা ধরে রাখার আর ক্ষমতা লাভের মরিয়া লড়াই হবে এখানে। ফলে পদে পদে সংঘর্ষ হবে। মন্ত্রী হলে নিরাপত্তা রক্ষী পাওয়া যাবে আর যত্রতত্র বিচরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। কী মন্ত্রী হতে পারেন তা নিয়েও জল্পনা প্রবল। শোনা যাচ্ছে মুকুল রায়কে কয়লা প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। পূর্ণমন্ত্রী নয়, রাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন তিনি। মূলত গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য তাঁকে মন্ত্রীসভায় আনা হচ্ছে। তাঁকে এমন কোনও পদে জড়িয়ে দেওয়া হবে না যে তিনি বাংলার দিকে নজর ঘোরাতে পারবেন না। বেশি করে বাংলায় তাঁকে গুরুত্ব দিতেই তাঁকে মন্ত্রীসভায় আনা হতে পারে। সবটাই জানে তৃনমূল, বোঝেও আর তাই ভাঙনের আশঙ্কা এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়ে।

RELATED ARTICLES

Most Popular