Homeএখন খবরপ্রেমিকার মুণ্ডু দেখিয়েই মন জয়ের চেষ্টা দ্বিতীয় প্রেমিকার! হিন্দি সিনেমাকেও হার মানিয়ে...

প্রেমিকার মুণ্ডু দেখিয়েই মন জয়ের চেষ্টা দ্বিতীয় প্রেমিকার! হিন্দি সিনেমাকেও হার মানিয়ে নৃশংস খুনের ঘটনা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ”আমাকে বিয়ে করতে হলে, তোমাকে দেখাতে হবে তোমার বর্তমান প্রেমিকার মৃতদেহ!” নতুন প্রেমিকার আবদার মেনে বর্তমান প্রেমিকাকে খুন করে সেই মৃতদেহ দমদম থেকে ১৫০কিলোমিটার দুরে আনা হয়েছিল ট্রলি ব্যাগে ভরে। তারপর সেই ট্রলি ব্যাগে ভরা মৃতদেহ দেখানো হয়েছিল নতুন প্রেমিকাকে। মৃতদেহ দেখিয়ে নতুন প্রেমিকা আর তার পরিবারকে সন্তুষ্ট করার পর মৃতদেহ ফেলে রেখে আসা হয় ২কিলোমিটার দুরে একটি কার্লভাটের তলায়। বলিউডি হিন্দি সিনেমাকে হার মানিয়ে দেওয়া এই নৃশংস চিত্রনাট্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা আর পটভূমি হল কলকাতার দমদম। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখার্জীর এই বর্ননায় কার্যত চমকে উঠেছে সারা বাংলা। দমবন্ধ করা লোমহর্ষক এই খুনের ঘটনা চমকে দিয়েছে পুলিশকেও। কারন পুলিশের মতে প্রেমের জন্য খুনোখুনি হওয়াটা নতুন কিছু নয় কিন্তু প্রেমিকের প্রাক্তন প্রেমিকার লাশ দেখার এই নজির বিহীন স্পৃহা এ বঙ্গদেশ তো দুরের কথা, এই ভারত এর আগে শুনেছে কিনা সন্দেহ!

 

উল্লেখ্য গত ৯ই মার্চ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অন্তর্গত ওইলান গ্রামের একটি কার্লভাটের তলা থেকে উদ্ধার হয়ে ট্রলিব্যাগ বন্দি মহিলার মৃতদেহ। সেই দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এক রিক্সা চালক ও মহিলা সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। পুলিশ জানায় ধৃতদের মধ্যে একজন হল সৌরভ দে (২৫)যে কিনা দমদমের বাসিন্দা। দমদম থেকেই গ্রেপ্তার হয় এক তরুনী মৌমিতা দে(২৬)। যাকে সৌরভ তার স্ত্রী বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে এগরার ছত্রী গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে গ্রেপ্তার হয় মৌসুমীর বাবা নারায়ন শী ও নারায়নের বন্ধু ওইলান গ্রামের রমাকান্ত জানা। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখার্জী এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, দমদমের বেদিয়াপাড়া নতুন বাজারে একটি ভাড়াবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সৌরভ ও তার স্ত্রী মৌমিতাকে। আর তাদের জেরার পরই এগরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাকি দুজনকে । পুলিশ এই খুনের ঘটনায় আরও দুজনকে খুঁজছে।

 

ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে দমদমের বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক সৌরভের সাথে এগরার বড়নিহীর বাসিন্দা মৌমিতার প্রেম হয় দিঘায়। কিছুদিন প্রেম চলার পর সে বিয়ে করতে চায় মৌমিতাকে। কিন্তু মৌমিতা ততদিনে জানতে পারে সৌরভের আরেকটি প্রেমিকা রয়েছে যার নাম অনিতা দাস। অনিতার ১২বছরের মেয়ে সহ দুটি সন্তান রয়েছে। পুলিশ একটি সূত্র দাবি করেছে দ্বিতীয় প্রমিকা মৌমিতা ও তার বাবা মা দাবি করেছিল প্রথম প্রেমিকা অনিতাকে প্রানে মেরে দেখাতে হবে তাদের।তবেই মৌমিতাকে বিয়ে করতে পারবে সে।সেইমতো করে গত আট মার্চ দমদমের বেদিয়া পাড়া নতুন বাজারে সৌরভের ভাড়াবাড়িতে আরো দুজন পেশাদার খুনীকে সঙ্গে নিয়ে সৌরভ নৃশংস ভাবে খুন করে ট্রলিব্যাগের মধ্যে পুরে মৌমিতার বাবাকে দেখানোর জন্য রাতে টাটা সুমো করে নিয়ে আসে এগরার ছত্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় নিহারী তে।

 

মৃতদেহ মৌমিতার বাবা নারায়ণ সী সহ মৌমিতাকে দেখানোর পর একটি রিকশায় করে দু’ কিলোমিটার দূরে ফেলে আসে। যে রিকশা চালিয়েছিল ধৃত রমাকান্ত জানা। এরপরই মৌমিতাকে বিয়ে করে দমদম চলে যায় সৌরভ। মৌমিতার বাপের বাড়িতে রেখে যাওয়া হয় অনিতার ১২বছরের মেয়েকে।
এদিকে মৃতা অনিতা রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে দমদমের একটা নার্সিং হোমে আয়ার কাজ করা দুই সন্তানের মা ৩০বছর বয়সী অনিতাকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল সৌরভ। টোটো চালানোর পাশাপাশি জিম ট্রেনিং ও বাচ্চাদের আঁকা শেখাত সৌরভ। আর সেটা করতে গিয়েই অনিতাকে ফাঁদে ফেলে সৌরভ। অনিতার স্বামী পুলিশ কে জানায় , বাড়ীর পাশে এক আত্মীয়র বাড়ীতে যাতায়াত করে তার স্ত্রী অনিতাতাকে প্রেমের জালে আবদ্ধ করে। তারপর থেকে তাদের প্রেম গভীর হয়ে পড়লে স্বামীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে অনিতা। যদিও কিছুদিনের মধ্যে তাদের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি হয়। আর এরই মধ্যে দিঘা বেড়াতে এসে সৌরভের সাথে মৌমিতার পরিচয় হয়। আর তারপরই অনিতা খুনের চিত্রনাট্য রচিত হয়।

 

যদিও অন্য একটি সুত্র বলছে অনিতা ও তার মেয়েকে ভুলিয়ে এগরাতে মৌমিতার বাপের বাড়িতে আনা হয়। তারপর মৌমিতা ও তার বাবা ও বাবার বন্ধু রমাকান্তর সাহায্য নিয়ে খুন করা হয় অনিতাকে। পুলিশ অনিতার মেয়েকে মৌমিতার বাপের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে। পুলিশ সুপার অবশ্য খুনের মোটিফ ও খুনের ধরন নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। তিনি বলেছেন, গোটা বিষয়টিতে এখনও অনেক জিজ্ঞাসাবাদ বাকি। ধৃতদের নিজস্ব হেফাজতে নেওয়ার পরই পুলিশ তা জানার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে পুলিশ।

RELATED ARTICLES

Most Popular