Homeএখন খবরভারতে করোনা সংক্রমিত ১১৪, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর ইওরোপ থেকে ভারতে ঢোকা নিষেধ,...

ভারতে করোনা সংক্রমিত ১১৪, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর ইওরোপ থেকে ভারতে ঢোকা নিষেধ, আরব থেকে ফিরলেই ১৪দিন কোয়ারান্টাইনে

নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর ইওরোপ থেকে ভারতে কোনও যাত্রীই ঢুকতে পারবেননা বলে জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রকের করোনা সংক্রান্ত সপ্তম বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে ওইদিন এবং ওই সময়ের পর থেকে আরব দেশগুলি থেকে আসা সমস্ত ব্যক্তিকে ১৪দিনের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন ক্যাম্পে থাকতেই হবে।
উল্লেখ্য ভারতে সরকারি ভাবে এ অবধি ২জন করোনা সংক্রমনের বলি হয়েছেন যার মধ্যে প্রথম বলি কর্ণাটকের বৃদ্ধ ৭৮ বছর বয়সী কালবুর্গী সৌদি আরব থেকে ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অন্যদিকে দ্বিতীয় বলি রাজধানী দিল্লির জনকপুরীর ৬৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা প্রীতি সুদনের ছেলে ইওরোপ থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছেলের থেকেই সংক্রমনের হয় সুদনের। আর তারপরই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত বলেই জানা গেছে।

 

বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, কাতার, ওমান ও কুয়েত থেকে বা ওই সব দেশ দিয়ে যেসব যাত্রীরা ১৮ মার্চ মধ্যরাতের পর থেকে আসবেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক পৃথক নজরদারী অর্থাৎ কোয়ারান্টাইনে ১৪ দিন থাকতে হবে। যে বন্দর দিয়ে তাঁরা দেশে ঢুকবেন, সেখানেই এই ব্যবস্থা থাকবে।
পাশাপাশি  ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য রাষ্ট্রগুলি ও তুরস্ক এবং বৃটেন থেকে ১৮ মার্চের পর থেকে কোন যাত্রী ভারতে ঢুকতে পারবেন না। কঠোর ভাবে জানানো হয়েছে যে, কোন বিমান সংস্থাই ১৮ মার্চ মধ্যরাত থেকে এই সব দেশের থেকে ভারতে আসার জন্য যাত্রী তুলতে পারবে না। আগামী ৩১শে মার্চ অবধি এই আদেশ বলবৎ থাকছে বলেই জানা গেছে।

 

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধনের পৌরহিত্যে কোভিড-১৯ এর  মোকাবিলায় আজ নয়াদিল্লির নির্মাণ ভবনে  উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরী, বিদেশ মন্ত্রী ডঃ এস জয় শঙ্কর , স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ শ্রী বিপিন রাওয়াত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব শ্রীমতী প্রীতি সুদান প্রমূখরা। বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, দেশের
সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ( বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি) জিম, সংগ্রহশালা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কেন্দ্র, সুইমিং পুল, থিয়েটার বন্ধ রাখা হবে। ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদানকে উৎসাহিত করা হবে।

 

ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অহেতুক ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে। বাস, ট্রেন, বিমানের মত গণপরিবহনে সর্বোচ্চ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া ওই বাহনগুলিকে নিয়মিত ও যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
গুরত্বপূর্ণ একটি পরামর্শ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে বেসরকারী সংস্থাগুলির কর্মীদের সম্ভব হলে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। যদি নেহাৎই কোনও বৈঠক করার প্রয়োজন হয় তবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করতে হবে। প্রয়োজন না হলে বড় বড় বৈঠকগুলির পিছিয়ে দিতে হবে।
যাঁদের বাধ্য হয়ে বাইরে খাবার খেতেই হয় তাঁদের রেস্তরাঁগুলিতে হাতধোয়ার নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে, যে সব জায়গায় ঘনঘন হাত রাখা হয়, সেখানে পরিচ্ছনতা বজায় রাখতে হবে। দুটি টেবিলের মধ্যে দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হবে। সম্ভব হলে খোলা স্থানে খানিকটা দূরে দূরে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

যেসব ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রচুর লোকের ভিড় হবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিযোগিতা পেছানোর পরামর্শ দেবেন। একই ভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সমাজের বিশিষ্ট নেতা এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, যাতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা যায় । কোথাও যেন ভীড় না হয় ও দুজনের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ,  ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসায়িক কাজের সময় নিয়ন্ত্রণ করবে এবং কি করা উচিত বা অনুচিত  তার তালিকা প্রকাশ করবে। সব্জীবাজার, বাস ডিপো, রেল স্টেশন, পোষ্ট অফিসের মত জায়গা౼ যেখানে জন পরিষেবা দেওয়া হয়, সেখানে জনচেতনতার প্রচার চালাতে হবে।

 

এদিকে মঙ্গলবারই ইরান থেকে আজ ৫৩ জন ভারতীয়কে নিয়ে চতুর্থ যে বিমানটি এসে পৌঁছেছে এবং প্রতিরক্ষাবাহিনীর জয়শলমীরের ক্যাম্পে তাঁদের কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় নি। নিয়ম অনুযায়ী এঁদের কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
সপ্তম বৈঠকের পর আরও চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এরা ওড়িশা, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ ও কেরালার বাসিন্দা। আর সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ভারতে ১১৪জনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে ১৩ জন সুস্থ হয়ে গেছেন। ২ জন মারা গেছেন। সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যে ৫২০০ জন এসেছেন, তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular