Homeএখন খবর৫২হাজার টাকার ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করত দেবাঞ্জন, রেখেছিল নিজস্ব দেহরক্ষী! জাল ভ্যাকসিন...

৫২হাজার টাকার ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করত দেবাঞ্জন, রেখেছিল নিজস্ব দেহরক্ষী! জাল ভ্যাকসিন কাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও ৩জন

নিজস্ব সংবাদদাতা: কসবা ভুয়ো টিকাকরণ কাণ্ডের (Kasba Fake Vaccination Case) তদন্তে নেমে একের পর এক তথ্য উঠে আসতে শুরু করায় চক্ষু চড়কগাছ বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট(SIT)-এর। জানা গেছে করোনার (Covid 19) এই ভুয়ো টিকা কাণ্ডে জড়িত জালিয়াত দেবাঞ্জন দেব যে গাড়ি ব্যবহার করত তার মাসিক ভাড়া ছিল ৫২ হাজার টাকা। গত চার মাস ধরে সে পুরসভার নাম করেই এই গাড়ি ভাড়া করেছিল দেবাঞ্জন। ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত এই গাড়ির মালিক নিয়ম যদিও গাড়ির নম্বর প্লেটে হলুদের ওপর কালো রঙে গাড়ির নম্বর লিখেছিল কিন্তু মানুষের যাতে সেটি ভাড়া গাড়ি বলে সন্দেহ না হয় তাই সেই হলুদ ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড করে দেয়। তার নিজের ‘ক্ষমতা’ দেখিয়ে নীল আলো লাগায় সে। এখানেও প্রশ্ন উঠেছে এই বিষয়টা কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে? কারন কলকাতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গাড়ির নম্বর প্লেটের ওপরেই পুলিশকে তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখতে হয়।

অন্যদিকে কলকাতা কর্পোরেশনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘যুগ্ম সচিব’ সেজে থাকা জাল IAS দেবাঞ্জন দেব নিজের জন্য একজন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী রেখেছিল। নবান্নের লেটারহেডে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে এক প্রাক্তন বিএসএফ আধিকারিককে নিয়োগ করে সে। দেবাঞ্জন যেখানেই যেতেন তার সঙ্গেই ঘোরা ফেরা করতেন ওই দেহরক্ষী। দেবাঞ্জনের কসবার রাজডাঙার অফিসে ফের তল্লাশি চালিয়ে কলকাতা পুরসভা ও নবান্নের লেটারহেডে প্রচুর নথিও চিঠিপত্র মিলেছে। অফিসে সাহায্যপ্রার্থীদের নামে নবান্নের বহু কর্তাকে সে নিজেকে পুরসভার যুগ্ম কমিশনার পরিচয় দিয়ে চিঠি লিখত। কিন্তু সেগুলি পরে আর পাঠায়নি। সে কলকাতা পুরসভার ঠিকাদারদের কাছে গিয়ে ‘সাব কনট্রাক্ট’ চাইত। এভাবেও সে প্রচুর টাকা রোজগার করেছে। বেহালা থানায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ জানান, পুরসভার টেন্ডারের নাম করে তাঁর কাছ থেকে দশ লাখ টাকা জালিয়াতি করেছে। পুরসভার স্টেডিয়াম তৈরির টেন্ডারের নাম করে ৯০ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগও তুলেছেন কসবার এক ব্যবসায়ী। এদিকে লালবাজারের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, ডিসি (চতুর্থ ব্যাটালিয়ন) এখন ডিসি (ডিডি)র নেতৃত্বে কাজ করতে শুরু করেই SIT দেবাঞ্জনকে জেরা করে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হল। প্রত্যেককেই আজ আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে।

জানা গেছে ধৃতেরা হল সুশান্ত দাস, রবিন শিকদার এবং শান্তনু মান্না। ৫৪বছরের সুশান্ত সল্টলেক সেক্টর টু’র বাসিন্দা। আর ৩১ বছর বয়সি রবীন শিকদার বারাসতের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, এই দু’জন আধিকারিকের নাম ভাঁড়িয়ে খোলা কলকাতা পুরসভার অ্যাকাউন্ট সামলাত। সর্বত্র সইও করত দু’জনে। ভ্যাকসিন কাণ্ডে অপর ধৃত শান্তনু মান্না তালতলার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, সে নিজেকে ভুয়ো IAS দেবাঞ্জনের অফিসের ম্যানেজার বলেই পরিচয় দিত সর্বত্র। ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে এই তিনজনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। আরও জানা গেছে দেবাঞ্জনের কসবার অফিসে অন্তত বারোজন কাজ করতেন। তাঁদের পুরসভার নাম করেই নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেককে বেতন দেওয়া হত। শুক্রবার ওই কর্মীদের মধ্যে ৪জনকে লালবাজারে জেরা করা হয়েছে।

এই জিজ্ঞাসাবাদ থেকে উঠে এসেছে যে করোনার যে জাল ভ্যাকসিন কাণ্ডের সূত্র ধরে দেবাঞ্জনের পরিচয় আসে সেই জাল ভ্যাকসিনকে কোভিশিল্ড (Covishield) বলেই জানানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে কাউকে দিয়ে কোভিশিল্ডের লেবেলের ডিজাইন করার পর শিয়ালদহের একটি ছাপাখানা থেকে প্রিন্ট বের করা হয়েছিল তারপর অ্যামিকাসিন ইঞ্জেকশনের ভায়ালের উপর আঠা দিয়ে ‘কোভিশিল্ড’ লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দারা সন্ধান করছেন কলকাতা পুরসভার অন্দরমহলের কারও সাহায্য নিয়ে দেবাঞ্জন এই সব কাজ করত নাকি পুরসভার দালাল চক্রের সাহায্য নিত সে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে। যেমন পুরসভা অভিযোগ দায়ের করেছে পুরকর্তার সই ব্যবহার করে গাড়িতে নীল আলো ব্যবহার করার দায়ে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এক পুরকর্তার সই জাল করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে পুরসভার অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগে নিউ মার্কেট থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়। মুচিপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা IMA ।

RELATED ARTICLES

Most Popular