Homeএখন খবরশ্বাসনালীতে খাবার আটকে মৃত সবং থানার সিভিক ভলান্টিয়ার! ছেলের জন্মদিনের আগেই চিতায়...

শ্বাসনালীতে খাবার আটকে মৃত সবং থানার সিভিক ভলান্টিয়ার! ছেলের জন্মদিনের আগেই চিতায় উঠবে বাবার দেহ, শোকস্তব্ধ বলপাই

শশাঙ্ক প্রধান: আগামী কাল ছেলের ৫বছর পূর্ণ হবে তাই বাড়িতে হৈহৈ ব্যাপার। জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাড়িতে একটা ছোটখাটো প্রীতিভোজের আয়োজনও করা হয়েছিল। তার জন্য কেনা কাটা আর ছেলের জন্য কিনেছিলেন প্রচুর উপহার কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। বাজার করে বাড়িতে বসে খেতে বসেছিল দুপুরের খাওয়ার। সেই সময় শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গিয়ে মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার সিভিক ভলেনটিয়ার ২৭ বছরের শ্রীকান্ত দাসের। রবিবার দুপুর ২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সবং থানার বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোটগেড়িয়া গ্রামে। মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা গ্রাম জুড়ে শোকের আবহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে গোটগেড়িয়ার বাসিন্দা শ্রীকান্ত দাস গত ৭বছর ধরে সবং থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত। বলপাই এলাকাতেই তাঁর পোস্টিং। শ্রীকান্তর বাবা এবং মা বাদল দাস এবং লক্ষ্মী। শ্রীকান্ত তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। চাকরি পাওয়ার কিছু পরেই বিয়ে হয়েছিল শ্রীকান্তর। পরে তাঁর একটি ছেলে হয় তারই ৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে আগামী কাল। সেই উপলক্ষ্যে বাড়িতে প্রায় আড়াই’শ জনের খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার সকালে ডিউটি করতে করতে সহকর্মীর কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিয়েছিল শ্রীকান্ত। বলেছিল বাজার করতে হবে। পরে কোনও একদিন এই ডিউটি মেক-আপ করে দেবে সে। কিন্তু না কথা রাখা হলনা শ্রীকান্তর।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে প্রথমে স্থানীয় বাজার থেকে শাকসবজি মশলাপাতি কিনে বাড়িতে রেখেছিল সে। কথাছিল মাছ এবং মাংস কেনা হবে সোমবারই। এরপর ছেলের জন্য উপহার আনার জন্য গিয়েছিল তেমাথানি। জামা কাপড় ও বেশকিছু খেলনা কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরে। তারপরই প্রচুর খিদে পেয়েছে বলে মা লক্ষ্মীদেবীকে ভাত বেড়ে দিতে বলেন। এরপরই মর্মান্তিক সেই ঘটনা। পরিবারের এক সদস্য জানান, প্রথম গ্রাসই গলায় আটকে গেছিল শ্রীকান্তর। ছটপট করতে শুরু করেন পাতেই। স্ত্রী দিপালী ছুটে আসেন জলের গ্লাস নিয়ে কিন্তু জল গলেনি গলা দিয়ে। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। নীলবর্ন হয়ে যেতে থাকে শরীর। একজন স্থানীয় ডাক্তার ডাকা হয়। তিনি কিছুটা চেষ্টা করেন কিন্তু লাভ হয়নি। এরপর একটা মারুতি ভাড়া করে তড়িঘড়ি ১৩কিলোমিটার দুরে সবং গ্রামীন হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

সবংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুভাষ কান্ডার জানান, “সম্ভবতঃ শ্বাসনালীতে খাবার আটকে চোকড হয়ে গিয়েছিল ফলে অক্সিজেন নিতে না পারায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মনে হয় হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যু হয়েছিল ওনার। আমরা দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। বিশদ কারন ওখানেই জানা যাবে।” প্রতিবেশী তপন দাস বলেন, খুবই শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল শ্রীকান্ত। সবার সাথেই তার সদ্ভাব। গ্রামের সবার সাথে মিশত, কথা বলতো। সিভিক ছিল বলে বিভিন্ন সমস্যায় মানুষ তার কাছে যেত। কাউকেই ফেরাতো না সে। কারও তাই গ্রামের সবারই প্রিয় ছিল সে। ঘটনায় আমরা নিজেরাই ভেঙে পড়েছি। ওর বাবা মার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারছিনা।”

এদিকে শ্রীকান্তের ছেলের পাঁচবছর পূর্তির অনুষ্ঠানে বাড়িতে এসে পৌঁছে গেছিলেন কুন্দরা থেকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পৌঁছে গেছিল অন্য আত্মীয়রা। শ্রীকান্তের সহকর্মী, পাড়ার যুবক বন্ধুরা যাঁরা তাঁর ছেলের ৫বছর পূর্তির উৎসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তাঁরা আর গোটা গোটগেড়িয়া গ্রাম এখন তাঁদের প্রিয় ছেলের শশ্মানে চিতা সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular