Homeএখন খবরবাংলায় নজির বিহীন ঘটনার স্বাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম! হাতির হামলায় মৃত্যুর ১২ঘন্টার মধ্যে...

বাংলায় নজির বিহীন ঘটনার স্বাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম! হাতির হামলায় মৃত্যুর ১২ঘন্টার মধ্যে পরিবারের হাতে ৫লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দিলেন মন্ত্রী

ভবানী গিরি : হাতির হানায় মৃত্যুর পর সরকারের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আগেই পরিবারের বয়স্ক সদস্যেরও মৃত্যু হয়ে গেছে এমন ঘটনা খুঁজলে পাওয়া যেতেও পারে। সরকারি কাজ ১৮ মাসে বছর। হাতি ঘর ভাঙলে সেই ঘরের ক্ষতিপূরণ বা ফসলের ক্ষতি করলে তার ক্ষতিপূরণ বনদপ্তর থেকে পেতে পেতে বছর, দেড় বছর পার হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। নতুন ঘটনা হল হাতির হামলায় মৃত্যুর মাত্র ১২ঘন্টার হাতে মৃতের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছে দেওয়া। হ্যাঁ, এমনি ঘটনার স্বাক্ষী থাকল ঝাড়গ্রাম। না, ঝাড়গ্রাম কেন? মনে হয় সারা রাজ্যই। রাজ্যে এই প্রথম হাতির হামলার এত কম সময়ের মধ্যেই ক্ষতিপুরন পেল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

রবিবার হাতির হামলায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় সকাল থেকেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরেই কলাবনী ও সংলগ্ন গ্রামগুলিতে। এদিন ভোর পাঁচটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গবাদি পশুর জন্য ঘাস পাতার পাশাপাশি কচড়া (মহুল)ফল কুড়োতে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের শালবনী গ্রামপঞ্চায়েতের বরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পাড়ু মহাত। ৭৫ বছর বয়সী পাড়ু জঙ্গলে গিয়ে হাতির মুখোমুখি হয়ে পড়লে দাঁতাল হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। ঘটনা জানাজানি হলেও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। এলাকায় প্রায়ই হাতির উপদ্রব লাগাতার ঘরবাড়ি, সম্পত্তি, ফসল ও প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা লোধাশুলি ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখে দীর্ঘক্ষণ।

অবরোধকারী জনতার দাবি এলাকা থেকে অবিলম্বে হাতিদের হঠাতে হবে, জঙ্গল যারা বিনষ্ট করছে বলেই খাদ্যের অভাবে হাতি লোকালয়ে উঠে আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনতা আরও দাবি করেন যে হাতির হামলায় যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে তার জন্য সরকারের বরাদ্দ ক্ষতিপূরণ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। পুলিশ এবং বনদপ্তরের কর্তারা দীর্ঘ আলোচনার পর জনতাকে দাবি মেটানোর আশ্বাস দিয়ে কয়েকঘন্টা পরে অবরোধ তুলতে সক্ষম হন।

জানা গেছে এই ঘটনার পরই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন ঝাড়গ্রামের সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক তথা রাজ্যের বনপ্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। বনদপ্তরের সঙ্গে কথাবার্তার পাশাপাশি তিনি যোগাযোগ করেন নবান্নের সাথে। বনসচিব ও অন্যান্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ঠিক করেন আজই ক্ষতিপূরণের অংক তুলে দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে। ইতিমধ্যে মিলে যায় মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত। তারপরই এগারো ঘন্টার মাথায় বরিয়া গ্রামে মৃত পাড়ু মাহাতের বাড়িতে পৌঁছে যান মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা সঙ্গে ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ সহ বনদপ্তরের অন্যান্য অধিকাররা।

পাড়ু মাহাতের ছেলে দীপক মাহাতের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেকে তুলেদেন বিরবাহা । নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথাও বলেন মন্ত্রী। হাতির হানায় বাবার মৃত্যুর ১২ ঘন্টার মধ্যেও ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেয়ে চোখের জল নিয়েই মন্ত্রী এবং বনদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান দীপক। বীরবাহা বলেন, “সকালেই ঘটনার খবর পাওয়ার পরই চেষ্টা করেছি কি করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় তার জন্য। যাঁদের বাড়ির মানুষ ক্ষতি হয়েছে তাঁর অভাব পূরণ করা যাবেনা ঠিকই কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা তা পেলে বিপদের সময় মানুষের একটু সুরাহা হয়। সরকারি বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা একটা বিষয়। নানা রকম পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আমার চেষ্টা ছিল সেটা দ্রুত করার। যদি এইভাবে দ্রুত কাজ করা যায় তাহলে মানুষের ক্ষোভও অনেকটা প্রশমিত হয়।”

তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ মানুষের কাছে আরও দ্রুত সরকারি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। যার নাম তিনি দিয়েছেন দুয়ারে সরকার। রবিবার এই নজির বিহীন ঘটনার মধ্যে দিয়ে যদি এই তৎপরতা বজায় থাকে তবে নিশ্চিতভাবেই বলতে হবে নেহাতই ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে দুয়ারে সরকারের শ্লোগান ছিলনা। ভোটের পরেও এভাবেই মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাবে প্রশাসন।

RELATED ARTICLES

Most Popular