Homeএখন খবর'না ঘরকা না ঘাটকা!' দল বদলে 'স্টেপনি' হয়েই ঝুলছেন খড়গপুরের প্রাক্তন...

‘না ঘরকা না ঘাটকা!’ দল বদলে ‘স্টেপনি’ হয়েই ঝুলছেন খড়গপুরের প্রাক্তন বিজেপি নেতারা

নিজস্ব সংবাদদাতা: কথায় বলে, খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল এঁড়ে গরু কিনে! বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসে এমনই অবস্থা খড়গপুরের চার প্রাক্তন গেরুয়াধারীর। সেপ্টেম্বরে হঠাৎই কলকাতায় তৃনমূল ভবনে গিয়ে খড়গপুরের বিধায়ক প্রদীপ সরকারের হাত ধরে তৃনমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন চমকে দেবেন খড়গপুরবাসীকে কিন্তু বদলে নিজেরাই যে চমকে যাবেন তা কি জানতেন? কিন্তু হয়েছে তাই। নতুন দলে শুধু এসেছেন তাই নয় বিজেপি থেকে বেশ কিছু সভ্য সনর্থককে নিয়েও এসেছেন তৃণমূলে কিন্তু এখনও অবধি পদ জোটেনি কারুরই। ফলে ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলছেন বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় জনতা মজদুর ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিল (BJMTUC) প্রাক্তন সভাপতি শৈলেন্দ্র সিং, সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক রাজদীপ গুহ, প্রাক্তন মন্ডল সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অজয় চট্টোপাধ্যায়, সজল রায়।

সদ্য তৃণমূলে আসা এই নেতারা দাবি করেছিলেন তাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার পরই প্রায় হাজার খানেক বিজেপি কর্মী সমর্থক তৃণমূলে যোগ দেয় তাঁদের পথ ধরে। গোলবাজারের রাম মন্দিরের সামনে রীতিমত ঢাক ঢোল বাজিয়ে সেই যোগদান অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তৃনমূলে পদ জোটেনি ওই চার নেতার। ফলে চরম সঙ্কটে তাঁদের অস্তিত্ব। তৃণমূলে যেমন নিজেদের অবস্থান তাঁদের নিজেদের কাছেই স্পষ্ট নয় তেমনি ছেড়ে আসা বিজেপির প্রাক্তন সঙ্গি সাথীদের কাছ থেকে প্রবল টোন টিটকারি শুনতে হচ্ছে তৃনমূলের ‘স্টেপনি’ বলে। বিজেপির পার্টি অফিস ছেড়ে এসেছেন আর তৃনমূলের পার্টি অফিসে যেতে পারছেন না। শৈলেন্দ্রর একটি অফিস আছে ইন্দায় , সেখানেই মাঝে মধ্যে বসেন এঁরা।

কেন তৃনমূলের পার্টি অফিসে যেতে পারছেননা? প্রশ্ন করায় এক দলত্যাগী বিজেপি নেতা জানালেন, ‘আমরা বিধায়কের হাত ধরেই তৃনমূলে গেছিলাম ফলে যেতে হলে তাঁর পার্টি অফিসেই যেতে হয়। সেখানে গিয়ে বসতে হয় সাধারন তৃনমূল কর্মীদের সঙ্গে। বিধায়ক প্রদীপ সরকার আমাদের সম্মান দেন কিন্তু তাঁর অনুগামীরা আমাদের করুনার চোখে দেখেন। বিজেপিতে আমরা কোনও না কোনও টিমের নেতা ছিলাম, আমাদের কিছু অনুগামী ছিল কিন্ত এখানে আমরাই বিধায়ক অনুগামী। বিধায়কের আগের অনুগামী যাঁরা গত পাঁচ সাত বছর ধরে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তারা জায়গা ছাড়বে কেন?”
এই নেতাদের এখন এমনই অবস্থা যে বিজেপির প্রাক্তন সাথী, কর্মীদের দেখলেই মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজতে হচ্ছে। কেউ বলছেন, ‘কি দাদা ! এখনও কিছু হলনা?’ আবার কেউ বলছেন, ‘দাদা যে স্টেপনি হয়ে গেলেন? দরকারে লোক জোগাড় করাতে তৃনমূল কাজে লাগাচ্ছে আর কাজ ফুরালেই পাজি!’

এর সঙ্গে ফাও হিসাবে জুটছে বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে ‘বেইমান’ অপবাদও। বিজেপির এক শহর নেতা জানিয়েছেন, “ওনারা যেদিন দলত্যাগ করেন সেই ঘটনার আগে আমাদের তৎকালীন ওই শ্রমিক নেতা শৈলেন্দ্র সহ বেশ কয়েকজন কর্মী বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মী নিয়োগ করতে তৃনমূল নেতা নির্মল ঘোষের লোকেদের হাতে বেধড়ক মার খান। আমরা একটা এফআইআর করেছি। পুলিশ সেই ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ঠিকই কিন্তু আইনি লড়াইটা চলছে। সরকারের বদলের পর আমরাও ছেড়ে কথা বলবনা। কিন্ত ঘটনা হল একজন নেতা তৃনমূলের হাতে মার খেয়ে তৃনমূলেই যোগদান করলেন? তাহলে এই নেতাদের কী বলবেন? আর সেই কর্মীরাই বা ছাড়বে কেন যাঁরা ওনার সাথে গিয়ে মার খেয়েছিল? তারাই হয়ত এখন টোন টিটকারি করছে। যদিও এটা করা উচিৎ নয়। আমরা আগেই বলেছিলাম যে এই সময়ে যাঁরা তৃনমূলে যায় তাঁদের মাথা খারাপ।”

জানা গেছে দল ত্যাগের এই চার নেতার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা অনুযায়ী শৈলেন্দ্রকে জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি, রাজদীপকে জেলার একটি পদ এবং বাকি ২জনকে খড়গপুর শহরের কোনো পদ দেওয়া হবে আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু সমস্যা হল কাকে সরিয়ে সেই পদে নিয়ে যাওয়া হবে? তাহলে আগের জন ছেড়ে কথা বলবে কেন? এই পরিস্থিতিতে এদের দলের সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি ইত্যাদি কিছু পদ দিলেও কিছুটা মুখ রক্ষা হয়।

তৃনমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার অবশ্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দলের সাংগঠনিক সর্বেসর্বা সুব্রত বক্সী থেকে খোদ দলনেত্রীর কাছেও দরবার করেছেন তিনি যাতে এই চারজনকে কোথাও জুড়ে দেওয়া যায়। প্রদীপ জানিয়েছেনও, ‘বিজেপি থেকে অনেকে এসেছিলেন। ওঁদের যাতে দলের স্বার্থে কোনও দায়িত্ব দিয়ে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয় সেই আবেদন দিদির কাছে করেছি।’‌ মেদিনীপুরে সার্কিট হাউজ়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পৌঁছন প্রদীপ। সঙ্গে ছিলেন সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা প্রয়াত সাংসদ নারায়ণ চৌবের বৌমা হেমা চৌবে। হেমাকে জেলা যুব তৃণমূলের সহ–সভাপতি করে দেওয়ার কথা জানান তৃণমূলনেত্রী। তারপরেই গত সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপি ছেড়ে আসা শৈলেন্দর সিং, রাজদীপ গুহ, সজল রায়দেরও পদ দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন প্রদীপ। কিন্তু সে বিষয়ে কোনও কথা দেননি নেত্রী।

দলত্যাগী নেতাদের অবশ্য ভরসা দিয়েছে পিকের টিমও এমনটা দাবি করেছেন ওই চার নেতার একজন। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিজেপির অনেকেই এখনও তৃনমূলে আসার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন কিন্তু আমাদের অবস্থা দেখে থমকে রয়েছেন আর আমরাও ভরসা করে তাঁদের জন্য এগুতে পারছিনা।’

RELATED ARTICLES

Most Popular