Homeএখন খবরআজও পঞ্চমুন্ডি আসনে বসে চামুন্ডা রুপে পুজা করা হয় দরখলার বনদেবী মা...

আজও পঞ্চমুন্ডি আসনে বসে চামুন্ডা রুপে পুজা করা হয় দরখলার বনদেবী মা দমদমার

পলাশ খাঁ, গোয়ালতোড় :- পঞ্চমুন্ডি, তিনমুন্ডি ও একমুন্ডি আসনে বসে চামুন্ডা রুপে পুজা করা হয় বনদেবী মা দমদমার। ২০০ বছরের পুরানো রীতি মেনেই আজও আয়োজন করা হয় কুমারী পুজোর।পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা -৩ ব্লকের দরখলা একটি বর্ধিঞ্চু গ্রাম। এই গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন বনদেবী মা দমদমা। নিত্যাপুজা হলেই প্রতিবছর মাঘ মাসের রটন্তী চর্তুদশীতে মায়ের পুজো হয় সাড়ম্বরে। আয়োজন করা হয় বিশাল মেলার।

গ্রামের ঘোষাল পরিবারের হাতে এই দেবীর আরাধনার দায়িত্ব থাকলেও পুজোর এই কটা দিন মা দমদমা হয়ে উঠেন এলাকার দেবী। এলাকাবাসীর বিশ্বাস মা চামুন্ডা শুম্ভ নিশুম্ভ কে বধ করে দরখলাতে দমদমা রুপে বিরাজ করেন।
কথিত আছে ওড়িষ্যার এড়াদহ থেকে তারাপতি ঘোষাল, পশুপতি ঘোষাল ও রমাগতি ঘোষাল নামের তিন তান্ত্রিক ঘুরতে ঘুরতে দরখলা গ্রামে এসে পৌঁছান। তিন জনেই ছিলেন মহাসাধক ও তান্ত্রিক। সেই সময় ওই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপুর্ণ। তারউপর হিংস্র জন্তুদের উপদ্রব ছিল খুব। ফলে গ্রামের শেষ প্রান্তে রাতের বেলা তো দুরের কথা দিনের বেলাতেও যেতে ভয় পেতেন এলাকার মানুষজন।

সেই ঘোর জঙ্গলের মাঝে একটি বট গাছের নীচে তিন তান্ত্রিক তন্ত্র সাধনা করতেন পঞ্চমুন্ডি, তিনমুন্ডি ও একমুন্ডি আসনে বসে। অমাবস্যা তখনো দুই দিন বাকি। এমনই এক রাত্রে তিন সাধক সাধনায় মগ্ন এমন সময় ঘোর অন্ধকার কেটে যেন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটলো। চারিদিকে আলোকময় হয়ে উঠলো সেই জঙ্গল। কিন্তু সাধকত্রয় ধ্যানে মগ্ন।

তখনই আকাশবানী হলো যে আমি চামুন্ডা। শুম্ভনিশুম্ভ কে বধ করে এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রয়েছি। এখানে আমার পুজো কর গ্রামের সকলের মঙ্গল হবে। আর আমি এখানে বিরাজ করবো দমদমা রুপে। তারপরেই সেই আলো আবার অন্ধকার হয়ে যায়। তাদের ধ্যান ভাঙ্গলো গভীর এক ঘোরের মধ্যেই। যা শুনলেন তা কি তাদের ভ্রম না সত্যি? কিন্তু তিনজনেরই ভ্রম কি ভাবে হতে পারে? পরের দিনই রটন্তী চতুর্দশী তে সাধকত্রয় মায়ের নিরাকার মুর্তিতে পুজো শুরু করেন।

সাধকত্রয়ের শুরু করা পুজো যা এখনো নিয়ম ও নিষ্ঠা ভরেই হয়ে আসছে।
গ্রামের মানুষের বিশ্বাস তাদের যে কোনো আপদে বিপদে মা দমদমা সর্বদা তাদের সাহায্য করে থাকেন। সেই সম্বন্ধে মায়ের অনেক অলৌকিক গল্পগাঁথাও শোনা যায়। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে খড়িকাশুলি গ্রামের এক গোয়ালার একটি মহিষ হারিয়ে যায়৷ মায়ের কাছে মানত করার পর সেই মহিষ খুঁজে পাওয়া যায়৷ একবার মন্দির সংলগ্ন মোলবাঁধ সংস্কারের কাজ হচ্ছিল। ঠিকাদার অনেক রাত্রী পর্যন্ত মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কাজ করতেন। রাত্রীতে কাজ করায় মায়ের সমস্যা হতো। মা সেই ঠিকাদার কে একদিন স্বপ্নে দেখা দিয়ে রাত্রীতে কাজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু সেই ঠিকাদার মায়ের নির্দেশ অমান্য করে পরের রাত্রীতেও কাজ করতে শুরু করেন। ফলে সেই ঠিকাদার কে মায়ের রোষে পড়তে হয়। তিনটি মেশিন সম্পুর্ন ভাবে বিকল হয়ে পড়ে সেই রাত্রেই।

গ্রামের ঘোষালরা এই পুজোর দেখভাল করেন। তাদের চারটি পরিবারেই পালা করে পুজো করেন চারদিনে চারজন। তাদের মধ্যে সুধাংশু ঘোষাল, হিমাংশু ঘোষাল জানান পুজোতে প্রতিদিন পিতলের হাঁড়িতে পাথরের উনুনে আতপ চালের ক্ষীর ভোগ পরমান্ন দেওয়া হয়। নিয়ম মেনে প্রতিবছর কুমারী পুজো করতেই হবে। অন্যথায় হলে চলবে না। তবে মায়ের কোনো মুর্তি নেই। হাতি ঘোড়া ঠাকুর কেই আমরা চামুন্ডা রুপে পুজো করে থাকি। মায়ের কোনো চাউনি দেওয়া মন্দির নেই। গাছের নীচেই মা বিরাজমান।

পুজোকে উপলক্ষ করে চারদিন ধরে চলে মেলা। মেলার এই বছর ২৬ বছর পুর্ণ হচ্ছে। মেলায় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মেলা কমিটির পক্ষ থেকে। মেলা কমিটির সভাপতি বাসুদেব ঘোষ জানান, মা দমদমা কে আমরা চামুন্ডা রুপে পুজো করে থাকি। তাকে কেন্দ্র করেই এই মেলা। মেলাতে দুরদুরান্ত থেকে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে পুজো দেওয়ার জন্য৷ স্থানীয় বাসিন্দা মৃণাল রায় জানান, ” আমাদের এলাকার মা দমদমা জাগ্রতা দেবী। পুজোর এই কটা দিন দরখলা, নয়াবসত সিদাডিহি বড়পাড়া প্রভৃতি ২০ – ৩০’টি গ্রামের মানুষ জোড়ো হয়। হয়ে উঠে মিলন ক্ষেত্র।

RELATED ARTICLES

Most Popular