Homeএখন খবরজঙ্গলে দানব দাঁতালের কব্জায় দুই হুলা পার্টির সদস্য! মৃত ১, আহত আরও...

জঙ্গলে দানব দাঁতালের কব্জায় দুই হুলা পার্টির সদস্য! মৃত ১, আহত আরও ১

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোয়ালতোড় : দাঁতালের ভয়াবহ রূপ দেখল জঙ্গল, দেখলেন হাতি তাড়াতে যাওয়া হুলা পার্টির সদস্যরাও। রুখে দাঁড়ানো এক দাঁতাল কব্জায় নিল দু’জন হুলা পার্টির সদস্যকে। একজনকে পায়ে চেপে রেখে অন্যজনকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে রাখল সেই দানব দাঁতাল। সাক্ষাত মৃত্যুরূপী যমদূতের সেই রুদ্ধশ্বাস ভয়াবহ দৃশ্য দেখলেন বনকর্মী সহ প্রায় ৪০ হুলাপার্টির সদস্য। এরপর হুলাপার্টির এক সদস্যকে পায়ের তলায় পিষে দিয়ে অন্যজনকে দুরে ছুঁড়ে দেয় ওই ঘাতক দাঁতালটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে একজনের, অপরজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তার অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গেছে।

শনিবার রাতে এই মর্মান্তিক অথচ ভয়াবহ ঘটনার স্বাক্ষী রইলপশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ের গোহালডাঙ্গার জঙ্গল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত যুবকের নাম কালো টুডু (২৬)। আহতের নাম সনাতন সরেন। দুজনেরই বাড়ি গোহালডাঙ্গা গ্রামেই। এলাকাটি রূপনারায়ন ফরেস্ট ডিভিশনের হুমগড় রেঞ্জের বারোমাস্যা বিটের অন্তর্গত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে গত কয়েকদিন ধরেই গোয়ালতোড়ের টাঙ্গাশোলের জঙ্গলে ১৬ থেকে ২০টি হাতির একটি পাল আস্তানা গেড়েছিল। এলাকার কৃষকদের ক্ষেতে আমন চাষের জন্য তৈরি করা সদ্য গজিয়ে ওঠা চারার ব্যাপক ক্ষতি করছিল হাতির পালটি।

এরপরই বনদপ্তরের হুমগড় রেঞ্জের উদ্যোগে হাতির পালটিকে লালগড়ের কাঁড়াশোলের জঙ্গলের দিকে তাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় টাঙাশোল, গোহালডাঙ্গা,দক্ষিনমারি ইত্যাদি গ্রামের প্রায় ৪০ জনের হুলাপার্টির সদস্যদের নিয়ে বনকর্মীরা সন্ধ্যার পরে এই তাড়ানোর কাজ শুরু করেছিল।
হুলাপার্টির এক সদস্য কার্তিক কিস্কু জানিয়েছেন, হাতির পালের বড় অংশটি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেও ৬টি হাতির একটি দল পিছিয়ে পড়ছিল। আর এই দলটি পিছিয়ে পড়ায় একটি দাঁতাল হাতি এদের পাহারায় ছিল। আমরা মশাল জ্বালিয়ে, জোরালো টর্চ নিয়ে, পটকা ফাটিয়ে এবং মুখে আওয়াজ করে হাতির পালটিকে তাড়া করছিলাম। দুটি জঙ্গলের মধ্যবর্তী একটি ফাঁকা জায়গায় যখন আগের দলটি জঙ্গলে ঢুকে গেছে এবং পেছনের দলটি প্রায় জঙ্গলে ঢোকার মুখে তখনই হঠাৎই রুখে দাঁড়ায় দাঁতাল হাতিটি এবং আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমরা ঘুরে নিরাপদ জায়গায় পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু রাস্তায় পড়ে যায় কালো ও সনাতন। দাঁতালটি কালোকে পায়ের তলায় পিষে দিয়ে সনাতনকে শুঁড়ে তুলে ছুঁড়ে দিয়ে নিমেষে পালিয়ে যায়।

সনাতন অবশ্য কিছুটা দুরে ঝোপের মাঝে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কিন্তু কাল টুডু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আহত সনাতন কে উদ্ধার করে গোয়ালতোড়ের কেওয়াকোল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাতেই। হুমগড় রেঞ্জের আধিকারিক বাবলু মান্ডি জানিয়েছেন, হাতির পালটি বাঁকুড়ার দিক থেকে ঢুকে ওই এলাকায় কয়েকদিনের জন্য স্থায়ী হয়ে যাওয়ায় ফসলের প্রচুর ক্ষতি করছিল তাই পালটিকে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আহত ব্যক্তি বর্তমানে বিপদ মুক্ত। বনদপ্তরের আইন মেনেই নিহতের পরিবার ক্ষতিপুরন পাবেন।

উল্লেখ্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হাতিকে তাড়ানোর জন্য বনকর্মীদের সাহায্য করার জন্য জঙ্গলমহলের গ্রামগুলির যুবকদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়। এঁদের স্থানীয় ভাষায় হুলা পার্টি বলা হয়। হাতি তাড়ানোর সময় বনদপ্তরের নিয়ম অনুসারে এঁরা দৈনিক মজুরি পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি জঙ্গলে হাতির উপস্থিতি ,সংখ্যা ,অবস্থান ইত্যাদি নানা তথ্য এরাই বনদপ্তরকে পাঠিয়ে থাকেন তার ভিত্তিতে বনদপ্তর জঙ্গলবাসীর জন্য হাতির গতিবিধি সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পাঠিয়ে থাকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular