Homeএখন খবরখড়গপুরে আত্মহত্যার আগে নাতিকে ফোন করল দাদু, মোবাইলে গেম শেষ করে নাতি...

খড়গপুরে আত্মহত্যার আগে নাতিকে ফোন করল দাদু, মোবাইলে গেম শেষ করে নাতি দেখল দাদু ঝুলছে

নিজস্ব সংবাদদাতা: মোবাইলে গেম খেলছিল নাতি। বাড়িতে সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে দাদুর মাথা গরম ছিল। এরপর কাছেরই একটি বাগান, যেখানে রাত পাহারায় থাকত দাদু বিকালে সেখানেই চলে যায়। একটু পরে নাতির কাছে দাদুর ফোন আসে, গলায় দড়ি দিচ্ছি আমি। নাতি বলল, যাচ্ছি। কিন্তু গেমটা শেষ হয়নি যে তখনও। নাতি গেম শেষ করতেই মনে পড়ল দাদু গলায় দড়ি দেওয়ার কথা বলেছিল! সঙ্গে সঙ্গে ছুট বাগানের দিকে। গিয়ে দেখল দাদু তখন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।


বুধবার এরকমই ঘটনা ঘটেছে খড়গপুর শহর লাগোয়া গ্রামীন খড়গপুরের শ্রীকৃষ্ণ কলোনি এলাকায়। জানা গেছে ৫৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম সুভাস বায়েন। দীর্ঘ দেহের অধিকারী হওয়ায় এলাকার মানুষ গ্রামের অন্য সুভাস নাম ধারির থেকে আলাদা করতে লম্বু সুভাস বলে ডাকতেন। ওই নামেই অধিক পরিচিত ছিল সে।
সুভাষের ছেলে প্রশান্ত জানিয়েছেন, ” বাবা একটু রগচটা প্রকৃতির ছিলেন সঙ্গে মানসিক ভারসাম্য জনিত সামান্য সমস্যা ছিল। আমাদের এলাকায় আইআইটির এক অধ্যাপকের একটা বাগানবাড়ি রয়েছে। বাবা ওই বাগানের কেয়ারটেকার ছিলেন। রাতে তো বটেই দিনের বেলাতেও কখনও কখনও ওখানেই থাকতেন। বাড়িতে ২টা দুধেল গরু আছে। সেই দুধ নিজেই দোয়াতেই এবং ওই অধ্যাপক ছাড়াও আরও ২জনকে দুধ বিক্রি করতেন। ঘরের প্রায় কারুর ওপরেই সন্তুষ্ট থাকতেন না। সব সময় একটা রাগ রাগ ভাব। আসনটি বুধবার ওই গরুর দুধ দোয়াতে গিয়ে অনেকটা দুধ মাটিতে পড়ে যায়। বিষয়টি দেখে বাবার প্রথমে মাথা গরম হয়ে যায়। সবাই কেয়ারলেস বলে একটু চিৎকার চেঁচামেচি করেন। কিছুক্ষন পরে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় বাবা। তিনজনকে ওই দুধ তিনি কী করে দেবেন? এঁদের মধ্যে এক অধ্যাপক নাকি ভীষন বকাবকি করেন সময়মত দুধ না পেলে। এরপর বাবা দুধ নিয়ে চলে যায়। ওখানে কি হয়েছিল জানিনা বাড়ি ফিরে বাবা বিমর্ষ হয়েছিলেন। দুপুরের কিছু পরে বাগানে চলে যায়।”
প্রশান্ত জানায়, ” আমার দিদির বিয়ে এই গ্রামেই হয়েছে। দিদির সঙ্গে বাবার কিছুটা সখ্যতা ছিল। সন্ধ্যের মুখে আমার দিদির ছেলে মানে আমার ভাগ্না কাঁদতে কাঁদতে এসে জানায় দাদু বাগানে গলায় দড়ি দিয়েছে। আমরা দৌড়ে যাই, পুলিশ আসে, দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু বাবা ততক্ষনে মারা গিয়েছে। এরপরই আমরা জানতে পারি মানে ওই ভাগ্না যে কিনা এক অল্প বয়সী কিশোর আমাদের জানায়, বাবা ফাঁসি দেওয়ার আগে তাকে ফোন করে বলেছিল, আমার আর ভাল লাগছে না, আমি মরে যাব। বাগানে এসেছি, এখানেই গলায় দড়ি দেব। ওই বাচ্চা ছেলে হয়ত বিষয়টা অনুধাবন করেনি ঠিক মত। বাড়ির মোবাইলে গেম খেলছিল। গেম খেলার পর তার হঠাৎই মনে পড়ে দাদুর কথা। ও মাঝে মধ্যে দাদুর সঙ্গে বাগানে সময় কাটাত। সে দৌড়ে বাগানে যায়। আর বাগানে গিয়ে দেখে দাদু ততক্ষনে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছে।”
বৃহস্পতিবার খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে সুভাস বায়েনের। ওই দিনই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ঘটনা শোনার পর হতবাক পুরোগ্রাম কিন্তু ওই কিশোরকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই কারন আমরা সবাইতো আমাদের কিশোর ছেলেদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে বসে আছি আর তারা গেম খেলছে, খেলেই যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular