Homeএখন খবরহাতের মুঠোয় আয়ুর্বেদ।। করোনা প্রতিরোধে করণীয় উপায়।। ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ

হাতের মুঠোয় আয়ুর্বেদ।। করোনা প্রতিরোধে করণীয় উপায়।। ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ

করোনা আবহে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দিনচর্যা ও
ঋতুচর্যার গুরুত্ব”আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ।
আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল অফিসার(উঃ চন্ডিপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)

বিশ্বজুড়ে করোনা প্রতিরোধে একের পর এক এলোপ্যাথি ওষুধ যখন তার সঠিক কার্যক্ষমতা প্রমাণে বারেবারে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং অত্যন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত প্রমাণিত হওয়ার তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি এমতবস্থায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞান তার সহস্রাধিক বৎসরের গবেষণালব্ধ ও স্থির মীমাংসা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে যে অপরিবর্তনশীল সিদ্ধান্তের দ্বারা আধুনিক গবেষণার মাপকাঠি উত্তীর্ণ করে
করোনা দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন
করে চলেছে তা আরেকবার প্রমাণ করে যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আয়ুর্বেদ এক অদ্বিতীয় ও অভ্রান্ত ধ্রুবসত্য।
এই অতি মহামারী কালে করোনা প্রতিরোধে আয়ুর্বেদ নীতিমালা অত্যন্ত সাফল্যজনক হারে দেশ থেকে বিদেশে প্রশংসিত
হওয়ায় সেই সাফল্যগাঁথার উপর ভিত্তি করে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ ও আয়ুশ মন্ত্রালয় প্রকাশিত করেছে “NATUONAL CLINICAL MANAGEMENT PROTOKOL ON AYURVEDA AND YOGA FOR MANAGEMENT OF COVID 19”

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানকে একমাত্র ভরসা যোগ্য মনে করে ভারতে আয়ুর্বেদের গ্লোবাল সেন্টার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে মহামারী পর্বে বিশ্বজুড়ে একক প্রাধান্য পাচ্ছে আয়ুর্বেদ ও আয়ুর্বেদ বর্ণিত দিনচর্যা ও ঋতুচর্যা।                                               • দিনচর্যা কি?                                        এককথায় বলতে গেলে আয়ুর্বেদ সংহিতা মতে প্রত্যহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ক্রমানুযায়ী
নিয়মের মাধ্যমে জীবনযাত্রার সূচি সমুহ পালন করাকেই দিনচর্যা বলে।
যেমন: ভোর বেলা সূর্যোদয়ের পূর্বে বিছানা ত্যাগ করা তারপর
শৌচ কর্ম সেরে ভেষজ অর্ক,বাবুল,করঞ্জ,অর্জুন ইত্যাদি দিয়ে দন্ত ধাবন।
চোখে অঞ্জন প্রয়োগ, নস্য কর্ম, তাম্বুল সেবন, অভঙ্গ,ব্যায়াম,স্নান,ভোজন ইত্যাদি।

ঋতুচর্যা কি?                                         আয়ুর্বেদে প্রত্যেক ঋতুর নির্দিষ্ট ঋতুচর্যা রয়েছে অর্থাৎ কোন ঋতুতে কি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মাবলী পালন করা উচিত এবং কি কি বর্জন করলে ঋতুকালীন রোগ থেকে দূরে থাকা যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়।

শীত ঋতুচর্যায় আয়ুর্বেদ:

•বিভিন্ন আয়ুর্বেদ সংহিতা অনুযায়ী শীতকালে মানুষের অগ্নিবল অর্থাৎ পরিপাক ক্ষমতা যথেষ্ট থাকে তাই সারাদিনে বারেবারে মধুর, লবণ ও অম্ল রসযুক্ত খাদ্যদ্রব্য সেবন করা করা উচিত।
তবে অধ্যসন অর্থাৎ খিদে পাওয়ার পূর্বেই খাদ্য গ্রহণ করা কিন্তু নৈব নৈব চ।

•এই ঋতুতে প্রত্যহ পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল মাখার অভ্যাস করা উচিত এতে শরীর পুষ্ট হয়, শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়ে,
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে, মাংসপেশী সুদৃঢ় হয় এছাড়াও অভ্যঙ্গ দৃষ্টিপ্রসাদন করে, তারুণ্য বজায় রাখে, ক্লান্তি নাশ করে, এটি নিদ্রদায়ক।সর্বোপরি ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অভ্যঙ্গ এক অদ্বিতীয় উপাচার।
তবে জ্বর,সর্দি,কাশি, অজীর্ণ রোগী দের ও মাসিক কালে অভ্যঙ্গ নিষেধ।

• এই ঋতুতে শীতের শাক – সব্জি, মরসুমি ফল, গুড়ের তৈরি খাওয়ার, ঘি,ঔষধী সুরাপান ও ইক্ষু রস, দুগ্ধজাত দ্রব্য সেবনীয়।                                   • আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন ঋতুতে অনুপান ভেদে হরীতকী সেবনের পরামর্শ রয়েছে যা ঋতু হরীতকী নামে পরিচিত।
শীতকালে পিপুল চুর্নের সাথে হরীতকী চূর্ণ মিশিয়ে সেবন করলে শরীরে দোষের সাম্যতা বজায় থাকে যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রমতা তৈরি করে এটি ঋতু হরীতকী নামে পরিচিত।                            • শীতে স্নানবিধিতে দ্রোণী অবগাহন অর্থাৎ বাথ টবে উষ্ণ জলে স্নান করা উচিত।

•আচার্য বাগভট মতে শীতকালে ঘরের মধ্যে জ্বলন্ত অঙ্গার রেখে ঘরকে উষ্ণ রাখার কথা বলা হয়েছে যা শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচার উপায় বলে ধরা হতো যা বর্তমানের রুম হিটারের ন্যায়।                    • শীতকালীন অসুখ বিসুখ প্রতিরোধে আয়ুর্বেদ মুষ্টিযোগ:                                               •শীতকালীন সর্দি কাসিতে তুলসী ও মধুর ব্যাবহার যথেষ্ট ফলপ্রসূ।।                                                •কাশি পুরনো হলে এক্ষেত্রে বাসক পাতার রস চিনি মিশিয়ে সেবনীয়।                                •ঘুসঘুসে জ্বর থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে গিলোয় স্বরস চার চামচ পরিমাণ প্রত্যহ দিনে দুইবার করে দিন সাতেক সেবনীয়।                                    •ত্বকের রুক্ষতা থাকলে গ্লিসারিন,গোলাপজল, লেবুর রস সমপরিমাণ মিশিয়ে লোশনের মতো গায়ে হাতে মাখলে রুক্ষতা থেকে রেহায় পাওয়া যায়।

•কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় তিন চামচ মতো এরণ্ডের তেল গরম দুধ বা উষ্ণ জলের সাথে মিশিয়ে রাতে সেব্য।অথবা গোটা কয়েক মুনাক্কা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।                                  • এই শীতকালে বাতের ব্যথার রোগীরা অনেক সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়ার কারণে কষ্ট পান সেক্ষেত্রে বাত নাশক আয়ুর্বেদ তেলের মালিশ সাথে উষ্ণ স্বেদ দিলে উপকার মেলে।                    • হজমের সমস্যায় জোয়ানের অর্ক এক চামচ পরিমাণ দিনে দুবার সেবনীয় সাথে গুরুপাক খাদ্যদ্রব্য সেবন ও অধ্যসন থেকে বিরত থাকুন।

আয়ুশ ক্বাথ:
করোনা আবহে দেশজুড়ে চায়ের জায়গায় স্বাস্থ্যকর চা হিসেবে আয়ু স ক্বাথ বর্তমানে সর্বজনবিদিত।
দেহের অনাক্রমতা বৃদ্ধিতে আয়ুশ ক্বাথ সেবনের অভ্যাস যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।                        উপরিউক্ত মুষ্টিযোগগুলো রোগের প্রাথমিক অবস্থায় সেবনীয় কিন্তু পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে কোনও আয়ুর্বেদাচার্যের মতামত প্রার্থনীয়। সকলে ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular