Homeএখন খবরউত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিককে নম্বর বাড়ানোর দাবিতে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ,...

উত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিককে নম্বর বাড়ানোর দাবিতে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, প্রধানদের হেনস্থা! উদ্বেগ শিক্ষক সংগঠনগুলির

ঘেরাও

নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা কালে রাজ্য সরকার ঠিক করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবেনা। মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষায় উর্ত্তীণ বা অনুর্ত্তীণ হবে ছাত্রছাত্রীরা। আর এই মূল্যায়ন মূল্যমান নির্ধারণ করার দায়িত্ব বর্তেছে স্কুলগুলোর ওপরে। যে পদ্ধতিতে এই মূল্যায়ন করা হচ্ছে তার বেশিরভাগটাই স্কুলে বিভিন্ন সময়ে হয়ে যাওয়া পরীক্ষা, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বা ফরমেটিভ, প্র্যাকটিক্যাল, প্রজেক্ট ইত্যাদি যার সবটাই স্কুলের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষক থেকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এই পদ্ধতিতে যতদূর সম্ভব বেশি পড়ুয়াদের পাশ করিয়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু মারাত্মক সঙ্কটের মুখে পড়তে চলেছে মেধা। বেশি বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে পাশ করানোর গড়ে চলে আসবে মেধাবী পড়ুয়ারাও যাদের প্রকৃত মূল্যায়নের জায়গা থাকছেনা। এই আশঙ্কা থেকেই রাজ্যে একাধিক পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে গেছে। বিশেষ করে যারা মনে করেছিল পরীক্ষায় ভালো ফল করবে।

এই সঙ্কটের পাশাপাশি আরও একটি যে সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে তা’হল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ওই অভ্যন্তরীণ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য পড়ুয়া, অভিভাবক এবং অন্যান্যদের স্কুলের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকদের ঘিরে বিক্ষোভ, অশ্রাব্য গালাগালি এবং হেনস্থা। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার এমনই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে কুচবিহার ও বীরভূমে। কুচবিহারে বুধবার থেকে এবং বীরভূমে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রধান শিক্ষকরা হেনস্থার শিকার হয়ে চলেছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির প্রধানদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস এন্ড হেডমিস্ট্রেসস’ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি।

মাইতি জানিয়েছেন, ” গত কয়েকদিন কুচবিহারের মহিষবাথান এর মনীন্দ্রনাথ হাই স্কুলের মাননীয় প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল মজুমদারকে নাম্বার বাড়ানোর নামে বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি কৃষ্ণেন্দু আইচ যিনি আবার পাশের একটি বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক তার নেতৃত্বে একদল অভিভাবক অভিভাবিকা ছাত্র-ছাত্রী তাকে ঘিরে রেখে অশ্রাব্য গালিগালাজ হুমকি-ধমকি এমনকি প্রাণনাশেরও কথা বলে! তিনি অসুস্থ বোধ করছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বিষয়টি আমরা পর্ষদ সভাপতি ড: কল্যাণময় গাঙ্গুলী মহাশয় কে এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর কমিশনার সাহেবকে গতরাত্রে জানিয়েছি। ড: গাঙ্গুলী গতরাত্রে শ্রী মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেন। শ্রী মজুমদার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঐ বিদ্যালয়ের সভাপতি আইচ নানান ভাবে প্রধান শিক্ষক শ্রী মজুমদারকে হুমকি- ধমকি দিচ্ছেন।”

চন্দনবাবু বলেন, অথচ ওই সভাপতি বেআইনি ভাবে গত ৫বছর ধরে পদে রয়েছেন যা একজন শিক্ষক হয়ে থাকা যায়না। বৃহস্পতিবার ওই প্রধান শিক্ষককে তিনি বিদ্যালয় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। একাডেমিক কাউন্সিলের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের কর্মীদেরও পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় তিনি আবার বিষয়টি পর্ষদ সভাপতিকে জানিয়েছেন।”
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বীরভূমের সিউড়ি মহাকুমার মহম্মদ বাজার ব্লকের ডামড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী তুষার মন্ডলকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে আক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছে বিদ্যালয় প্রধানদের ওই সংগঠনের তরফে। জানা গেছে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে একদল দুস্কৃতির নেতৃত্বে অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তিনি ঘেরাও হয়ে আছেন। চন্দনবাবু পর্ষদ ও শিক্ষা দপ্তরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন অবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করে ওই প্রধানশিক্ষকের নিরাপদ করা হোক।

রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা এরকমই কিছু ঘটনা প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী। কিংকরবাবু বলেন, “ঠিক এই আশঙ্কাই করছিলাম আমরা। আমরা আগেই বলেছিলাম কোনো ধরনের পরীক্ষা না নিয়ে, মূল্যায়ন না করে নিচু ক্লাসের নম্বরের ভিত্তিতে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার সরকারি এই ভ্রান্ত নীতি কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সস্তায় পাশ করার বাসনাকে আরো দৃঢ় করল যা শিক্ষালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করবে। প্রকৃত মেধা তার মর্যাদা পাবে না। শিক্ষার মান ক্রমাগত আরো নিম্নমুখী হবে। শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে তফাৎ ক্রমাগত কমবে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনার জন্য সরকারের এই সস্তা নীতিই দায়ী বলেই আমি মনে করি। এই নজির আগামী দিনে বিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করবে সন্দেহ নেই।”

চন্দন কুমার মাইতি ও কিংকর অধিকারী দু’জনেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বিদ্যালয়গুলিতে শুরু হওয়া পাশ করানোর নামে এই বিক্ষোভ, হেনস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে রাজ্য জুড়েই এক অরাজক ব্যবস্থা তৈরি হবে। আজ যা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের জন্য শুরু হয়েছে আগামী দিনে তা সমস্ত ক্লাশেই পাশ করানোর দাবিতে সংক্রমিত হবে এবং বিদ্যালয়গুলিতে অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ শুরু হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular