Homeরাজ্যজগন্নাথদেব দর্শন করতে বাড়তি কত ট্রেন ভাড়া ? হিসেব করছে বাঙালী

জগন্নাথদেব দর্শন করতে বাড়তি কত ট্রেন ভাড়া ? হিসেব করছে বাঙালী

বিশেষ সংবাদদাতা: সীমিত যা আয় তা দিয়ে সংসার চালিয়ে আর হয়ত যাওয়া যাবে না পুরী। আর হয়তো পুরীর সমুদ্রে স্নান করতে নামা হবে না, জগন্নাথ দর্শন হবে না মধ্যবিত্ত বাঙালীর। যে পুরী ওডিশা রাজ্যের হলেও বাঙালীর নিজস্ব, একান্ত আপন, ‘ বাঙালীর সেকেন্ড হোম ‘ । পুরীর সাথে কতদিনের সম্পর্ক বাঙালীর? শ্রীচৈতন্যদেবের সময়ে থেকে না কি আরও আগে থেকে? তার কোনও হিসেব নেই । একটু সময় পেলেই, হাতে একটু টাকা জমলেই ব্যাগ গুছিয়ে বাঙালী ছোটে শ্রী জগন্নাথ এক্সপ্রেস বা পুরী এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে । জয় জগন্নাথ বলে পাড়ি জমায় শ্রীক্ষেত্র নীলাচল । কারণ এত কম টাকায় পুণ্যলাভ, সমুদ্র দর্শন ও সমুদ্রে স্নান এবং দেদার আনন্দ কোথাও করা যায় না।

পুরী তাই বাঙালীর এত কাছের। কিন্তু তা বুঝি এবার দূরে সরে যাবে। কারণ হাওড়া থেকে পুরী যাওয়ার যে ট্রেন রুট, সেই রুটে ট্রেন চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল দফতর তথা নীতি আয়োগ। তার ফলে হাওড়া থেকে পুরী যাওয়া র ট্রেন ভাড়া বাড়তে চলেছে । সেই ভাড়া কত হবে তা এখনই জানা না গেলেও ওই ট্রেনের টিকিটের দাম যে বিমান ভাড়ার সঙ্গে কার্যত পাল্লা দেবে তা মনে করছেন অনেকে ।

পুরীর সাথে জড়িয়েআছে বাঙালীর আবেগ, রোমান্টিসিজম । জীবনে একবারও পুরী যাননি এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । অনেকেই আছেন যারা প্রতি বছর না হলেও দুই বছরের মধ্যে আবার পুরী বেড়াতে যান । কখনো বা জগন্নাথ দেবের টানে, কখনও বা সমুদ্রের পাড়ে বসে থেকে খাজা খেতে খেতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে । আমবাঙালী তো বটেই বাঙালীর অন্যতম প্রিয় চরিত্র ( সত্যজিৎ রায়ের) ফেলুদা, (নীহার রঞ্জন গুপ্তের) কিরিটি ও ( সমরেশ বসুর) গোগোল গিয়েছে পুরী । ছুটি কাটাতে পুরী বেড়াতে গিয়ে সেখানে জড়িয়ে পড়েছে তদন্তের কাজে।
সেই পুরী। যা বার বার গিয়েও পুরানো হয় না। সেই পুরী ও জগন্নাথ দেবের মন্দির যার সাথে জড়িয়ে আছে কত রহস্য, কত রোমান্টিকতা । সেই পুরী কী এবার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে বাঙালী র?এখন ট্রেন চালায়, ভাড়া নির্ধারণ করে রেল দফতর । এখন ট্রেন চালাতে যাত্রী প্রতি কিলোমিটার পিছু ৪৩পয়সা ভরতুকি দেওয়া হয় । এখন হাওড়া থেকে পুরী যেতে, একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্লিপার ক্লাসে ভাড়া পড়ে ৩৪০ টাকা, এ সি ( থ্রি টায়ার) ৮০৬ টাকা, এ সি ( টু টায়ার ) ১২১৫ টাকা ও প্রথম শ্রেণীর ভাড়া পড়ে ২০৫০টাকা । এছাড়া সাধারণ কামরায় হাওড়া থেকে পুরী যাওয়া র ট্রেন ভাড়া ১৬৫ টাকা। শিশু, বয়স্ক মহিলা ও সিনিয়র সিটিজেনরা নিয়ম অনুযায়ী ছাড় পান।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব ট্রেনকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে তার টিকিটের দাম কত হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে ওই সংস্থা। এখন রেল কর্তৃপক্ষ যে ভরতুকি দেয় ওই সব ট্রেনগুলিতে সেই ভরতুকির সুবিধা থাকবে না ।

ফলে টিকিটের প্রকৃত দাম ও বেসরকারি সংস্থার লাভ দুই মিলিয়ে টিকিটের দাম যা হবে তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে বলেই আশঙ্কা বিভিন্ন বিরোধী দলের ও সাধারণ মানুষেরও।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে যে দেশের ১০৯ টি রুটে ১৫১ টি ট্রেন বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি রুট। আর এই সব রুটের মধ্যে আছে হাওড়া পুরী এবং আসানসোল পুরী রুট। তাই বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে যাওয়া এই সব ট্রেনর ভাড়া বাড়লে পুরী যাওয়া ও আসার খরচ একধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে।
এই ভাড়া কত হবে তা জানা নেই কারোরই । তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন ওই সব ট্রেনে ভাড়া বিমানের ভাড়ার মতোই হবে । তার ফলে পুরী যাওয়া র আগেই বাড়তি আর্থিক বোঝা কত চাপবে তাই ভাবতে শুরু করেছে বাঙালী । তার ফলে অনেকেই হয়তো আগামী দিনে আর পুরী যেতে চাইবেন না ।
শুধু মাত্র পুরী নয়, হাওড়া থেকে রাঁচি, পুনে, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, সেকেন্দ্রাবাদ রুটের ট্রেনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে ।

কিন্তু বাঙালীর প্রধান চিন্তা পুরী যাওয়া নিয়ে । সাধারণ মানুষ যেমন নিজেরাই চলে যান পুরী দিন চারেকের জন্য । তেমনই বাঙলার যে সব ভ্রমণ সংস্থা আছে তাদের তালিকাতে যে জায়গা অবশ্যই আছে তা হল নীলাচল বা পুরীধাম । কোন কোন সংস্থা তো বছরে দু থেকে তিন বার পুরী ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখে। তাদের সাথে গেলে , পাঁচ দিনের জন্য, জন প্রতি খরচ পরে সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা । এর মধ্যেই ধরা থাকে যাতায়াত ও পুরীতে থাকা খাওয়ার খরচ। ” কিন্তু এবার যে কী হবে । পুরী যাওয়ার ট্রেন ভাড়া কত হবে তা বুঝতে পারছি না । ভাড়া যদি নাগালের বাইরে চলে যায় তাহলে তো আমাদের পুরীকে ভ্রমণের তালিকার বাইরে রাখতে হবে,’ বলে জানিয়েছেন একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্মকর্তা শুভ্রকান্তি দত্ত । আর কার রেল স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।

যদিও রেল বোর্ডেরচেয়ারম্যান বিনোদ কুমার যাদব দাবি করেন যে এর ফলে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে। ওই সব ট্রেনের কামরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে ও দেশের মধ্যে যে ট্রেন চলাচল করে তার মাত্র পাঁচ শতাংশ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে । এতে রেল যেমন লাভবান হবে তেমনই ওই সব ট্রেনে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করা হবে । এখনো হাতে সময় আছে।
কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত বাঙালী কে ভাবাচ্ছে এখন থেকেই । কারণ তাদের কাছে রেলের এই সিদ্ধান্ত তাদের সাধের পুরী কে করে দিচ্ছে ‘ হত্যা পুরী ‘।

RELATED ARTICLES

Most Popular