Homeএখন খবররাজ্যের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিই হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র, আতঙ্কে শিক্ষক, অভিভাবক, পরীক্ষার্থীরা

রাজ্যের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিই হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র, আতঙ্কে শিক্ষক, অভিভাবক, পরীক্ষার্থীরা

ওয়েব ডেস্ক : রাজ্যে এই মূহুর্তে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। তার ওপর আগামী ২রা জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের বকেয়া পরীক্ষা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাজ্যের একটা বড় অংশের স্কুল গুলিতে চলছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই উচ্চমাধ্যমিকের পুরোনো পরীক্ষাকেন্দ্র। এর ফলে একদিকে করোনা আতঙ্ক। অন্যদিকে, যদি ফের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে কলেজে ভরতি নিয়ে পড়ুয়াদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই দুইয়ের টানাপোড়েনে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে অভিভাবক ও পড়ুয়ারা।

স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন করে কোনো পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকা ঘোষণা করা হবে না। বরং বিধিনিষেধ মেনে পুরোনো পরীক্ষাকেন্দ্রেই বকেয়া পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ ফুট দূরত্ব থাকা বাধ্যতামূলক। এই কথা শোনার পর থেকে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের মধ্যেও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য শিক্ষামহলের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নতুন পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকা ঘোষণা করেনি। তবে যদি সত্যিই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হওয়া স্কুলগুলি পরীক্ষাকেন্দ্র হয় তবে সেক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের চরম বিপদে ফেলা হবে।

ইতিমধ্যেই নদীয়ার সাহেবনগর হাই স্কুল, জলপাইগুড়ির দেবীঝোরা হাই স্কুল, কোচবিহারের চিলাখানা হাই স্কুল, বর্ধমানের কাটোয়া ভারতী ভবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উত্তর কুসুম হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুরের নছিপুর আদিবাসী হাই স্কুল সহ রাজ্যের বহু পরীক্ষাকেন্দ্রে চলছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। এমনকি এই স্কুলগুলিতে হবে বকেয়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। জানা গিয়েছে, ২৮ শে জুনের পরে এই স্কুলগুলিতে আর পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ২ দিনের মধ্যে স্কুলগুলি জীবাণুমুক্ত করে সেগুলি পরীক্ষাকেন্দ্রের উপযোগী করে তুললেই কি তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যাচ্ছে?.

এ বিষয়ে শিক্ষক সংগঠন বিজিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সৌরেন ভট্টাচার্য্যর বক্তব্য, “উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থায় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ সোনার পাথরবাটির মতো। কারণ পরীক্ষা কেন্দ্রে দুটি বেঞ্চের মধ্যে তফাৎ দুই ইঞ্চিও থাকে না। কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিকে কোনওভাবেই পরীক্ষাকেন্দ্র করা উচিত নয়। তা করলে ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে।” রাজ্য শিক্ষক মন্ডলের তরফের মতে, রাজ্যে এখনও স্বাভাবিক হয়নি গণপরিবহণ। চলছে না ট্রেন। বাস-অটো চললেও তা সংখ্যায় কম। অনেকক্ষেত্রেই প্রয়োজনের থেকে বেশী ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী করে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবেন তা নিয়েও একটা অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

এসটিইএ-র তরফে অনিমেষ হালদার বলেন, “আমি ডায়মন্ড হারবারের ঝাপবেড়িয়া হাই স্কুলের শিক্ষক। এখানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চলছে। পরীক্ষাও নেওয়া হবে। প্রশাসন বলেছে ২৮ জুনের পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা হবে না। দুদিনের মধ্যে যথোপযুক্ত স্যানিটাইজেশন হবে কি না তা অনিশ্চিত।” পাশাপাশি আগের মতই এই পরীক্ষাগুলিও শুরু হবে সকাল ১০ টায় এবং শেষ হবে ১ঃ১৫ তে। তবে ১০ টার পরিবর্তে যদি সময়সূচী ১২ টায় নিয়ে যাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে গণ পরিবহনে কোনোরকম অসুবিধা হবে না।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। তার বক্তব্য, “উত্তরপাড়ার এই মেন ভেন্যুর এর অধীনে আছে অন্য পাঁচটি স্কুল। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হলে এখানে যারা পরীক্ষা দেবে শুধু তারাই নয় ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে অন্য স্কুলগুলিতেও।”

করোনার জেরে যেখানে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের হদিশ মিলছে সেখানে এই পরিস্থিতিতে উচ্চমাধ্যমিকের বকেয়া পরীক্ষাগুলি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিতে নিলে শিক্ষক-পরীক্ষার্থী সকলেরই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে এই ঘটনায় যে বড় সরকারী গাফিলতি রয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে।

এক শিক্ষক নেতার বক্তব্য, সরকার কী বলেছিল? এত পরিমানে পরিযায়ী শ্রমিক আসছে যে সবাইকে স্কুলগুলোতে কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্কুলে বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে তাঁদেরই রাখা হবে যাঁরা সর্বাধিক করোনা সংক্রমিত রাজ্য থেকে আসছেন। তাহলে স্কুলগুলোতে কারা আছেন? সরকার কোন ভরসায় পড়ুয়াদের ঠেলে দিচ্ছেন সেখানে?

RELATED ARTICLES

Most Popular