Homeরাজ্যউচ্চমাধ্যমিকে 'স্টার মার্কস', মানুষের মনে 'স্টার' হয়েই রয়ে গেল ইছাপুরের শুভ্রজিৎ

উচ্চমাধ্যমিকে ‘স্টার মার্কস’, মানুষের মনে ‘স্টার’ হয়েই রয়ে গেল ইছাপুরের শুভ্রজিৎ

ওয়েব ডেস্ক : “মা, উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেলে আমায় একটা মোবাইল কিনে দিও!” কথা রাখলো শুভ্রজিৎ, কিন্তু নিজের রেজাল্ট দেখে যেতে পারলো না। বৃহস্পতিবারই ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন বাবা-মা, পরের দিন রেজাল্ট। শুক্রবার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট জানার পর কান্নায় ভেঙে পড়লেন ইছাপুরের শুভ্রজিৎ এর বাবা-মা। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট হবেই, আশাবাদী ছিল শুভ্রজিৎ। হলও তাই! ৩৬০ নম্বর পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে পাস করেছে সে। কিন্তু নিজের কষ্টের ফল দেখে যেতে পারল না।

এদিন অনলাইনে ছেলের রেজাল্ট জানার পর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বছর শুভ্রজিতের বাবা বিশ্বজিৎবাবু৷ কান্নাভরা চোখে আক্ষেপের সুরে বলেন, “ছেলে আমাদের কথা দিয়েছিল উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করবে। সবাইকে দেখিয়ে দেবে। ৭৫% নম্বর-সহ স্টার মার্কস পেয়ে সত্যিই দেখিয়ে দিল। রেজাল্ট ভালো হলে দামি মোবাইল উপহার চেয়েছিল। বলেছিল, রেজাল্ট বেরনোর দিন দুপুরে একসাথে বিরিয়ানি খেতে যাবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ডাক্তারদের অপদার্থতার জন্য সন্তানকে হারালাম।”

এদিন ছেলের রেজাল্ট অনলাইনে দেখার পর মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রেজাল্ট ভাল করার জন্য কত রাত অবধি পড়ত ছেলেটা। রাত তিনটে অবধি আমিও জেগে থাকতাম ছেলের সাথে। ওর সঙ্গ দিতাম। বারবার আমায় বলত ঘুমিয়ে পড়তে। কত কষ্ট করল ভালো রেজাল্ট করার জন্য। কিন্তু সেই আজ জীবিত নেই। আমি ছেলের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের শেষ দেখে ছাড়ব। সুবিচারের জন্য যত দূর যেতে হয় আমি যাব।”

প্রসঙ্গত, গত ১০ জুলাই গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় কলকাতার ৪টি বড়ো হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ভর্তি নেয়নি কোনো হাসপাতাল। সারাদিন বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরার পর অবশেষে ১২ ঘন্টা পর বিনা চিকিৎসায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইছাপুরের বাসিন্দা শুভ্রজিতের। ছেলের মৃত্যুর পরই পরিবারের তরফে একটি বেসরকারি হাসপাতাল সহ ৩টি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি, কিভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া সম্ভব, সে বিষয়েও বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালকে কাঠগড়ায় তুলেছে পরিবার। এমনকি সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা না করেই এই রিপোর্টের ভিত্তিতে রীতিমতো ‘অচ্ছুত’ করে ফিরিয়েছে একের পর এক হাসপাতাল। ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়েই মারা যায় শুভ্রজিত, এমনটাই অভিযোগ পরিবারের।

মৃত্যুর পরেও বছর ১৭-র কিশোরকে নিয়ে চলে টানাপড়েন। নিয়ম থাকলেও ছেলের শেষকৃত্যে বাবা-মা কে থাকতে দিতে চায়না মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি থাকতে চাইলে করা হয় দুর্ব্যবহার। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে পরিবার সুরজিতের দেহের ময়নাতদন্ত চায়। চিকিৎসার গাফিলতিতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে। ততক্ষণে এই ঘটনা ছড়িয়ে গিয়েছে রাজ্যবাসীর অন্দরে। শুভ্রজিতের এই মর্মান্তিক পরিণতিতে মানুষের চোখে জল, তবুও রাজ্য সরকারের তরফে মেলেনি কোনও আশ্বাস। অবশেষে ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় শুভ্রজিতের পরিবার। শেষমেষ আদালতের হস্তক্ষেপ করে ময়নাতদন্তের আদেশ দেয়। ময়নাতদন্ত থেকে শেষকৃত্য, সমস্ত বিষটি ভিডিওগ্রাফি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখার সুযোগ পান মা-বাবা। সৎকার করার অনুমতিও দেওয়া হয়। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত।

RELATED ARTICLES

Most Popular