Homeএখন খবরসংবাদমাধ্যম,পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও কথা নয়, অধ্যাপক ও কর্মীদের মনে করিয়ে দিল...

সংবাদমাধ্যম,পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও কথা নয়, অধ্যাপক ও কর্মীদের মনে করিয়ে দিল আইআইটি খড়গপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা: সম্প্রতি এক নোটিশ জারি আইআইটি খড়গপুরের রেজিষ্টার বি.এন.সিং আইআইটির সমস্ত কর্মী অর্থাৎ শিক্ষক সমাজ থেকে শুরু কে আশিক্ষক কর্মচারী পর্যন্ত আপামর সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কেউ এমন কোনও কথা বা লেখা কিংবা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেননা যা রাজ্য কিংবা কেন্দ্র সরকার অথবা স্থানীয় প্রশাসনের মনে বিরূপ ধারনা তৈরি করতে পারে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে একমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা ছাড়া কেই স্বনামে বা বেনামে কোথাও কোনোও লেখা লিখতে পারবেননা, বেতার, দুরদর্শনে অংশ নিতে পারবেননা বলেও কঠোর ভাবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলে দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যে সময়কালীন নীতি (পলিশি) ও কর্মপদ্ধতি (আ্যকশন)গ্রহন করবে তার কোনও সমালোচনা করা যাবেনা। গত শুক্রবার জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “উপযুক্ত কর্তৃপক্ষর অনুমতি ছাড়া কোনও কর্মী রেডিও বা দুদর্শন সম্প্রচার, খবর কাগজে লেখা অথবা বিবৃতি স্বনামে বা বেনামে প্রকাশ করতে পারবেননা। কেবলমাত্র সেই সমস্ত নিবন্ধ যা কিনা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নির্ভর এবং প্রশাসনকে কোনও ভাবেই জড়িয়ে থাকবে এমন ক্ষেত্রে কোনও অনুমতির প্রয়োজন নেই।”
বিজ্ঞপ্তিতে বারবার ‘বিরক্তিকর’ পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলা হয়েছে কোনও কর্মী এমন কোনও অনুভব, মতামত ও বক্তব্য প্রকাশ করতে পারবেনা যা কিনা এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সরকার বা কোনোও ব্যক্তির বিরক্তিকর ও বিরূপ মনোভাব তৈরি করে।

আইআইটি খড়গপুরের রেজিষ্টার বি.এন.সিংহ অবশ্য ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’কে বলেছেন, ” আইআইটি কোনও নতুন কথা বলেনি। ১৯৬১ সালে লোকসভা ও রাজ্যসভা কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য যে আচরন বিধি(সার্ভিস রুল) আইন তৈরি করেছিল তাই কর্মীদের মনে করে দিয়েছে মাত্র।” রেজিষ্টার বলেন, ” নিয়মগুলি যা ফাইলে বন্দী থাকে কর্মচারীরা অনেকেই জানতে পারেননা। আমাদের নতুন নতুন কর্মী নিয়োগ হয়। তাঁদেরকে এটা অবগত করানো হয়েছে মাত্র। এরমধ্যে আমি নিজে একটি শব্দও যোগ করিনি।”
সিংহের মতে, “এটা শুধুমাত্র একটি চালু আইনের নতুন প্রয়োগ (নিউ এক্সারসাইজ)বলতে পারেন। কোনও সেন্সরশিপ নয়। সময়ে সময়ে কর্মীদের তাঁদের স্মরন করিয়ে দেওয়া যে তাঁরা কোন আচরন বিধি মেনে কাজ করবেন। এটা তাঁদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন যাঁরা নতুন শিক্ষক বা কর্মী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। ”

যদিও বিজ্ঞপ্তির শুরুতেই এ কথাই বলা হয়েছে যে, ” এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে অনেক সময়েই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন প্রকাশনা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের মতামত প্রকাশ করছেন যেখানে প্রতিষ্ঠানের নীতি ও কর্মপদ্ধতিকে চূড়ান্ত সমালোচনায় বিদ্ধ করা হচ্ছে যা আইআইটি খড়গপুর ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যকার সম্পর্কে বিরক্তিকর মনোভাবের প্রতিফলন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে তাহলে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষের তাঁর নীতি ও কর্মপদ্ধতি গুলি কী তাহলে নিজের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই চ্যালেঞ্জর মুখে পড়ছে?

আইআইটির বহু প্রাক্তনী ও প্রবীন অধ্যাপক এই বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার প্রতিফলন লক্ষ্য করছেন। তাঁদের মতে একটি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষকরা যদি খোলাখুলি মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ।
গত মরশুমেই আইআইটি থেকে সম্মামনিক প্রাক্তনী হিসাবে পুরষ্কৃত হওয়া সামাজ আন্দোলনের নিবিষ্ট কর্মী রাহুল ব্যানার্জী এই বিষয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিককে বলেছেন,” কোনও ভয় ভীতি ছাড়াই শিক্ষক ও পড়ুয়ারা তাঁদের মত প্রকাশ করবেন এটাই একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ গুনগত নিদর্শন। কিন্তু ইদানিং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করে ক্যাম্পাসের কন্ঠস্বরকে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর করা হচ্ছে, মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।”

প্রশ্ন হচ্ছে আইআইটির অভ্যন্তরে কী তাহলে আইআইটি কর্তৃপক্ষের গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে? আইআইটিতে এমন কী হয়েছে যাতে আইআইটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরূপ ধারনা হতে পারে? একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে জামিয়া মিলিয়াতে পুলিশের অনুপ্রবেশ, জেএনইউতে ঐশী ঘোষের ওপর হামলা, এনআরসি ইত্যাদি প্রশ্নে আইআইটির গবেষক ছাত্রদের একটি দল বারবার প্রতিবাদ করেছে এবং তা মিডিয়ার সামনেই হয়েছে যা কেন্দ্রসরকারের কাছে আইআইটিকে বিব্রত করেছে। কিন্তু আইআইটির পলিশি কোথায় চ্যালেঞ্জের মুখে? এক শ্রেনীর অধ্যাপক ও গবেষকদের দাবি অতি সুকৌশলে আইআইটি ভেতর গেরুয়াকরন শুরু হয়েছে যদিও এটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে কিন্তু বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক অধ্যাপকের কথায়, “এক সময় আইআইটি খড়গপুরকে দেশের প্রাচীনতম, বৃহত্তম এবং শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বলা হত। এখন আর আপনি শ্রেষ্ঠ কথাটি বলতে পারবেননা। আইআইটির বাইরে তো বটেই আইআইটি গুলির মধ্যেও নবীনতম আইআইটি গুলি আমাদের পেছনে ফেলে দৌড়াচ্ছে। অথচ আমাদের পরিকাঠামো, অর্থ, শিক্ষক সবই অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। কারন মারাত্মক ধরনের লবি বাজিতে আইআইটি খড়গপুর ব্যস্ত। এখানে গুনের চাইতে তেলের কদর বেশি। আমরা বাস্তু বিজ্ঞানের চাইতে বাস্তু শাস্ত্রে বেশী জোর দেই যা কিনা বিজ্ঞানই নয়। হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ভেতরে ভেতরে নিজের মত করে বিভিন্নভাবে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্তৃপক্ষের পলিশি। আর সেই ফিয়ার সাইকোসিস থেকেই কণ্ঠরোধের এই চেষ্টা।”

আইআইটির ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলেছেন, ” আইআইটির অধ্যাপক বা কর্মীরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে কিছু বলতে পারবেননা অথচ আইআইটির ডিরেক্টর বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারী আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য শাখার ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারবেন!”

RELATED ARTICLES

Most Popular