Homeএখন খবররাখির বদলে ভাইয়ের লাশ নিয়ে খড়গপুর হাসপাতালে পিংলার দুই দিদি

রাখির বদলে ভাইয়ের লাশ নিয়ে খড়গপুর হাসপাতালে পিংলার দুই দিদি

নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘একটা রাত কাটিয়ে দে ভাই, কাল সকালেই যাচ্ছি। তোর হাতে রাখি পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে তবে বাড়ি ফিরব।’ অভিমানী ১০ বছরের ভাইয়ের কান্না এভাবেই ধুইয়ে দিয়েছিল মেজ দিদি নীলিমা। ভাই কাঁদছিল মাত্র ৮০টাকার জন্য! ১০ বছরের ছেলে বাবুর ঘরে জামা কাপড় কাচে। ভাল কাচা না হলে গিন্নি ফের কাচান। ক্ষার আর সাবানে হাত দুটোতে চামড়া রোগ বেরিয়ে গেছিল। কাজে যেতে ইচ্ছা করেনা কিন্তু না গিয়ে উপায় নেই, বিধবা মায়ের সংসারে সেই যে বড় ছেলে! ১০ বছর অনেক বছর যে।

খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের লাশ শুইয়ে দিয়ে দুই দিদি প্রতিমা আর নীলিমা আছাড়ি পাছাড়ি কাঁদছিল। কে কাকে স্বান্তনা দেবে? দুজনেই যে ভাইকে বলেছিল রাত পোহালেই সোমবার ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দেবে! রাত পোহায়নি পিংলা থানার মুন্ডুমারী থেকে ৫০০মিটার দুরে বিরসিংহ গ্রামের হত দরিদ্র মান্না পরিবারের বাড়ির পেছন থেকে রাত ৮ নাগাদ উদ্ধার হয় ১০বছরের সুজিতের ছোট নিথর দেহ। কলাগাছের সঙ্গে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় দেহটি। পুলিশ জানিয়েছে মৃত বাবলু মান্না আর খুকুমনি মান্নার ছেলে ওই বালক সম্ভবত আত্মহত্যাই করেছে। অভিমানে, দুঃখে।

নীলিমা জানিয়েছে, “যে বাড়িতে সে কাজ করত তারা সপ্তাহে যে দেড় দুশো টাকা দিত তার পুরোটা কখনও দিতনা। এবার ভাইয়ের শরীর খারাপ হওয়ায় কাজে যায়নি। কাজের বাড়িতে বলেছিল আমার ৮০ টাকা বাকি আছে দিয়ে দিন। কিন্তু ওরা বলেছিল তুই কাজে না এলে টাকা দেবনা। ভাই খুব কেঁদেছিল। শুধুই কাঁদছিল। ও চাইতনা কাজ করতে আর ওরা টাকা আটকে রেখে কাজ করাতে বাধ্য করত। রবিবার সারাদিন মা ওর কান্না থামাতে পারেনি। বিকালে আমি ফোন করি ওকে। বলি কাল তোর হাতে রাখি বাঁধতে যাব। মিষ্টি খাওয়াবো। ও একটু শান্ত হয়েছিল। মা ওই বাড়ির সঙ্গে কথা বলে টাকা এনে দেবে বলে জানিয়েছিল। এরপর ওর কান্না থামে। এরপর বিকাল বেলায় বেরিয়ে গেছিল আর বাড়ি ফেরেনি।”

বড়দি প্রতিমা জানিয়েছে, “ভাই অন্ধকারকে খুব ভয় পেত। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও ভাই বাড়ি ফিরছেনা দেখে মা চিন্তায় পড়ে যায়। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। আমার বাবা মারা গেছে। আমাদের তিন বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের আগে আমাদের লোকের বাড়িতেই কাজ করতে হত। মা ও তাই করে। বাড়িতে মা আর দু’ভাই। ছোট ভাইয়ের বয়স ৭ বছর। ভাইকে পাওয়া যাচ্ছেনা দেখে পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিলে খুঁজতে বের হয়। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই বাড়ির পেছনে ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ।”

সকালে রাখি পাওয়া যাবে কি যাবেনা ভেবে রাতেই রাখি জোগাড় করেছিল দিদিরা। কিন্তু সে রাখি পড়েই রয়েছে তাদের ঘরে। খবর পেয়ে রাতেই ছুটে এসেছেন তারা। তারপর সকাল গড়ালে লাশ নিয়ে খড়গপুর হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু ময়নাতদন্ত হয়নি খড়গপুরে। লাশ পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে ময়নাতদন্তের পর বাড়ি ফিরতে রাত। রাস্তায় খোলা ম্যাটাডোরে ভাইয়ের লাশ নিয়ে ফিরেছে দুই দিদি। সন্ধ্যার আকাশে মাথার ওপর রাখি পূর্ণিমার বড় চাঁদ থালার মত ঝুলছে কিন্তু সে চাঁদ আর কোনও দিনই আলো জ্বালাতে পারবে কি দিদিদের জীবনে?

RELATED ARTICLES

Most Popular