Homeএখন খবরক্রান্তিকালের মনীষা- ১০|| অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা- ১০|| অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা- ১০                                                অনিন্দিতা মাইতি নন্দীমানব চরিত্র বিশ্লেষক বঙ্কিম -প্রথম পর্ব       প্রবন্ধ বলতে কী বুঝি আমরা? আসলে প্র=প্রকৃষ্ট, আর বন্ধ=বন্ধন, তাই প্রবন্ধ হল প্রকৃষ্ট বন্ধন আছে যার। প্রাচীনকালে কাব্য ও নাটককেও প্রবন্ধ বলা হয় কারণ কাব্যে সর্গ ও ছন্দের বন্ধন, নাটকে অঙ্ক ও দৃশ্যের প্রকৃষ্ট বন্ধন জড়িয়ে। এখন প্রবন্ধ বলতে এক বিশেষ ধরনের গদ্য রচনা যা যুক্তি-তথ্য-সিদ্বান্তের প্রকৃষ্ট বন্ধনে আবদ্ধ নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন।

যে কোন প্রবন্ধই দুটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল প্রথমত বিষয়গত দ্বিতীয়ত রূপগত।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন বংলা গদ্যভাষা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছিল ঠিক তখন বাংলার ভাগ্যকাশে উদিত হলেন এক সব্যসাচী যিনি নিজস্ব প্রতিভার বিশালতায়,–একদিকে যেমন সৃষ্টিমগ্ন ছিলেন সাহিত্যরসে অপরদিকে অকৃত্রিম যুক্তিবাদী মননশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সফল প্রয়োগ করেছিলেন বঙ্গভাষার সুনিপুন আরাধনায়। এই বিস্ময়কর প্রতিভার উদ্দেশ্যে তাই বিশ্বকবি বলেন, “বঙ্গভারতী সাথে মিলায়ে তোমার আয়ু গণি
তাই তব করি জয়ধ্বনি”।

বিশ্বকবি এই অসামান্য প্রতিভার সামর্থের কথা বিশ্লেষণ করে বলেন, “লেখার প্রয়াস জাগিয়া উঠিয়াছে, অথচ লেখার উচ্চ আদর্শ তখনো দাঁড়াইয়া যায় নাই। সেই সময় সব্যসাচী বঙ্কিম এক হস্ত গঠনকার্যে, এক হস্ত নিবারণকার্যে নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন। একদিকে অগ্নি জ্বালাইয়া রাখিতেছিলেন, আর একদিকে, ধুম এবং ভস্মরাশি দূর করিবার ভার নিজেই লইয়াছিলেন”।

সাহিত্য সম্রাটকে উপন্যাসিক রূপেই দেখতে অভ্যস্ত পাঠককুল অথচ পেশায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, সাহিত্যিক-উপন্যাসিকের কী বিশাল পাণ্ডিত্য ও মননশীলতা তাঁর প্রবন্ধগুলিতে ‘নব নব উন্মেষশালিনী প্রজ্ঞা’য় ভাস্কর। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা প্রবন্ধগুলি মূলত দুই ধরনের, আত্মগৌরবী ও বিষয়গৌরবী প্রবন্ধ। প্রবন্ধ জ্ঞানের সাহিত্য হলেও যে রসপূর্ণ রসনাতৃপ্ত করতে সক্ষম তা ওনার নানা ধরনের প্রবন্ধ থেকে জানা যায়।

বঙ্কিমচন্দ্রের অন্যতম বিশিষ্ট প্রবন্ধ ‘কৃষ্ণচরিত্র’, এখানে প্রাবন্ধিক চিরাচরিত অভ্যস্ত আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও ভক্তির ক্ষেত্র থেকে সরে এসে সম্পূর্ণভাবে প্রজ্ঞার আলোকে নতুন দৃষ্টি ভঙ্গিতে মহাভারতের কৃষ্ণচরিত্রের আধুনিক ব্যাখা করেন। এখানে শ্রীকৃষ্ণ এক পরিপূর্ণ মানুষ। বঙ্কিমচন্দ্রের মতানুসারে, প্রবৃত্তির সংযম এবং সমন্বয়ই মানুষের ধর্ম। শ্রীকৃষ্ণের জীবনে সেই সমন্বয় ঘটেছিল। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন অনুশীলন যা জ্ঞানার্জনী, কার্যকারিণী ও চিত্তরঞ্জিনী।

‘কৃষ্ণচরিত্র’ সম্পুর্ন গ্রন্থ হিসাবে প্রকাশিত হয় ১৮৯২ খ্রি –যেখানে ভূমিকাটিতে বঙ্কিমচন্দ্র লেখেন, “প্রথম সংস্করণে যে সকল মতপ্রকাশ করিয়াছিলাম, এখন তাহার কিছু কিছু পরিত্যাগ ও পরিবর্তিত করিয়াছি। বঙ্গদর্শনে যে ‘কৃষ্ণচরিত্র’ লিখিয়াছিলাম আর এখন যাহা লিখিলাম, আলোক অন্ধকারে যতদূর প্রভেদ, –ততদূর প্রভেদ। মত পরিবর্তন বয়োবৃদ্ধি, অনুসন্ধানের বিস্তার ও ভাবনার ফল”।

‘কৃষ্ণচরিত্র’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র নিজস্ব মতামত পোষণ করেন যে, কৃষ্ণচরিত্রের আদি হল মহাভারত, শ্রীমদ্ভাগবতে নয়। প্রবন্ধটির সূচনাতেই তাঁর প্রশ্ন, “মহাভারত যে কৃষ্ণচরিত্র দেখিতে পাই, শ্রীমদ্ভাগবতেও কি সেই কৃষ্ণের চরিত্র? জয়দেবেও কি তাই? এবং বিদ্যাপতিতেও কি তাই?

প্রবন্ধের মধ্যেই বঙ্কিমচন্দ্র উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টায় সমগ্র মহাভারত বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের মধ্যমে তাঁর সিদ্ধান্ত এই শ্রীমদ্ভাগবতের সংস্কৃত বাক্যগুলি অপেক্ষাকৃত আধুনিক। আর মহাভারতের সমস্ত অংশ হয়তো বা একজনের লেখা নয়। তাঁর নিজস্ব বক্তব্য তাই, “মহাভারত কোন সময়ে প্রণীত হইয়াছিল, তাহা এ পর্যন্ত নিরূপিত হয় নাই। নিরূপিত হওয়াও অতি কঠিন। মুলগ্রন্থ একজন প্রণীত বলিয়াই বোধ হয়, কিন্তু এক্ষনে যাহা মহাভারত বলিয়া প্রচলিত, তাহার সকল অংশ কখন একজনের লিখিত নহে”।

মহাভারত ও শ্রীমদ্ভাগবত মহাকাব্য দুটির রচনাপ্রণালী ও রচনায় বিবিধ ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা প্রয়োগের মধ্যমে উক্তি, “কেবলমাত্র রচনাপ্রণালী দেখিলে বুঝিতে পারা যায় ভাগবতের সংস্কৃত অপেক্ষাকৃত আধুনিক; ভাগবতে কাব্যের গতি অপেক্ষাকৃত আধুনিক পথে”। আবার এই প্রবন্ধে বৃন্দাবনলীলা সম্বন্ধে তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন। কৃষ্ণ সম্বন্ধে যে চুরি অপবাদ, পরস্ত্রী আসক্তি ইত্যাদি কাহিনী প্রচলিত আছে তা সবই অমূলক বা অলীক কল্পিত।

বঙ্কিমচন্দ্র অনুভব করেছিলেন জয়দেব বা বিদ্যাপতি রচিত কৃষ্ণচরিত্রের সাথে শ্রীমদভগবতের শ্রীকৃষ্ণের কোন মিল নেই। ‘শ্রীকৃষ্ণ’ হলেন দূরদর্শী প্রজ্ঞাসম্পন্ন রাজনীতি বিশারদ যিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন সমগ্র ভারতবর্ষের ঐক্য। ভারতবর্ষ তখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত রাজ্য। যাদের রাজারা সর্বদাই নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত আক্রমণে ব্যস্ত থাকতেন। এই বাস্তব পরিস্থিতিতে শ্রীকৃষ্ণ বুঝেছিলেন সমগ্র ভারতবর্ষ একত্রিত না হলে ভারতে অশান্তি ,অরাজকতা বিরাজ করবে। ফলে সমস্ত ভারতবাসীরা প্রবল অশান্তির মধ্যে, উন্নতি-বিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হবে। লেখকের বিশ্লেষণে তাই শ্রীকৃষ্ণ অবতার হিসাবে নয় অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তীক্ষ্ণ-মেধার মহামানব। “শ্রীকৃষ্ণ অদ্বিতীয় রাজনীতিবিদ-….. মহাভারতে ইনি অস্ত্রধারী নহেন, সামান্য জড়-শক্তি বাহুবল ইহার বল নহে, উচ্চতর-মানসিক বলই ইহার বল। …. প্রকাশ্যে কেবল পরামর্শদাতা-কৌশলে সর্বকর্তা। …. কেবল পাণ্ডবদিগকে একেশ্বর করাও তাঁহার অভীষ্ট নহে। ভারতবর্ষের ঐক্য তাঁহার উদ্দেশ্য। ….. শ্রীকৃষ্ণ বুঝিলেন যে এই সমগ্র ভারত একছত্রাধীন না হইলে ভারতের শান্তি নাই”।

বঙ্কিমচন্দ্রের বিশ্লেষণে জয়দেবের- ‘গীতগবিন্দ’ তে শ্রীকৃষ্ণ কেবলমাত্র বিলাসরসে মত্ত এক নায়ক, অপূর্ব মোহন-মূর্তি তাঁর। কিন্তু মহাগৌরবের যে জ্যোতি মহাভারতের কৃষ্ণের আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতিতে তা এখানে অনুপস্থিত। আবার কবি জয়দেবের পর কবি বিদ্যাপতির তেজস্বী অন্তঃদৃষ্টি তে শ্রীকৃষ্ণ বিলাসরত নায়ক হওয়া স্বত্তেও কিছু দুঃখের গান সংযোজিত হয়েছিল। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের যেমন দক্ষতা তেমনি তাঁর ধৈর্য। পাণ্ডবদের পরমাত্মীয় হওয়া সত্বেও কুরুক্ষেত্রে কোন অস্ত্র ধারণ করেননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উভয়পক্ষ পাণ্ডব ও কৌরব, পরস্পরের অস্ত্রেই পরস্পর নিহত হয় – এটাই তাঁর উদ্দেশ্য ,-যার পৌরাণিক নাম হল পৃথিবীর ভারমোচন। তাই সমগ্র ভারতবর্ষকে একত্রিত করার প্রয়াসে, উন্নতির জন্য যে ধর্মযুদ্ধ, তাতে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে রাজনীতিজ্ঞ হিসাবে প্রবল দূরদর্শিতার পরিচয় দেন।

পুরাণের ইতিহাসে ‘যতটুকু সত্য’ উদ্ধার করা যায় তার সাহায্যেই বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘কৃষ্ণচরিত্র’ গড়ে তুলেছেন। কৃষ্ণ ছিলেন আদর্শ ধার্মিক যা বিনা-যুদ্ধে মিটতে পারে বলে মনে করতেন তার জন্য কখনও যুদ্ধ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি। আত্মরক্ষার্থে এবং পরের রক্ষার জন্য যে যুদ্ধ তা ধর্মযুদ্ধ। ‘কৃষ্ণচরিত্র’ প্রবন্ধটির পরিশেষে বঙ্কিমচন্দ্রের পরিষ্কার বক্তব্য, “কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব প্রতিপন্ন করা এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য নহে, তাহার মানবচরিত্র সমালোচনা করাই আমার উদ্দেশ্য।
বঙ্কিমচন্দ্রের চেতনায় যে মানবচরিত্র শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে “পরাক্রমে ও পাণ্ডিত্যে, বীর্যে ও শিক্ষায়, কর্মে ও জ্ঞানে, নীতিতে ও ধর্মে, দয়ায় ও ক্ষমায়, তুল্যরূপেই সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই আদর্শ পুরুষ”–হিসাবে অঙ্কণ করেছেন লেখক।

বঙ্কিমচন্দ্র ‘শ্রীকৃষ্ণচরিত্র’ কে যেভাবে রূপ দিয়েছিলেন একজন অপরাজেয়, বিশুদ্ধ, পুণ্যময়, প্রীতিময়, ধর্মাত্মা, বেদজ্ঞ, নীতিজ্ঞ তপস্বী হিসাবে তা বিস্ময়কর।এই ‘শ্রীকৃষ্ণচরিত্র’–এর একনিষ্ঠ বিশিষ্ট পাঠক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রয়াণের পর, ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ নামে একটি প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেন -যেখানে তিনি ‘কৃষ্ণচরিত্র’ নির্মাণে বঙ্কিমচন্দ্রের অনন্য প্রতিভা, শাস্ত্রজ্ঞান ও সেই সময়ের বাঙালি সমাজের চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

রবীঠাকুরের বক্তব্য অসাধারণ, “বঙ্কিমের ন্যায় তেজস্বী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যাক্তি ব্যতীত আর কেহই লোকাচার বা দেশাচারের বিরুদ্ধে এরূপ নির্ভীক স্পষ্ট উচ্চারণে আপন মতপ্রকাশ করিতে সাহস করিতনা। এমন কি বঙ্কিম প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রের প্রতি ঐতিহাসিক বিচার প্রয়োগ করিয়া তাহার সার ও অসার ভাগ পৃথককরণ, তাহার প্রামান্য এবং অপ্রামান্য অংশের বিশ্লেষণ এমন নিঃসঙ্কোচে করিয়াছেন যে এখনকার দিনে তাহার তুলনা পাওয়া কঠিন”। আসলে বঙ্কিমচন্দ্র যা নিজে বিশ্বাস করতেন তাই-ই যুক্তি সহকারে স্পষ্ট ব্যক্ত করেছেন। তিনি বাকচাতুর্যের সাহায্যে নিজেকে বা অন্যকে কোন ভাবে বঞ্চনা করেননি।

আর একটি অনবদ্য প্রবন্ধ ‘দ্রৌপদী’ যেখানে এই ‘দ্রৌপদী’ চরিত্রের স্বাতন্ত্র ও গৌরবের দিকটি অনবদ্যভাবে অঙ্কণ করেছেন। ‘দ্রৌপদী’ চরিত্রের দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন, প্রথমত দ্রৌপদীর ধর্মাচরণ, দ্বিতীয়ত দ্রৌপদীর দর্প। এখানে দর্প মানে ‘মানসিক তেজস্বিতা’- বলে বঙ্কিমচন্দ্র ব্যক্ত করেছেন, “তেজস্বিতা দ্রৌপদীতে পূর্ণমাত্রায় ছিল, অর্জুন ও অভিমুন্যুতে ইহা আত্ম-শক্তি নিশ্চয়তায় পরিণত হইয়াছিল”।

বঙ্কিমচন্দ্র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তাত্‍পর্যমূলক ব্যাখা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন কেন আমাদের দেশে আজও ‘সীতা’ চরিত্রের এত অনুকরণ হয়, কেন সীতাকে আদর্শ নারী হিসাবে সমাজে গণ্য করা হয়, অথচ ‘দ্রৌপদী’ চরিত্রের কোন অনুকরণ হয়না। আসলে ‘সীতা’ কে একজন পতিপরায়না, কোমল স্বভাবসম্পন্ন, সহিষ্ণুতা ও লজ্জাশীলা গুণের অধিকারিণী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে বাল্মীকির পর সকল আর্য নায়িকাই সীতা-চরিত্রের আদর্শে গঠিত,– একা দ্রৌপদী ছিলেন ব্যতিক্রমী, যিনি ‘সীতা’র ছায়া এড়িয়ে গেছেন নিজস্ব তেজস্বীয়তায়।

অদ্ভুতভাবে লক্ষ্যনীয় যে দুজনেই কিন্তু তাঁরা রাজ্ঞী, কর্তব্য-কর্মে অবিচল, ধর্মনিষ্ঠ ও গুরুজনের বাধ্য। কিন্তু দ্রৌপদীর চরিত্রে কিছু ব্যতিক্রমী গুণাবলী যেমন কাঠিন্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, তেজস্বিনী, অকুতোভয় এবং পঞ্চস্বামী তাঁকে অনন্য সাধারণ করে তুলেছিল। সীতা রাজ্ঞী হয়েও মূলত কুলবধু,–সেখানে দ্রৌপদী কুলবধু হয়েও মূলত রাজ্ঞী। সীতা সুযোগ্যা সহধর্মিনী,–দ্রৌপদী সুযোগ্যা বীরাঙ্গনা ,–তাই দ্রৌপদী চরিত্রের অনুকরণ হয় না। ‘দ্রৌপদী’ প্রবন্ধের দ্বিতীয় অংশে যে তত্বটি বঙ্কিমচন্দ্র দিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য, “এক নারীর পঞ্চস্বামী অথচ তাহাকে কুলটা বলিয়া বিবেচনা করিবার কোন উপায় দেখা যায় না এমন অসমঞ্জস্যের সামঞ্জস্য কথা হইতে হইল”–এবার নিজেই লেখক এক অপূর্ব ব্যাখ্যা দেন, “পঞ্চপতি দ্রৌপদীর নিকট একপতি মাত্র, উপাসনার এক বস্তু এবং ধর্মাচরণের একমাত্র উপলক্ষ। যেমন প্রকৃত ধর্মাত্মার নিকট বহু দেবতা ও এক ঈশ্বর মাত্র” ।

রচনাসূত্র (Reference): ১) ভাষাচর্চা ও সাহিত্যকথা :ডাঃ হরপ্রসাদ মিত্র, ডাঃ নির্মল কুমার দাশ। ২) প্রাবন্ধিক বঙ্কিম:  ডাঃ অশোক কুমার মিশ্র। ৩) বঙ্কিমচন্দ্র জন্মসার্ধশতবার্ষিকী: ডাঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক জহ্নবী কুমার চক্রবর্তী। ৪) বঙ্কিমজীবনী : অমিত্র্সুদন ভট্টাচার্য।

RELATED ARTICLES

Most Popular