Homeএখন খবরআইআইটি খড়গপুরের দুই প্রাক্তনী দম্পতি যুগলের হাত ধরেই বিপ্লব গ্রামীন ভারতের চিকিৎসা...

আইআইটি খড়গপুরের দুই প্রাক্তনী দম্পতি যুগলের হাত ধরেই বিপ্লব গ্রামীন ভারতের চিকিৎসা জগতে

নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্বের ধনী ব্যক্তি বিল গেটস বিশ্বাস করেন যে মশা পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক একটি পতঙ্গ যা এক দিনে যত মানুষকে হত্যা করে, ১০০ বছরেও হাঙ্গর তা করে উঠতে পারেনা। মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবী তাই বছরের পর বছর ধরে মশারিজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে চলেছেন। গ্রামীণ ভারতে, অনেকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মশার বাহিত রোগে ভোগেন। তবে হাসপাতালে কিংবা শহরগুলির ডায়াগনস্টিক ল্যাব থেকে এই পরীক্ষার ফলাফল জানার পরই এই রোগ নির্ণয় সম্ভব। ডেঙ্গি অথবা ম্যালেরিয়া কিংবা চিকুনগুনিয়ার রোগ নির্ণয়ের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা করতে হয়। ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফলাফলের জন্য সে সময় লাগে তা শুধুই রোগ বেড়ে ওঠার পক্ষে যথেষ্টই নয়, প্রায় পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত ধাক্কাও বটে । আর এই টাকা খরচ করতে গিয়ে ফতুর হয়ে যাওয়ার যোগাড় হয় গ্রামীন ভারতের এক একটি পরিবারের।

আর এই অবস্থা থেকে মুক্তি পথের দিশা হয়ে এসেছেন এক আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনী রাসবিহারী তুঙ্গা ও তাঁর স্ত্রী বিনীতা শ্রীবাস্তব তুঙ্গা ।এই দম্পতি এমন একটি ডায়াগনস্টিক ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন যা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সাফল্যের সাথে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া সনাক্ত করতে পারে।
আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, লক্ষণগুলি প্রকাশের প্রথম দিনেই মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ডিভাইসটি তিনটি রোগ সনাক্ত করতে পারে। রাসবিহারী ও বিনীতাদের মতে, ”গ্রামীণ জনসংখ্যা এবং প্রান্তিক এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা মাথায় রেখে ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের আরও লক্ষ্য ছিল অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে ও সহজ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা এবং আমরা তাতে সফল হয়েছি।” তাঁরা আরও বলেন, “ডিভাইসটি ব্যবহারের জন্য কারও নির্দিষ্ট সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন নেই। আমরা আশা করি শিগগিরই বাজারে প্রবেশ করবো এবং তিনটি রোগের পরীক্ষার জন্য বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকার বেশি লাগবে না।

রাসবিহারী আইআইটি খড়গপুর থেকে জৈব প্রযুক্তিতে এম.টেক ও পিএইচডি করেছেন তারপর পোষ্ট ডক্টরেট করেন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যদিকে বিনীতা আইআইটি খড়গপুর থেকে পিএইচডি করার পর জাপানের ওই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিক্যুলার জেনেটিকস’ য়ে পোষ্ট ডক্টরেট করেন। বর্তমানে দুজনে মিলে ব্যাঙ্গালুরুতে গড়ে তুলেছেন ‘এ্যামেলিওরেট বায়োটেক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান যাঁদের কাজই হল মশাবাহিত রোগের হাত থেকে প্রান্তিক ও দরিদ্র ভারতকে মুক্ত করতে নিরন্তর গবেষনা চালিয়ে যাওয়া।
এই দুর্মূল্য গবেষনার প্রতি সমর্থন ও সাহায্য জানাতে এগিয়ে এসেছে ইনফোসিস ফাউন্ডেশন। তাদের ওই ডিভাইসটি যা বর্তমানে ক্লিনিকাল মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে তা ইতিমধ্যেই অ্যারোহান সোশ্যাল ইনোভেশন পুরষ্কার পেয়েছে যার অর্থমূল্য ২০লক্ষ টাকা।

মশাহজনিত রোগ সনাক্তকরণের বর্তমান পদ্ধতির আলোকে এই আবিষ্কার অত্যন্ত লক্ষণীয় কারন এটি এলিজার মতো দ্রুত নির্ণয়ের কিট এবং পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া (পিসিআর) এর মত কৌশল সহজেই রপ্ত করতে পারে।

বিনীতা জানান কলেজে পড়ার সময় থেকেই মশারিজনিত রোগ মোকাবিলা করতে পারে এমন সমাধানের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন কারন ওই সময় তিনি তাঁর ১১ বছর বয়সী ভাগ্নীকে ডেঙ্গিতে হারিয়েছিলেন। বিনীতা বলেন “আরও দুটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হয়নি,”
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিনীতা বলেন, আইআইটি খড়গপুর থেকে মলিক্যুলার বায়োলজিতে বিনিতাকে সবেমাত্র স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পরে বিবাহিত হওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে লড়াই করতে হয়েছিল। ভেবেছিলেন বিয়ের পর সব হয়ত শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তাঁর স্বামী ডাঃ রাসবিহারী তুঙ্গা তাঁকে আশ্বাস দেন এবং লক্ষ্যপূরণের জন্য আরও প্রশিক্ষিত ও নিজস্ব ল্যাব গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এই ধরনের কাজ খুবই ব্যয়বহুল ও নিত্যনতুন প্রযুক্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর সে কারনেই নিজেদের পেটেন্ট বিক্রি করে দিতে পারেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই এই দম্পতির কাজ বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular