Homeএখন খবরবন্ধ খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের ২ ওয়ার্ড ! ২২ নার্স কোয়ারেন্টাইনে, শহরে নতুন...

বন্ধ খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের ২ ওয়ার্ড ! ২২ নার্স কোয়ারেন্টাইনে, শহরে নতুন আক্রান্ত ৬, রেলের আইসোলেশনে জায়গা নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা: বড়সড় ধাক্কা খড়গপুর মহকুমার স্বাস্থ্য পরিষেবায়, হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী ও এক চিকিৎসাধীন বৃদ্ধার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় ফিমেল ও মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২টি ওয়ার্ডেরই রুগিদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি ওয়ার্ডের রুগিরা নিজেরাই ছুটি নিয়ে নিয়েছেন।  ওই নিরাপত্তা রক্ষী ও অপর চিকিৎসাধীন মহিলার সংস্পর্ষে এসেছেন এমন ২২জন নার্সকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তীব্র কর্মী সঙ্কটের মুখে জরুরি বিভাগ ও ভর্তির বিষয়ে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গেছে।

যদিও এতে আদৌ সন্তুষ্ট নন হাসপাতালের বেশিরভাগ নার্স ও চিকিৎসা কর্মী। তাঁরা দাবি করেছেন পুরো হাসপাতালই বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। তাঁদের বক্তব্য পুরো হাসপাতালকে স্যানেটাইজ বা জীবাণু মুক্ত না করে হাস পাতাল আংশিক বন্ধ করার নামে হাসপাতাল কর্মচারীদের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এঁরা দাবি করেছেন বুধবারের রিপোর্টে যে নিরাপত্তারক্ষীর পজিটিভ এসেছে তিনি যে শুধুই মেল ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তাই নয়, ভর্তি থাকা অবস্থাতেই গোটা হাসপাতাল চত্বর ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষী হওয়ার সুবাদে সমস্ত ওয়ার্ডে প্রবেশ করেছেন। সুতরাং পুরো হাসপাতালই সংক্রমনের ঘাঁটি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় হাসপাতাল বন্ধ না করে কর্মীদের নিশ্চিত আক্রান্ত হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে কেন কর্তৃপক্ষ?

এঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে হাসপাতাল বন্ধ না করলে তাঁরা নিজেরাই কাজে আসা বন্ধ করে দেবেন।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডক্টর কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী বলেছেন, “আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে একমত কিন্তু হাসপাতাল বন্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু দুটি ওয়ার্ডকে আপাতত বন্ধ রাখছি। বিষয়টি জেলার স্বাস্থ্যকর্তা দের জানিয়েছি তাঁরা যেটা মনে করবেন তাই হবে।” মুখার্জী আরও বলেছেন ২২জন নার্স কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ায় তিনটে শিফট চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে এই অবস্থায় অন্য বিভাগের মতই জরুরি বিভাগে স্টাফ কমে যাবে। এই অবস্থায় জরুরি বিভাগে সমস্ত রুগিকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবেনা, আবার সব্বাইকে ভর্তি ও নেওয়া সম্ভব হবেনা তাই ওই দুটি বিভাগে একটু কড়াকড়ি থাকছে ব্যবস্থা নর্মাল না হওয়া অবধি।

খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে প্রায় ১০০জন নার্স আছেন তাঁর মধ্যে কোনও না কোনও প্রয়োজনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েক জন ছুটিতে থাকেন। ফলে ২২ নার্সের সংখ্যাটা একটা শিফটের পুরো দলই বলা যায় যাঁদের ওয়ার্ড, ইমার্জেন্সি, ওটি, প্রসূতি এমনকি আউটডোর সামলাতে হয়। ফলে ২২জনের দল কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার অর্থ হাসপাতালের বড় একটা অংশই কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়া। সব কিছু নজর রেখেই সুপার হাসপাতাল পুরোপুরি বন্ধ রাখা ও স্যানিটাইজ না হওয়া অবধি ওই ব্যবস্থা বজায় রাখার আবেদন জেলায় জানিয়ে ছিলেন বটে কিন্তু জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তর তা নাকচ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতেও হাসপাতাল চালু রাখতে হবে মানতে পারছেননা চিকিৎসা কর্মীদের একটা অংশ। তাঁদের বক্তব্য সেক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরাই ছুটি নেবেন।

এদিকে ধারাবাহিক সংক্রমনের মুখে দাঁড়িয়ে পুরোপুরি ভর্তি হয়ে গেছে রেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের শয্যা। রেলের এক স্বাস্থ্য কর্তা জানিয়েছেন, বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের ১৫টি বেড রাখার কথা কিন্তু বাস্তবে তার বেশ কিছুটা বেশি রয়েছে। সেটাও উপচে পড়েছে। এখন কোথায় পেশেন্ট রাখব? আমরা খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা না হলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকতে বলছি। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সবার পক্ষে এই হোম আইসোলেশনে থাকা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে কী হবে? যেমন বৃহস্পতিবার খড়গপুর শহরে যে ৬জন আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর মধ্যে রেলের ট্রাফিক এলাকার কোয়ার্টারের এক মা ও তাঁর দুই ছেলেমেয়ে মিলিয়ে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিবারের কর্তা রেলের অপারেটিং কন্ট্রোলের কর্মী আগেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এই পরিবারে তিন সন্তান যাঁর মধ্যে প্রথম দুজন জমজ ভাই বোন পরে আরেকজন বোন। বাবার পর মায়ের সাথে আক্রান্ত হয়েছেন জমজ ভাই এবং পরের বোনটি। জমজ বোন কিন্তু নেগেটিভ। প্রশ্ন হল রেল যদি এঁদের না ভর্তি নেয় তাহলে নেগেটিভ সদস্যর তিন তিনজন আক্রান্ত থাকবে কী করে?

রেল সূত্রেই এদিন বাকি তিনটি জায়গায় আক্রান্তর সন্ধান মিলেছে। খরিদা বিধানপল্লী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আর ইন্দা রবীন্দ্রপল্লীতে যে দুজন রেলকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা রেলের ডিআরএম অফিসের কমার্শিয়াল কন্ট্রোল বিভাগে কাজ করেন। অত্যন্ত তরুণ এই যুবকদের বয়স ২১ ও ২৬। শহরের ষষ্ঠ আক্রান্ত ৭৫ বছরের বৃদ্ধা। খড়গপুর পৌরসভার ঠিক পেছনে অবস্থিত ঝাপেটাপুরের এই বৃদ্ধা কিভাবে আক্রান্ত হলেন জানা যায়নি এখনও।

সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবারের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র খড়গপুর শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩২ জনে দাঁড়ালো। তবে এদিন শহর লাগোয়া শহরতলি লাগোয়া খড়গপুর গ্রামীন থানা এলাকায় ২জন পজিটিভ পাওয়া গেছে। রাখাজঙ্গল ও মহেশপুর এলাকার এই দুই যুবক কিভাবে আক্রান্ত হলেন খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এদিকে করোনা আক্রান্তের ঘটনা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় শালবনী কোভিড হাসপাতাল ও আয়ুশ এবং ডেবরা আইসোলেশন হাসপাতাল গুলিতে রুগি উপচে পড়ছে। বৃদ্ধ বৃদ্ধা অথবা সঙ্কটজনক না হলে শালবনীতে ঠাঁই পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে চলেছে এবার।

ছবি সৌজন্য-আই লাভ মাই খড়গপুর

RELATED ARTICLES

Most Popular