Homeএখন খবরখড়গপুর কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের বর্বরতার বিচার মেলেনি চারদিন পরেও! পুলিশ সুপারের কাছে ডাক...

খড়গপুর কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের বর্বরতার বিচার মেলেনি চারদিন পরেও! পুলিশ সুপারের কাছে ডাক যোগে অভিযোগ এক আদিবাসী মায়ের

'Might is Right' Such a story is being written in the Kharagpur industrial area. The story of forcibly dumping factory waste on agricultural land, injecting dirty water, forcibly erecting a wall on another's land to take possession of land was what happened this time is brutality. An 8-year-old boy was hit in the head with a brick when a ball of children playing in a playground next to the factory entered the factory premises. But the family of the child could not file a complaint for the last 3 days. The child's mother lodged a complaint with the officer-in-charge of Kharagpur Local Police Station and West Midnapore Superintendent of Police. In the chargesheet, the mother of the child has directly accused the authorities of Rashmi Metallics Company and Unit No. 3 of Orissa Metallics Company located in Kharagpur industrial area. 'Daddy won't play anymore.' After regaining consciousness, the child is going to say so.

বাবা আর খেলতে যাবনা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘ বাবা আর খেলতে যাবনা।’ জ্ঞান ফেরার পর নাকি এমনই বলে যাচ্ছে শিশুটি। ছোট ছেলে স্কুল যাবনা বলে, কিন্তু ‘খেলতে যাবনা’ বলে? তাও আবার দুরে কোথাও নয়, নিজেরই বাড়ির সামনে বন্ধুদের সাথে খেলছিল সে। বন্ধুদের কারও পায়ে, কারও গায়ে, হাতে লেগেছে ইট আর পাথরের টুকরো। কিন্ত তার মাথা ফেটে রক্তাক্ত। গামছা আর অন্য কাপড় দিয়েও সে রক্ত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ছুটতে হয়েছে ডাক্তার খানায়। হ্যাঁ এখানেও সেই স্বার্থপর দৈত্যর কাহিনী। যে কাহিনী প্রতিদিন লেখা হয় খড়গপুর শহরের আশেপাশেই। অথচ খড়গপুর জানতে পারেনা।

জোর যার মুলুক তার এমনই কাহিনী লেখা হয়েই চলছে খড়গপুর শিল্প তালুকে। জোর করে জমির দখল নিতে কৃষি জমিতে কারখানার বর্জ্য ফেলা, নোংরা জল ঢুকিয়ে দেওয়া, জোর করে অন্যের জমিতে প্রাচীর তোলার কাহিনী তো ছিলই এবার যা ঘটল তা রীতিমত বর্বরতা। কারখানার পাশেই একটা খেলার মাঠে খেলতে থাকা শিশুদের বল কারখানার সীমানার ভেতরে ঢুকে পড়ায় ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল একটা ৬ বছরের শিশুর। অথচ গত ৩দিন ধরে একটা অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি ওই শিশুর পরিবার। বাধ্য হয়ে ডাকযোগে খড়গপুর লোকাল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ও পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ সুপারকে অভিযোগ জানালেন শিশুর মা। অভিযোগপত্রে ওই শিশুর মা সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন খড়গপুর শিল্প তালুকে অবস্থিত রশ্মি মেটালিক্স কোম্পানী ও উড়িষ্যা মেটালিক্স কোম্পানী র ৩ নাং ইউনিট কর্তৃপক্ষকে।

বৃহস্পতিবার ২৯শে জুলাই, অভিযুক্ত কোম্পানির সীমানা লাগোয়া খড়গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত সামরাইপুরের বাসিন্দা এক গৃহবধূ সুতপা বাগ পুলিশ সুপার ও গ্রামীণ ওসিকে পাঠানো অভিযোগ করেছেন যে, গত ২৬শে জুলাই বিকালে তাঁর ৬ বছরের ছেলে রীতেশ গ্ৰামের অন্যান্য শিশুদের সাথে তাঁদের বাড়ির সামনে মাঠে খেলছিল। হঠাৎই রশ্মি মেটালিক্স কারখানার প্রাচীরের ভেতরে থেকে এলোপাথাড়ি ইট ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। সেই পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে রীতেশ জ্ঞান হারায়। রীতেশের মাথা ওই ইটের আঘাতে ফেটে যায়। বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় সুতপা শিশুটিকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে উনি প্রাথমিক চিকিৎসা করে বড় হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

সুতপা ওই অভিযোগ পত্রে বলেছেন, ‘সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ও বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় আমি পরের দিন ২৭শে জুলাই খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসা করিয়ে আপাতত বাড়িতে রেখেছি। ওই দিন বিকাল ৪ টার সময় আমি স্থানীয় সাদাতপুর পুলিশ ফাঁড়িতে যাই অভিযোগ জানানোর জন্য কিন্তু রাত সাড়ে ৮টা অবধি অর্থাৎ সাড়ে ৪ঘন্টা আমাকে বসিয়ে রেখেও অভিযোগ গ্ৰহন করা হয়নি। এমতাবস্থায়, আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভুক্ত হওয়ায় আমার অভিযোগ টি আদিবাসী তপসিলি অত্যাচার নিরোধক আইন ১৯৮৯(poa act -1989)অনুযায়ী আইনানুগ ভাবে অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত বিচার পাওয়ার ব্যাবস্থা গ্ৰহনের আর্জি জানাচ্ছি।’

সুতপা এবং স্থানীয় অন্যান্য লোধা সম্প্রদায় ভুক্ত লোকেদের কাছ থেকে জানা গেছে কারখানার প্রাচীর ক্রমশ বাড়তে বাড়তে ওই এলাকার চাষের জমি খেয়ে এখন হাঙরের হাঁ বাড়িয়েছে লোধা বসতির দিকে। চাষের জমি, দেবতার থান ইত্যাদি গ্রাসের পর কারখানার লাভ থমকে এসে দাঁড়িয়েছে লোধা বসতি অবধি। জমি বিক্রি করার লোভ থেকে জোরজবরদস্তি, কৃষিজমিকে নষ্ট করার জন্য নানা কায়দা করসৎ চলছে। চলছে চুরির কেস বা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি। শিশুরা বল খেলে। মাঝেমধ্যে বল ঢুকে যায়, শিশুরা প্রাচীরের ফাঁক গলে বল নিয়ে আসে। সেদিনও তেমনটাই ঘটেছিল। প্রাচীরের ওপাশ থেকে বল আনার পরেই খেলার মাঠে ওপাশ থেকে ছুটে এসেছিল রাশি রাশি ইট, পাথর। আরও অন্য শিশুদেরও ওই পাথরের আঘাত লেগেছে যারমধ্যে রীতেশের মাথায় আঘাত লাগলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

পিগ আয়রন, স্লগ আয়রন, ডকটাইল আয়রন পাইপ ইত্যাদি উৎপাদনকারী এই সংস্থাটির বাজার এতটাই সমৃদ্ধ যে বেশ কয়েকটি ইউনিট করার পরও তারা আরও ইউনিট করার জন্য জমির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবেই একটি ভালো উদ্যোগ, সরকারের কোষাগারে এরা মোটা ট্যাক্স দিচ্ছে কিন্তু পরিবর্তে এলাকার মানুষকে গিলতে হচ্ছে ‘শিল্পের’ অত্যাচার। ওই লোহার সামগ্রী তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ কয়লা পোড়াতে হয় তার ছাই বাতাসে মিশে কৃষিজমি, নয়ানজুলি এমন কী মানুষের বসতবাড়ির সর্বনাশ করছে। সম্প্রতি চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন খড়গপুর থেকে গোকুলপুর যাওয়ার রাস্তা পুরোটাই জলে ডুবে আছে। ওই এলাকার এক তৃনমূল নেতা জানিয়েছেন, “বেবনা পাড়া, চুন পাড়া, পশ্চিম আম্বা , পূর্ব আম্বা ঘরের মধ্যে জল ভর্তি হয়েগেছে , গোকুল পুর থেকে খড়গপুর যাবার একমাত্র রাস্তা পুরো জলে ডুবে রয়েছে, রাস্তা জলে ডুবার কারণ রাস্তার পাশে নয়ন জোলি রেশমির ডাস্ট ভোরে নয়ন জোলি ভোরে গেছে যার ফলে এলাকার জল ও আকাশের জল বেরোনোর জায়গা নেই।”

এই গোকুলপুর ও সংলগ্ন বড়কলা ও তার আশেপাশের জায়গা খড়গপুর শহর সহ সংলগ্ন এলাকার সবজি ভান্ডার বলেই পরিচিত। কাঁসাই লালিত উর্বর মৃত্তিকায় শত শত মানুষ বিঘার পর বিঘা সবজি উৎপাদন করে যা খড়গপুর শহরের গেটবাজার ও গোলবাজারে নিয়ে আসেন ওই কৃষকরা। সেই সবজির ক্ষেতও আজ বিপন্ন এই কারখানা গুলির ছড়িয়ে পড়া ছাইয়ে। মালঞ্চ উটপুকুর, বালাজি মন্দির, ঝাড়েশ্বর মন্দির ইত্যাদি এলাকা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ তাদের ঘরের ছাদ, ব্যালকনি ব্যবহার করতে পারেননা ছাইয়ের জ্বালায়। প্রশ্ন হচ্ছে মানবদেহে প্রশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করছেনা তো সেই ছাই? হয়ত হচ্ছে কিন্তু কে পরীক্ষা করতে যাচ্ছে? জমি হাঙরের ক্ষুধা মেটাতে নতজানু সব্বাই আর সেই কারণেই রীতেশ বাগের মাথা ফাটলেও অভিযোগ নিতে গড়িমসি পুলিশের। আরও জমি চাই কারখানার আর সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে মাথাতো ফাটবেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular